২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দোয়া-মুনাজাত-ইবাদত

-

নোমান ইবনে বাশির রা: বলেন, নবী সা: বলেছেন, ‘দোয়া বা প্রার্থনাই ইবাদত। এ কথা বলে তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করলেনÑ ‘তোমাদের রব বলেন, আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। যারা গর্বভরে আমার ইবাদত বা দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (সূরা মুমিন-৬০, তিরমিজি, কিতাবুল দাওয়াত, বাব ফাজলিদ দোয়া)।
এ আয়াতে দোয়া ও ইবাদত শব্দ দু’টিকে সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা, প্রথম বাক্যাংশে যে জিনিসকে দোয়া শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে দ্বিতীয় বাক্যাংশে সে জিনিসকেই ইবাদত শব্দ দিয়ে প্রকাশ হয়েছে। এ থেকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, দোয়াও ঠিক ইবাদত তথা ইবাদতের প্রাণ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না এমন লোকদের জন্য ‘অহঙ্কার ও গর্ভভরে আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়’ কথাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, আল্লাহর কাছে দোয়া করা ইবাদত বা বন্দেগি বা দাসত্বের দাবি। এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার অর্থ হচ্ছেÑ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গর্ব ও অহঙ্কারে ডুবে আছে। এ কারণে নিজের স্রষ্টা ও মনিবের কাছে দাসত্বের স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করে।
আরবিতে সাওয়াল ও মুনাজাতকেও দোয়া বলা হয়। সাওয়াল মানে চাওয়া এবং মুনাজাত মানে চুপে চুপে কথা বলা। আল্লাহর সাথে বান্দার সব কথা, জিকির ও প্রার্থনাকেই মুনাজাত বলা হয়। হাদিসে সালাতকে মুনাজাত বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কেউ সালাতে থাকে, তখন সে তার প্রভুর সাথে ‘মুনাজাত’ (গোপনে কথাবার্তায়) রত থাকে’ (বুখারি, আবওয়াবুল মাসাজিদ, বাব হাক্কিল বুজাকি)। অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রভুর সাথে মুনাজাতে রত থাকে; অতএব কিভাবে এবং কী বলে মুনাজাত করছে সে দিকে যেন খেয়াল রাখে (অর্থাৎ বুঝে ও মনোযোগসহকারে সালাত পড়ে)’ হাদিসটি সহিহ (মুয়াত্তা মালিক, সহিহ ইবনে খুজাইমা ও মুসতাদরাক হাকিম)। আল্লাহর সাথে কথাবার্তা, প্রার্থনা ও দোয়াকে মুনাজাত বলা হয়, কারণ তিনি বান্দার সবচেয়ে কাছে। তাঁর সাথে বান্দার কথা গোপনে ও চুপে চুপে হয়। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:কে প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের প্রভু কি আমাদের কাছে, না দূরে? যদি কাছে হন তবে আমরা তাঁর সাথে মুনাজাত করব বা চুপে চুপে কথা বলব। আর যদি তিনি দূরে হন, তাহলে আমরা জোরে জোরে তাঁকে ডাকব’ জবাবে আল্লাহ তায়ালা নিচের আয়াতটি নাজিল করেন। বলুন, ‘আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদের বলে দিন, আমি তাদের কাছেই আছি। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তারা আমাকেই ডাকা ও আমার ওপর ঈমান আনা উচিত এ কথা তাদের শুনিয়ে দিন, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে’ (সূরা বাকারা-১৮৬, তাফসিরে ইবনে কাসির)।
হজরত আবুজার রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ, আমি যাকে পথ দেখাই সে ছাড়া তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট। অতএব, তোমরা আমার কাছে সঠিক পথ প্রার্থনা করো, তাহলে আমি তোমাদের সঠিক পথ দান করব। হে আমার বান্দাগণ, শুধু আমি যাকে খাইয়েছি সে ছাড়া তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত। অতএব, তোমরা আমার কাছে খাদ্য চাও, আমি খাদ্য দান করব। হে আমার বান্দাগণ, আমি যাকে পোশাক পরিধান করিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সবাই উলঙ্গ। অতএব, তোমরা আমার কাছে বস্ত্র প্রার্থনা করো, তাহলে আমি তোমাদের বস্ত্র দান করব।’
এ জন্য দোয়া ও মুনাজাতের গুরুত্ব অত্যধিক। হজরত আবু হোরাইরা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া বা প্রার্থনার চেয়ে সম্মানিত বস্তু আর কিছুই নেই’ (তিরমিজি, কিতাবুদ দাওয়াত, বাব ফাদলিদ দোয়া ও মুসতাদরাক হাকিম)।
হজরত উবাদাহ ইবনে সামিত রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘জমিনের বুকে যেকোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলেÑ যে দোয়ায় কোনো পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কিছু চায় নাÑ আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেনই। হয় তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দেবেন অথবা তদনুযায়ী তার কোনো বিপদ কাটিয়ে দেবেন’ (তিরমিজি, কিতাবুল দাওয়াত, বাব ইনতিজারিল ফারজ ও মুসতাদরাক হাকিম)।
হজরত আবু হোরাইরা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যেকোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে মুখ তুলে কোনো কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে দেবেনই। তাকে তা সাথে সাথে দেবেন অথবা (আখিরাতের জন্য) তা জমা করে রাখবেন’ (মুসনাদে আহমাদ)।
হজরত সালমান ফারসি রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ লাজুক, দয়াবান। যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দু’খানা হাত উঠায়, তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান’ (তিরমিজি, কিতাব দাওয়াত, বাব দোয়ায়িন নাবিয়্যি ও ইবনে মাজাহ)।
হজরত সাওবান রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, দোয়া ছাড়া আর কিছুই তকদির উল্টাতে পারে না। মানুষের উপকার ও কল্যাণের কাজেই শুধু আয়ু বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় মানুষ গোনাহ করার ফলে তার রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়’ (আল মুসতাদরিক হাকিম ও তিরমিজি, কিতাবুল কদর)।
হজরত আবদুুল্লাহ ইবনে উমার রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে বিপদ বা মুসিবত নাজিল হয়ে গেছে এবং যা এখনো নাজিল হয়নি, এরূপ সব বিপদ কাটাতে প্রার্থনা উপকারী’ (তিরমিজি, কিতাব দাওয়াত, বাব দোয়ায়িন নাবিয়্যি)।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement
ফলোঅন এড়ালেও ভালো নেই বাংলাদেশ আইপিএল নিলামের প্রথম দিনে ব্যয় ৪৬৭.৯৫ কোটি রুপি : কে কোন দলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে ট্রাম্প 'ভীষণ চিন্তিত' নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন

সকল