০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বেনাপোলে তীব্র যানজটে ভোগান্তি বাড়ছে

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বেনাপোলে তীব্র যানজটের কারণে ভোগান্তি বাড়ছে। মাস খানেক ধরে চলছে এই অবস্থা। বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে লোকাল বাস টার্মিনাল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে এ যানজট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকছে। সড়কের উভয় পাশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এখন নিয়মিত দৃশ্য।

বেনাপোল পৌরসভা যানজট নিরসনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাক ও বাস টার্মিনাল নির্মাণ করলেও যানবাহনগুলো মহাসড়কে কোথাও এক সারি আবার কোথাও দুই সারিতে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে।

এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সারা বছর বেনাপোল বন্দর ও বাজার এলাকায় অসহনীয় যানজট লেগে থাকে। এতে ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া ভারতগামী রোগীরা। প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো প্রকার নজরদারি করছে না।

ব্যবসায়ীরা বলেন, সড়কের ওপর বাস-ট্রাক রেখে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি করছে একটি মহল। দীর্ঘদিন নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বন্দরটি চললেও কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রধান সড়কে প্রতি দিনের তীব্র যানজট থেকে পরিত্রাণ চান তারা। যাতে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে।

স্থানীয়রা যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থপনা, সড়কের উপর যত্রতত্র পরিবহন পার্কিং করা, ভারতীয় খালি ট্রাকগুলো ধীরগতি যাওয়াকে দায়ী করছেন।

বেনাপোল পরিবহন সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু জানান, রাস্তার দুই পাশে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো যত্রতত্র রাখার কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসন চেষ্টা করলে বাসগুলো টার্মিনাল থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে পারে। বাসগুলো চেকপোস্ট থেকে না ছেড়ে টার্মিনাল থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করলে যানজট কমে আসবে।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী জানান, ‘বাংলাদেশী ট্রাকগুলোর ড্রাইভারদের সচেতন করে রাস্তার পাশে গাড়ি না রাখতে বলা হলেও তারা কথা শুনছে না। এলাকার স্থানীয় ড্রাউভারদের সমস্যা বেশি। অন্য ড্রাইভাররা টার্মিনালে রাখলেও স্থানীয় ড্রাইভাররা রাস্তার দু’পাশে গাড়ি রাখছে। আমরা রাস্তায় ট্রাক না রাখার জন্য মাইকিং করেছি। ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।’

যশোর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু জানান, ‘আমাদের লোকাল বাসগুলো পৌরসভার নির্ধরিত স্থানে রাখা হয়। বেনাপোল-যশোর লোকাল বাসের কারণে রাস্তায় কোনো যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘টার্মিনালে একটি কাউন্টার নিতে হলে পৌরসভাকে অগ্রিম আড়াই লাখ টাকা ও মাসে ভাড়া দিতে হয় তিন হাজার টাকা। আমরা পাঁচ টাকা, দশ টাকা ভাড়ায় যাত্রী সেবা দিয়ে থাকি। তাই এতো টাকা দিয়ে টার্মিনালে কাউন্টার নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া টার্মিনালে অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা না থাকার কারণে এখন টার্মিনালে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না । এরপরও সবাই গেলে আমরাও রাস্তা ছেড়ে টার্মিনালে চলে যাবো।’

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সদস্য মতিয়ার রহমান জানান, কোনোভাবেই বেনাপোল যানজট মুক্ত হচ্ছে না। যানজটের কারণে সকালে ট্রাকগুলো লোড হলেও বন্দর ছাড়তে রাত হয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বেনাপোল একটি আন্তজার্তিক চেকপোস্ট। এ চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার যাত্রী ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করে থাকে। এ সব যাত্রীদের বেনাপোল থেকে চেকপোস্ট পর্যন্ত যেতে দু’ঘণ্টা সময় লেগে যায়। যানজটের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ব্যাপরে বেনাপোল পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

যশোর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও বেনাপোল পৌর প্রশাসক সুজন সরকার জানান, বেনাপোল পৌরসভার দায়িত্ব নেয়ার পরে প্রথমে যেটা শুনেছি সেটা হলো বেনাপোলের যানজট। যানজটের কারণ হিসাবে আমি যেটা দেখেছি তা হলো বেনাপোলে যে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে সেখানে কোনো বাস বা ট্রাক না রেখে রাস্তায় যানযট সৃষ্টি করছে। যানজট কমাতে উপজেলা প্রশাসন বেনাপোলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, বন্দর, কাষ্টমস, বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির সাথে আলোচনা করে সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement