পথশিশু ও শরিয়তের নির্দেশনা-৪
- মো: আবদুল্লাহ্
- ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
সংশ্লিষ্ট বিধানাবলি (দ্বিতীয়াংশ)
(ছয়) : আরেকটি বিধান হলো, তেমন পথশিশুর অভিভাবক হবে রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি তার জান-মালের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল। কেননা মহানবী সা: ইরশাদ করেছেন :
“যার কোনো অভিভাবক নেই, তার অভিভাবক হলেন বাদশাহ (রাষ্ট্রনায়ক)”। (Ñমুসনাদে আহমদ : খ-৬, পৃ-৬৬)।
মহানবী সা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সা: ওই ব্যক্তির অভিভাবকÑযার কোনো অভিভাবক নেই; যার কোনো ওয়ারিস নেই।” (তিরমিজি : মিরাস/ফারাইয ও তাহাবি : খ-ত, পৃ-৩৯৭)
একজন রাষ্ট্রপ্রধান আল্লাহ্ ও রাসূল সা: এর প্রতিনিধি বলে পরিগণিত; সুতরাং তিনি তেমন পথশিশুর বিয়ের ব্যবস্থা করবেন এবং তার সম্পদ খরচ করবেন। যিনি কুড়িয়ে পেয়েছেন, তিনি এর কিছু করতে যাবেন না। কেননা তার বেলায় অনিবার্য ‘কারণ’ না থাকায়, এসব বিষয়ে তাঁর কোনো কর্তৃত্ব নেই; সেই কারণ হলো, ‘আত্মীয়তা’ ও ‘রাষ্ট্র-ক্ষমতা’। তবে হ্যাঁ, যিনি কুড়িয়ে নিয়েছেন, তিনি তার পক্ষ হয়ে হাদিয়া-দান ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারবেন; তাকে কাজ-পেশা, কর্ম শিক্ষায় সোপর্দ করতে পারবেন এবং পারিশ্রমিকের কাজে লাগাতে পারবেন। কারণ এগুলো কর্তৃত্বের প্রশ্নে নয়; বরং তাকে যোগ্য, উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা এবং তার কল্যাণ বিবেচনায় প্রয়োজনীয়। এ যেন ক্ষতি না করে বরং তাকে পানাহারের জন্য ও কাপড়-চোপড় ধৌত করতে বলারই নামান্তর।
(সাত) : আরেকটি বিধান হলো, তার বংশধারা ও পিতৃত্ব প্রশ্নে যিনি তাকে নিজ পুত্র বলে দাবি করবেন, তা সম্ভাব্য হিসেবে শরিয়তের আলোকেও মেনে নেয়া হবে। কেননা সে তো বংশসূত্র প্রশ্নে অজ্ঞাত। সে দিক বিবেচনায় যিনি তাকে কুড়িয়ে নিয়েছেন অথবা অন্য কেউ তাকে নিজ পুত্র বলে দাবি করলে, তার সেই দাবি কোনো প্রমাণ ছাড়াই মেনে নেয়া হবে; আর তার সূত্রেই শিশুটির বংশধারা ধর্তব্য হবে। যদিও ‘কিয়াস’ তথা বাহ্যিক যুক্তির বিবেচনায় কোনো প্রমাণ ছাড়া তার দাবি না শোনারই কথা।
‘কিয়াস’ এর কারণ : বাস্তবতা হলো, তিনি এমন একটি বিষয়ের দাবি করছেন, যা বাস্তবে সত্যও হতে পারে আবার না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটা দিক প্রাধান্য দানের প্রয়োজনে কিছু একটা থাকা চাই। তা কোনো প্রমাণ পেশ করার মাধ্যমে হতে পারতো; অথচ তা তো পাওয়া গেল না।
‘ইসতিহসান’ এর কারণ : ‘ইসতিহসান’ তথা শরিয়া আইনের সূক্ষ্ম ও গোপন যুক্তি হলো, তিনি একজন সংগঠকরূপে এমন একটা বিষয়ের সংবাদ প্রদান করছেন, যা বাস্তবে সত্য-সঠিক হতে পারে। আর প্রত্যেক এমন ব্যক্তি যিনি এমন কোনো বিষয়ে সংবাদ দেন, যা তার ব্যাপারে সত্য হওয়া সম্ভব, তা তার প্রতি সুধারণাবশত সত্যায়ন করা, বিশ^াস করে নেয়া ওয়াজিব। আর উক্তরূপ পরিস্থিতিতে এমনটাই শরিয়তের মূলনীতি। তবে হ্যাঁ, তেমন সত্যায়নে যদি অন্যের ক্ষতি হয়, সে ক্ষেত্রে তা করা হয় না; এটা হলো এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আলোচ্য বিষয়ে তেমন কাউকে সত্যায়ন করা এবং শিশুটির বংশ-সম্পর্ক স্থাপন উভয়টিই বিবেচ্য। শিশুটির দিক হলো, তার বংশমর্যাদা রক্ষা, লালন-পালন ও তাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা, ইত্যাদি। দাবিকারক এর দিকটি হলো, সন্তানটির দ্বারা তাঁর দ্বীনি ও জাগতিক কল্যাণ প্রত্যাশা। আর একজন দাবিদারের এমন দাবি যাতে তার কল্যাণ রয়েছে, অথচ অন্যের ক্ষতি নেই; বরং অন্যেরও কল্যাণ নিহিত। তেমন ক্ষেত্রে, আইনত প্রমাণ পেশ করা অত্যাবশ্যকীয় নয় এবং প্রমাণ পেশের ওপর বিষয়টির ফায়সালাও স্থগিত রাখা যায় না। (প্রাগুক্ত: পৃ-২৯৩)
একইভাবে দাবিদার একজন মুসলিম হোক বা অমুসলিম জিম্মি হোক; শিশুটির লাভ-ক্ষতির বিবেচনা সাপেক্ষে তার বংশসূত্র নির্ণীত হবে। যেমন দু’জন দাবিদারের মধ্যে একজন মুসলিম এবং অপরজন অমুসলিম হলে; আর উভয়েরই কোনো প্রমাণ অবর্তমান হলে, শিশুটির আইনত লালন-পালন প্রশ্নে মুসলিম দাবিদারকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কারণ এতে তার ভবিষ্যৎ কল্যাণ তথা চিরস্থায়ী জান্নাত-জাহান্নামের প্রশ্ন জড়িত। একজন অমুসলিমকে দায়িত্ব দেয়া হলে, শিশুটি ওই পরিবেশে লালিত-পালিত হয়ে জাহান্নামের পথে ধাবিত হবে; আর একজন মুসলিমকে দায়িত্ব দেয়া হলে সে ওই পরিবেশে পালিত হয়ে জান্নাতের পথে পরিচালিত হবে, এটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক ও বাস্তব। যে কারণে তেমন শিশুর দায়িত্ব মুসলিম লোকটিকেই অর্পণ করা হবে।
তবে হ্যাঁ, যদি কোনো একজন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পেশ করতে পারে, সে ক্ষেত্রে প্রমাণসাপেক্ষে তাকেই দায়িত্ব দেয়া হবে এবং বংশসূত্র তার থেকেই ধর্তব্য হবে।
আর যদি এমন হয় যে, দু’জনের কারোরই প্রমাণ নেই; কিন্তু একজন শিশুটির দেহে কোনো সুনির্দিষ্ট আলামত বা চিহ্ন বয়ান করছে; তা হলে সে ক্ষেত্রে তাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এর স্বপক্ষে দলিল হলো পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসুফের ২৬-২৮ নং আয়াত। যেমনÑ
দাবিদার নারী হলে : যখন কোনো নারী শিশুটি তার পুত্র বলে দাবি করে, সে ক্ষেত্রে তার স্বামী যদি তার সেই দাবির সত্যায়ন করে অথবা সংশ্লিষ্ট ধাত্রী তার অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদান করে অথবা কোনো প্রমাণ পেশ করে; তা হলে সে দাবি সঠিক মর্মে গণ্য হবে; নতুবা নয়। আর যদি দু’জন মহিলা শিশুটি তাদের বলে দাবি করে এবং একজন প্রমাণ পেশ করতে সক্ষম হয়, তা হলে শিশুটি তারই বলে গণ্য হবে।
আর যদি দু’জনই প্রমাণ পেশ করতে সক্ষম হয়; তা হলে সে ক্ষেত্রে এ যুগের উদ্ভাবিত বিজ্ঞানের আবিষ্কার তথা ডি এন এ পরীক্ষার মাধ্যমে ফায়সালা হতে পারে। যদিও, সে ক্ষেত্রেও গবেষক ইমামদের বিরোধপূর্ণ ফায়সালাও বিদ্যমান; তবে আমরা তেমন বিতর্কে না গিয়ে বর্তমান পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ সফল কর্মপন্থা অবলম্বন করতে পারি। তার কারণ, সে যুগে যদি এমন কর্মপন্থা বাস্তবে থাকতো, তা হলে গবেষক ইমামগণ তা-ই বলে যেতেন। এ ছাড়া স্থান-কাল-পাত্র ভেদে শরিয়া আইন ও তার ব্যাখ্যায় এবং সে অনুপাতে রায় বা সিদ্ধান্তে পার্থক্য-তারতম্যের বৈধতার যে সুযোগ রয়েছে; তা এমন সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মোটকথা, উক্ত বিস্তারিত আলোচনা সামনে রেখে মহান আল্লাহ আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত পথশিশু, ড্রেনে-ডাস্টবিনে ও বনে-জঙ্গলে ফেলে দেয়া নবজাতকদের সাহায্যে এগিয়ে আসার এবং তাদের সম্মানজনক লালন-পালনে এগিয়ে আসার; এবং আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালনের তাওফিক দিন! আমিন! (সমাপ্ত)
লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা