২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

ঝিনাইদহে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা

ঝিনাইদহে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা - প্রতীকী ছবি

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কথিত সামরিক কমান্ডার হানেফ আলী (৫২) ও তার দুই সঙ্গীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

শুক্রবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার রামচন্দ্রপুর ত্রিবেণি শ্মশান খাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন হরিণাকুন্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দীনের ছেলে একাধিক হত্যা মামলার আসামি হানেফ আলী (৫২) ও তার শ্যালক শ্রীরামপুর গ্রামের উম্মাদ আলীর ছেলে লিটন (৩৫)। বাকি একজনের পরিচয় মেলেনি।

শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুম খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। খবর পেয়ে রাতেই ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর একই স্থানে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত চরমপন্থী নেতা হানিফ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি ছিলেন। হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় তার ফাঁসি আদেশ হয়। উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকলে হাসিনা সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমা নিয়ে হানেফ এলাকায় ফিরে আসেন এবং মৎস্যজীবী লীগের উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। আওয়ামী লীগের পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেন। হাসিনা সরকারের পতন হলে হানেফ বিএনপির ছত্রছায়ায় ফিরে আসার চেষ্টা করেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে রয়েছে আলমডাঙ্গার কায়েতপাড়ার বিশাল বাওড়। ওই বাওড়ে কোটি টাকার ওপরে মাছ ছাড়া আছে। সম্প্রতি মৎস্যজীবী লীগ নেতা পরিচয়ে হানেফ বাওড়ে মাছ ধরা ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে এলাকার বিবাদমান একাধিক গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সেই সূত্র ধরেই হানেফসহ তার দুই সঙ্গীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। কায়েতপাড়া বাওড় নিয়ে গত ৩০ বছরে অর্ধশত মানুষ খুন হয়েছে। হত্যার ধরন দেখে বোঝা যায়, তাদের কৌশলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, হানেফ কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, তিওরবিলা গ্রামের লুৎফর রহমান, তাহেরহুদার আব্দুল কাদের ও পোলতাডাঙ্গার ইজাল মাস্টারসহ শতাধিক মানুষকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করেন। এর মধ্যে ইজাল মাস্টারকে হত্যার পর তার মাথা কেটে উঠানে ফুটবল খেলেন। ওই সময় বিষয়টি দেশে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

এদিকে হত্যার দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর জনৈক কালু নামের এক ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হোয়াটসআপ বার্তায় দাবি করেন, ‘এতদ্বারা ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনাবাসীর উদ্দেশে জানানো যাইতেছে যে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিনাকুন্ডু নিবাসী মো: হানিফ তার দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। তাদের লাশ রামচন্দ্রপুর ও পিয়ারপুর ক্যানালের পাশে রাখা আছে। অত্র অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো, অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। কালু জাসদ গণবাহিনী।’

এদিকে দীর্ঘ দিন পর চরমপন্থীদের গুলির লড়াই ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তার দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রদান জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, একই স্থানে ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামের শহীদ খা, ত্রিবেনী গ্রামের শাহনেওয়াজ, একই গ্রামের ফারুক, নুরু কানা ও কুষ্টিয়ার ভবানীপুর গ্রামে কটাকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই মামলায় ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর কুষ্টিয়র আলী রেজা ওরফে কালু ও কুষ্টিয়া জেলার পিয়ারপুর গ্রামের মহসিন আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। ঝিনাইদহ জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো: জাকারীয়াহ এই রায় প্রদান করেন।


আরো সংবাদ



premium cement