এ সময়ের প্রধান মানবসেবা
- মাওলানা লিয়াকত আলী
- ২১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
ইসলাম মানবতার ধর্ম, শান্তির ধর্ম। জীবনের নিরাপত্তা, অর্থের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় ইসলাম দিয়েছে প্রায়োগিক ও কার্যকর বিধান। জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও হুমকিস্বরূপ যতগুলো প্রতিবন্ধকতা সময়ে সময়ে সামনে আসে, তা থেকে উত্তরণের জন্য ইসলাম উৎসাহ ও নির্দেশনা দেয়। যারা সময়ের প্রয়োজনে ও মানবতার টানে নিজেদের জীবন বাজি রেখে বিপদ ও সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে উদ্যমী হয়, তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও প্রাপ্য দিতে ইসলাম মোটেই কার্পণ্য করে না। সমাজে তারাই হয়ে ওঠে বরেণ্য। সাদর অভ্যর্থনা তাদের জন্যই অপেক্ষা করে।
ইসলামে ইবাদতের মতো মানবকল্যাণ ও মানবসেবার গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও অন্যকে প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারে ইসলাম দিয়েছে আদর্শ ও অনুকরণীয় শিক্ষা। সঙ্কটময় মুহূর্তে বৃহৎ স্বার্থে নিজেকে উৎসর্গ করার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে ইসলামের সমৃদ্ধ ইতিহাসে। পরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা এগিয়ে নিয়েছে মানব সভ্যতাকে।
যখন যা প্রয়োজন তখন তা করাই ইসলামের দাবি। পরিবেশ পরিস্থিতি ও মানুষ ভেদে ইবাদতের মতোই মানবসেবার রূপ বদলাতে পারে। যেমন : মুসলিম ও বুখারি শরিফে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা:-এর সূত্রে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সা-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? রাসূল সা: বললেন, সময়মতো সালাত আদায় করা।’ আবার বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে আছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা:-এর সূত্রে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সা:কে প্রশ্ন করা হলো, কোন ইসলাম সর্বোত্তম? তিনি বললেন, তুমি অপরকে খানা খাওয়াবে...।’ আরেক হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর রাসূলকে প্রশ্ন করা হলো, কোন মুসলমান সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘যার হাত ও মুখ (কথা ও কাজ) থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’
হাদিসগুলোতে একই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রশ্নকারীর অবস্থা ও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে একই ধরনের প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দেয়া হয়েছে। মূলত যখন যার জন্য যা প্রয়োজন ছিল তাকে করার আদেশ বা পরামর্শ দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সা:। সুতরাং অবস্থা ভেদে মানবসেবার ধরনও বিভিন্ন হয়ে থাকে। আর এ কথাও স্পষ্ট যে, মানবসেবা বা খেদমতে খালক স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।
বর্তমান সময়ে গোটা বিশ^ যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে তার ভয়াবহ চিত্র অন্তত ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই। কর্মচঞ্চল ও গতিশীল এ পৃথিবী এভাবে স্থবির হয়ে পড়বে তা কে-ইবা কল্পনা করেছিল! নভেল করোনাভাইরাসের থাবায় থমকে গেছে সবকিছু। রূপ বদলানো এ ভাইরাসের প্রভাবে বদলে গেছে গোটা মানবজীবন। অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়সহ সবকিছু অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ এখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ঘরবন্দী জীবন কাটানো লোকেরা আজ অপেক্ষায় আছে মুক্ত বাতাস গ্রহণের। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে মানসিক ও আত্মিক দূরত্ব।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে থেমে নেই কল্যাণকামীদের কর্মতৎপরতা। শাসক ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কার্যপ্রণালীতে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সবকিছু থেমে গেলেও থেমে নেই প্রশাসনের কাজ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে তাদের। যারা রোগীর চিকিৎসাকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারাই আজ এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি তারা। সংক্রমণের ভয়ে মৃতদের কাফন-দাফন এমনকি নামাজে জানাজাও অত্যন্ত সীমিত আকার লাভ করেছে। পরিবারের সদস্যরাও এগিয়ে আসছেন না অজানা আতঙ্কে। কেবল কিছু ব্যক্তির সাহসী উদ্যোগে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। ইবাদত ও ধর্মীয় বিধান পালনে আলেমরা বিকল্প পথ বলে দিচ্ছেন। সম্ভাব্য নির্দেশনা দিতে তাদের তৎপর হতে হচ্ছে। গরিবের জন্য ত্রাণ, অনুদান নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজসেবক ও বিত্তবানরা। সবার অবদানই নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে এ সঙ্কটের কিছুটা মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এগুলো সাময়িক ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ। এখনি বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণই থেকে যাচ্ছে। শুধু কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনে রেখে এ রোগের আক্রমণের প্রকোপ কমানো যাবে সাময়িকভাবে।
তাই এ সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দাবি এবং উৎকৃষ্ট মানবসেবা ও ইবাদত হচ্ছে এ ভাইরাসের প্রতিষেধক, টিকা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা। ভ্যাকসিন আবিষ্কারক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী যেকোনো দেশ, জাতি, বর্ণ বা ধর্মের হোক না কেন, সেই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠী হবে বর্তমান সময়ে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সেবক। তার বা তাদের অবদান এ পৃথিবী বহুকাল স্মরণ রাখবে। মুসলমানেরা দীর্ঘদিন চিকিৎসা শাস্ত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তা ধরে রাখা যায়নি। মানব কল্যাণের এই দিকটায় যদি মুসলমানেরা আবার নিজেদের আন্তরিকতা ও সাধনার অনন্যতা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে বিশ্বের নেতৃত্ব আবার মুসলমানদের হাতে আসতে পারে। শাখাগত মাসায়েল ও অ-মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে মতভেদ না করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় উন্নতির জন্য আত্মনিয়োগ করা সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
অনুলিখন : হাফেজ মাওলানা সাইফুল্লাহ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা