সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে রোজা
- মিনহাজুল বকশি
- ২৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ঈমান ও নামাজের পরই রোজার অবস্থান। অতীতের সব গুনাহ মাফের মাধ্যমে মানবজাতি যাতে তাদের অবস্থান জান্নাতের মধ্যে নির্ধারণ করতে পারে সে জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা রমজান মাসকে মানব জাতির জন্য উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। এ সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমান ও ইহতিসাবের সাথে রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’ (বুখারি-২০১৪)।
রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন রোজাদাররাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না’ (বুখারি-১৭৯৭)।
আর সব ঈমানদাররাই যাতে করে এ সুযোগটি গ্রহণ করতে পারে সে জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা রোজাকে আমাদের সবার ওপর ফরজ করে দিয়েছেন।
কেননা, এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেনÑ ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’
সুতরাং আলোচ্য আয়াত থেকে বোঝা গেল, তাকওয়া অর্জনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো পবিত্র রমজানের রোজা।
কারণ অন্যান্য সব ইবাদতই লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে করা যেতে পারে, কিন্তু একমাত্র রোজাই আল্লাহকে ভয় করে করতে হয়। কেননা একজন রোজাদার ব্যক্তি একাকী রুমের মধ্যে সবার দৃষ্টিচক্ষুর অন্তরালে যদি কিছু খায় বা পান করে কিংবা অন্য কোনো পাপ করে তাহলে কিন্তু কারো পক্ষেই সেটা দেখা সম্ভব নয়। তবে প্রকৃত রোজাদাররা সেটা করেন না, কারণ তারা জানেন, কেউ না দেখলেও আল্লাহ তায়ালা দেখছেন! আর এরকম সুযোগ পেয়েও আল্লাহকে ভয় করে কোনো পাপকাজ থেকে বিরত থাকার নামই হলো তাকওয়া।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যত প্রকারের পাপকাজ আছে, তা আজ আমাদের হাতের নাগালে। সুদ, ঘুষ, মদ জুয়া, জিনা ব্যভিচারসহ সব পাপকাজই খোলামেলাভাবে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত। ইচ্ছা করলেই মানুষ যেকোনো পাপকাজ খুব অনায়াসেই করতে পারছে। আর এত সহজে পাপকাজ করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও যারা খোদার ভয়ে সেই কাজ থেকে বিরত থাকছে, তারাই হলো প্রকৃত তাকওয়াবান।
একবার হজরত উবাই ইবনে কাব রা:কে ওমর রা: তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেনÑ হে ওমর রা:! পাহাড়ের দুই ধারে কাঁটাবন, মাঝখানে সরু পথ। এমতাবস্থায় কিভাবে চলতে হবে? তিনি বলেন, গায়ে যেন কাঁটা না লাগে, তাই সাবধানে পথ অতিক্রম করতে হবে। হজরত উবাই ইবনে কাব রা: বললেন, এটাই তাকওয়া।
সুতরাং বলা যায় যে, আল্লাহর ভয়ে পাপকাজ করার সুযোগ পেয়েও, পাপকাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নামই হচ্ছে তাকওয়া। আর এই তাকওয়াবান ব্যক্তিরাই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত। কেননা, আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা হুজরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে বলেছেনÑ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে যারা অধিক তাকওয়ার অধিকারী, তারাই আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত।’
আর তিনি এটাও ঘোষণা করেছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে তিনি তাদের সাথে আছেন। কেননা এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের সূরা নাহলের ১২৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘নিশ্চয় আল্লাহতাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।’
আর বিদায় হজের সময় আইয়ামে তাশরিকের মাঝামাঝি সময়ে নবী সা: বক্তৃতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেনÑ ‘হে লোকসকল! সাবধান! তোমাদের আল্লাহ একজন। কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের ও কোনো আরবের ওপর কোনো অনারবের, কোনো কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের ও কোনো শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহভীরু সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। বলো, আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছি? সবাই বলল, হে আল্লাহর রাসূল সা:, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে যারা এখানে উপস্থিত আছো তারা যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এ বাণী পৌঁছিয়ে দেয়’ (বায়হাকি)।
সুতরাং বলা যায়, রমজান মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত তাকওয়ার এ গুণটি যদি কোনো ব্যক্তি রোজার পরও লালন করে, তাহলে তার পক্ষে মিথ্যা বলা, অন্যের হক নষ্ট করা, ঘুষ ও সুদ খাওয়া, আমানতের খেয়ানত করা, প্রতারণা করা, মালে ভেজাল দেয়া, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অযৌক্তিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়ানো, অসহায় গরিব-দুঃখীদের বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রী লুটপাট, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ইভটিজিং, ধর্ষণসহ যেকোনো অন্যায় কাজ করা ও দুর্নীতিপরায়ণ হওয়া সম্ভব নয়। কেননা, সে সবসময় মনে করবে, আমি কোনো অন্যায় কাজ করলে মহান আল্লাহ তা দেখবেন এবং এর জন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে ও পরিণাম ভোগ করতে হবে। যার ফলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজমান থাকবে এবং আমরা ফিরে পাবো সুন্দর একটি সমাজব্যবস্থা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা