চুয়াডাঙ্গায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও আ'লীগ কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা
- চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৮
মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে উঠে চুয়াডাঙ্গার রাজপথ। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গায় রাতভর শেখ মুজিব ও শেখ ফজিলাতুন্নেছার ম্যুরাল, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরসহ শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত স্থাপনা গুড়িয়ে দেয় ছাত্র-জনতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার রাত ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সামনে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। সেখান থেকে তারা মিছিল করে প্রথমে যান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে। ওই চত্বরের সামনের ভাগে স্থাপিত শেখ মুজিব ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতিকৃতিতে হাতুড়ি, কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙার পর পরে এক্সকাভেটর দিয়ে প্রতিকৃতি থাকা স্থাপনাটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীরা পৌরসভার মোড়ে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পৌঁছে যায়। সেখানেও শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ভবনের ভেতরে ঢুকে শেখ হাসিনা ও অন্যান্য নেতাদের ছবি ভাঙচুর করা হয়। এরপর প্রধান সড়কে শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ফেলে থুথু নিক্ষেপসহ পা দিয়ে দলাতে দেখা যায়। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের অফিসের প্রথমতলার সামনের অংশ পুরো এক্সকাভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেয় ছাত্র-জনতা। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে পরবর্তী গন্তব্য সদর উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ চত্বর। সেখানে স্থাপিত শেখ মুজিবের ম্যুরালেও চলে ভাঙচুর।
বিক্ষোভের সময় রাজপথ প্রকম্পিত হয় বিভিন্ন স্লোগানে—জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার ঘোষণার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই এই কর্মসূচি। সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গাতেও শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল, আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক ও সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলামের বক্তব্য নিতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশ না করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদীদের যা কিছু আছে সেগুলো আমরা ভেঙে দিতে চাই। যেন দেশের কেউ আর এই ফ্যাসিবাদের দিকে অনুপ্রাণিত না হয়। সেই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানের মুজিব ম্যুরালের কবর রচনা করেছি আমরা। স্বৈরাচারের সব স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করব। ছাত্র-জনতা সবসময় প্রস্তুত। ফ্যাসিবাদী চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করতেই আমরা একত্র হয়েছি। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
গত বছর ৫ আগস্ট চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি আংশিক ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা। ওই সময় থেকেই এই অফিসটি প্রায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় ছিলো। এছাড়া ওই সময়ই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়, সদর উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ চত্বর স্থাপিত শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙ্গা ও পোড়ানো ছিলো। রাতে সেগুলো পুরোপুরি গুড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা।