মুসাফাহা ও হাদিয়া
- মুফতি কাজী সিকান্দার
- ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
ইসলাম সৌহার্দ্যপূর্ণ আন্তরিক ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ, মানবিক-মানবতার ধর্ম। যা ইসলামের শুরু থেকে আজ অবধি যুগে যুগে প্রমাণিত। ইসলামের সব কার্যক্রমে, আচার-ব্যবহারে, লেনদেনে, ব্যবসাবাণিজ্যে এমন নীতি ও নৈতিকতা বাস্তবায়ন করেছে যার ফলে মানুষের বন্ধনের অটুটকে দৃঢ় থেকে দৃঢ় করে। অনৈক্য-বিচ্ছেদ, ঝগড়া-ফাসাদ, ইসলাম ঘৃণ্যভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসলাম মানুষে মানুষে ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমগুলো উদ্ভাসিত করেছে এবং শিক্ষা দিয়েছে। যাতে এ জগতে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে। একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশ ও বন্ধনকে মজবুত করার অনেকগুলোর মাধ্যম থেকে একটি হলো একে অপরকে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্ভাষণ জানানো। আরেকটি হলো হাদিয়া বা উপহার-উপঢৌকনের আদান-প্রদান। সম্ভাষণের প্রথম ধাপ হলো যখনি একজন অপরজনকে দেখবে সালাম দেবে। একে অপরের শান্তি কামনা করবে। দোয়া করবে সুখ ও সমৃদ্ধির। চাই সে পরিচিত হোক বা অপরিচিত। এরপর যখন কোনো দু’জন পরিচিত হয় তখন তারা সালাম দিয়ে ক্ষান্ত হবে না। আন্তরিকতার আরেক দাপ অগ্রসর হয়ে তারা নিজেদের হাত প্রসারিত করে হাতে হাত মেলাবে। এ হাতে হাত মিলানোকেই বলে মুসাফাহা। হৃদ্যতার আরেক দাপ অগ্রসর হয়ে যখন একে অপরের দেখা হবে তখন তারা নিজেদের বুকের সাথে বুক মেলাবে। হৃদয়ের সাথে হৃদয় মেলাবে। তাকে বলা হয় মুয়ানাকা। আমাদের আলোচনার বিষয় মুসাফাহা। আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, হজরত আনাস রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একটা লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে থেকে কোনো লোক তার ভাইয়ের সাথে কিংবা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার সামনে কি মাথানত করবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দেবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে কি তার হাত ধরে তার সাথে মুসাফাহা করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তিরিমিজি হা/২৭২৮ )
মুসাফাহা করা একটি সুন্নাত বিধান। রাসূল সা: এর বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যা একে অপরের সাথে সাক্ষাতের সম্ভাষণ জানানোর ইসলামিক রীতি। হজরত আনাস রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন ইয়ামনবাসীরা আগমন করল, তখন রাসূল সা: বলে উঠলেন, ইয়ামনবাসীরা তোমাদের কাছে আগমন করেছে। আনাস রা: বলেন, এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা আনয়ন করেছিল। (আবু দাউদ হা/৫২১৩)
মুসাফাহা সাহাবায়ে কেরাম রা: করতেন। আবুল খাত্তাব কাতাদাহ রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি আনাস রা:কে জিজ্ঞেস করলাম। রাসূল সা: এর সাহাবিদের মধ্যে কি মুসাফাহা করার প্রথা ছিল। তিনি বলেন, হ্যাঁ। (বুখারি হা/৬০৬৩)
মুসাফাহা ইসলামের শরিয়তসিদ্ধ একটি প্রথা। মুসলমানের প্রত্যেক ভালো কাজের জন্য রয়েছে সওয়াব। সম্ভাষণ জানানোর ক্ষেত্রে যেমন দুনিয়ায় একে অপরের বন্ধন দৃঢ় করে ঠিক তেমনি আখেরাতে রয়েছে তার জন্য গুনাহ মাফের সুসংবাদ। রাসূল সা: বলেন, হজরত বারা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, দু’জন মুসলিম সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করলেই একে অপরের থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের (গুনাহ) মাফ করে দেয়া হয়। (আবু দাউদ হা/৫২১২,৫২১১) তাহলে আমাদের অবশ্যই এ সুন্নাত পালন করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে আমাদের গুনাহ মাফের সুসংবাদ রয়েছে তা কেন করব না। তবে আমরা মুসাফাহা কিভাবে করব। আল্লাহর রাসূল সা: আমাদেরকে তা-ও শিক্ষা দিচ্ছেন। মুসাফাহা হবে দু’হাত দ্বারা। চার হাতের মিলনের মাধ্যমে প্রত্যেকের একটি হাত অপরজনের দু’হাতের মধ্যে থাকবে। যেমন আল্লাহর রাসূল সা: এর আমল। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত সা: আমাকে তাশাহুদ শেখালেন, এমতাবস্থায় যে আমার হাত রাসূল সা: এর উভয় হাতের মাঝে ছিল। (বুখারি হা/৫৯১০) এ হাদিসটি ইমাম বুখারি রহ: বাবুল মুসাফাহা অধ্যায়ে এনেছেন। এরপর ইমাম বুখার ‘বাবুল আখজ বিল ইয়াদাইন’ অর্থাৎ উভয় হাত ধরা একটি পরিচ্ছেদ স্থাপন করেন তাতে হাম্মাদ ইবনে জায়েদ রহ: এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকত রহ: এর মুসাফাহার পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন যে, তারা উভয় হাতে মুসাফাহা করেছেন। সুতরাং এক হাতে মুসাফাহা সুন্নাত নয়। উম্মতের দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক আমলও হলো দু’হাতে মুসাফাহা করা। আসুন আমরা মুসাফাহা করি এবং গুনাহ মাফ করি আর রাসূল সা: এর সুন্নাত তরুতাজা করি নিজেদের মধ্যে বন্ধনের রেশ উদ্ভাসিত করি।
হাদিয়া
নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ও মহব্বত বৃদ্ধি করার আরেকটি মাধ্যম হলো উপহারের প্রচলন করা। উপহার আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভালোবাসা বাড়ে। আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, তোমরা পরস্পর হাদিয়ার আদান-প্রদান করো, তাহলে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে। (ইমাম বুখারি রচিত আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৯৪) স্বার্থহীনভাবে, বিনিময় ছাড়া, ছাওয়া ছাড়া ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের মধ্যে যে আদান-প্রদান হয় তাই হাদিয়া। আল্লাহ বলেন, তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদেরকে দিয়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো। (সূরা নিসা আ/৪) আল্লাহ এখানে খুশি হয়ে দিলে তা ভোগ করার জন্য বলেছেন। এটিই হাদিয়া। হাদিয়া অল্প হলেও রাসূল সা: গ্রহণ করার জন্য বলেছেন। আল্লাহর রাসূল সা: বলেন হে মুসলিম রমণীগণ, তোমাদের প্রতিবেশীর জন্য সামান্য উপহার বা হাদিয়াও তুচ্ছ জ্ঞান করো না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর হয়। (বুখারি হা/২৪২৭) কারণ আগেও বলা হয়েছে হাদিয়ার দ্বারা নিজেদের মধ্যে মহব্বত বাড়ে। হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। যেমন রাসূল সা: বলেন, তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিয়ম করো এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমাদ হা/৯২৫০) আগের আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম ইসলামে হাদিয়া জায়েজ বৈধ। শুধু বৈধ নয় বরং তাতে রয়েছে সওয়াব বা পুণ্য। হাদিয়া দেয়া-নেয়া উভয়টি মুস্তাহাব বা সুন্নাত। রাসূল সা: হাদিয়া দিয়েছেন ও নিয়ছেন। রাসূল সা: এর জন্য হাদিয়া হালাল ছিল আর সদকা হারাম ছিল। পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি হয় হাসাদ দূর হয় হাদিয়ার মাধ্যমে। তাহলে আমাদের মাঝে হাদিয়ার প্রসার ঘটাতে হবে।
হাদিয়া নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মজবুত করার উদ্দেশ্যে দেয়া। আর সম্পূর্ণকাজ হবে আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার জন্য। হাদিয়া দিতে আমরা এখন কার্পণ্য করি। ছোট থেকে ছোট হোক তা হাদিয়া দেবো এবং তা গ্রহণ করব। অনেকে ভাবেন এত ছোট জিনিস হাদিয়া দেবো? এমন কথা বলে আর হাদিয়া দেয়া হয় না। রাসূল সা: তুচ্ছ গরুর খুরার কথাও উল্লেখ করেছেন।
লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা