২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঈমান যাচাই করি, কেমন মুসলিম আমরা?\

-

যারা আল্লাহ ও জাহান্নামকে ভয় পায় না তারা দুনিয়ার সব কিছুকে ভয় পায় এবং সবসময় ভীতু হয়ে থাকে। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর জাহান্নামকে ভয় পায় তাদের দুনিয়ার সব জীব ভয় পায় এবং তারা আল্লাহ ব্যতীত দুনিয়ার কাউকে পরোয়া করে না। কারণ তারা জানে আল্লাহর চেয়ে কঠোর শাস্তিদাতা দুনিয়ায় আর কেউ নেই। জানা যায়, আল্লাহর অনেক প্রিয় বান্দাহ হাসতে হাসতে কাফেরদের মৃত্যুমঞ্চে চলে গেছেন। বিন্দু পরিমাণ মৃত্যু ভয় তাদের বুকে ছিল না। হজরত খুবায়েব রা:-কে প্রতারণা করে বন্দী করা হলে তার পরের দিন শূলে চড়ানো হবে বলে তাকে জানানো হলো। এতে তিনি ভয়ে একটুও আত্মহারা হননি, স্বাভাবিকভাবে পানাহার করেন। পরের দিন তাকে শূলে চড়িয়ে হত্যার জন্য যখন আয়োজন চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি ওই বাড়িওয়ালার এক ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়েছিলেন এবং শিশুটির পরিবারের কাছ থেকে একটি ক্ষুর চেয়েছিলেন যাতে তিনি শরীরের অবাঞ্ছিত লোম ফেলে দিতে পারেন। তারা তাকে একটি ক্ষুর দিয়েছিল আর মনে মনে ভয় পাচ্ছিল যে সে কিনা তাদের ওই ছোট্ট শিশুকে তা দিয়ে হত্যা করে ফেলে! কিন্তু তা তিনি করেননি এবং ক্ষুরের কাজ শেষ করে তাদের কাছে তা হাসিমুখে দিয়ে দিয়েছিলেন। আর হাসতে হাসতে শূলে উঠেছিলেন। তার এই সাহসিকতা, ঈমানের দৃঢ়তা, নির্ভীকতা ও শিশুর সাথে কোমল আচরণের কারণে তারা বিস্মিত হয়ে পরবর্তীতে ইসলাম কবুল করেন।
একবার ফেরআউনের মেয়ের চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছিল তার এক দাসী। হঠাৎ তার হাত থেকে চিরুনিটি মাটিতে পড়ে যায় এবং বিসমিল্লাহ বলে দাসীটি মাটি থেকে চিরুনিটি তুলে নেয়। এটি শুনে ফেরআউনের কন্যা দাসীকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি আমার বাবাকে রব মানো না? উত্তরে দাসীটি বলেছিল, না; আমার রব এবং তোমার ও তোমার বাবার রব যিনি আল্লাহ, তাকে আমি রব মানি। পরে ওই রাজকন্যা তার বাবা ফেরআউনকে ঘটনাটি অবহিত করলে ফেরআউন তার দাসীকে জিজ্ঞেস করে ঘটনাটা সত্য কিনা? জবাবে দাসী বলেছিল, তোমার পরিবর্তে যিনি আমার ও তোমার এবং তামাম বিশ্বজাহানের রব সেই আল্লাহকে আমি রব বলে মানি। তখন ফেরআউন তাকে বলেছিল, তুমি যদি তাকে বাদ দিয়ে আমাকে রব হিসেবে না মানো তাহলে তোমার ছোট তিনটি সন্তান এবং তোমাকে গরম তেলে ডুবিয়ে হত্যা করব। ঠিক তাই করেছিল ফেরআউন। এক এক করে দু’টি সন্তানকে গরম তেলে ডুবিয়ে হত্যা করার পর যখন দুধের ছোট শিশুকে তেলে নিক্ষেপ করা হবে, তখন ওই দাসীর মনের মধ্যে একটু দয়া ও ভয় জেগে ওঠে, সে ইতস্তত করছিল। তখন মহান আল্লাহ তায়ালা ওই দুধের শিশুর মুখে জবান খুলে দিলেন এবং শিশুটি তার মাকে বলছিল যে, মা! ভয় পাবেন না, এটাই শেষ কষ্ট, মরণের পরে আর কোনো কষ্ট হবে না। ফলে ওই শিশুটিকেও গরম তেলে ডুবিয়ে হত্যা করা হলো। একে একে তিন সন্তান হত্যা করে তাকে বলা হলো : এখনো সময় আছে আমাকে রব বলে মেনে নাও, তোমাকে বাঁচিয়ে দেবো। কিন্তু কথা একটাই আমার সন্তানগুলোকে মেরে ফেলা হলো আমার মনে কষ্ট লাগেনি। সুতরাং আমিও এভাবে মারা যাবো, তবুও তোমাকে রব বলে মানব না!
দ্বিতীয় ঘটনাটি ছিল ফেরআউনের জাদুকরদের। জাদুকররা যখন দেখতে পেল, হজরত মূসা আ:-এর লাঠিটি মাটিতে ফেলে দেয়ার পর বিরাট অজগর সাপ হয়ে তাদের দেখানো জাদুকৃত সব সাপকে গিলে ফেলল, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল এটা আমাদের মতো কোনো সাধারণ জাদু নয় বরং এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে অলৌকিক কোনো কিছু। তাই তারা বিলম্ব না করে ফেরআউনের সামনে, ‘অতঃপর জাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। তারা ঘোষণা দিলো আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম তাঁর উপর যিনি হারুন ও মুসার পালনকর্তা। (তখন) ফেরআউন বলল : আমার অনুমতিদানের পূর্বেই তোমরা কি তার প্রতি ঈমান আনলে? দেখছি সে-ই তোমাদের প্রধান, সে তোমাদের জাদু শিক্ষা দিয়েছে। অতএব আমি অবশ্যই তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেবো এবং আমি তোমাদের খর্জুর বৃক্ষের কাণ্ডে শূলে চড়াব এবং তোমরা নিশ্চিতরূপেই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার আজাব কঠোরতর এবং অধিক্ষণ স্থায়ী? যাদুকররা বলল, আমাদের কাছে যে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে তার ওপর এবং যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তার ওপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেবো না। অতএব তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো শুধু এই পার্থিব জীবনেই যা করার করবে (আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের ওপর তোমার কোনো কর্তৃত্ব নেই)। আমরা আমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যাতে তিনি আমাদের পাপ এবং তুমি আমাদের যে জাদু করতে বাধ্য করেছ, তা মার্জনা করেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী। নিশ্চয়ই যে তার পালনকর্তার কাছে অপরাধী হয়ে আসে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবে না এবং বাঁচবেও না। আর যারা তাঁর কাছে আসে এমন ঈমানদার হয়ে যায় সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে সুউচ্চ মর্তবা। বসবাসের এমন পুষ্পোদ্যান রয়েছে যার তলদেশে দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এটা তাদেরই পুরস্কার, যারা পবিত্র হয়’ (সূরা ত্বোয়াহা ৭০-৭৬, সূরা আশ শো’আরা-৪৬-৫১)।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল- ইমরানে মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ করতে বারণ করেছেন। কিন্তু আমরা জানি না আমরা কখন মারা যাবো, মারা যাওয়ার আগে আমরা মুসলিম হয়ে যাবো। মুসলিম হলো সে ব্যক্তি ‘যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহ ও তার রাসূল সা:-এর সব হুকুম মেনে চলে এবং তার যাবতীয় কার্যাবলি আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করে।
লেখক : ইসলামী ব্যাংকার, নালিতাবাড়ী, শেরপুর
email: fakhrulspur@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
কমলার পরাজয় কী বার্তা দেয় নতুন নির্বাচন কমিশন জনগণের আশা পূরণে সফল হবে, প্রত্যাশা আমীর খসরুর যেসব বিচার হতে দেয়নি আওয়ামী লীগ ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা : হাসিনাসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ বাণিজ্য সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে চীন বড় অগ্রাধিকার : উপদেষ্টা টেকনাফে বড়শিতে ধরা পড়ল ২৫ কেজির কোরাল শৈলকুপায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু মিরসরাইয়ে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতার মামলা সিলেট সীমান্তে ৬৩ লাখ টাকার চোরাই পণ্যসহ আটক ২ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োগ করা হবে অবসরপ্রাপ্তদের : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল