২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আদম আ:-এর শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ

-

জড় পদার্থের নিজের জন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না। তাই জড় পদার্থের জন্য কোনো শিক্ষাদীক্ষার প্রয়োজন হয় না। জড় পদার্থের নিজের প্রয়োজন বলতে কিছু নেই। সে নিজেই অন্যের, বিশেষ করে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্রাণীর জন্য, বিশেষ করে গৃহপালিত পশুর জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও শিক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাদের চলার জন্য, বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই তাদের ফিতরাতের মধ্য দিয়ে দিয়েছেন। যে প্রাণীর বাঁচার জন্য, চলাফেরার জন্য যে শিক্ষার প্রয়োজন, তাই তিনি তার জন্য ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু মানুষের বেলায় তা নয়। মানুষের জন্য রয়েছে আলাদাভাবে শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা। মানুষের জন্য প্রয়োজন বহুমুখী শিক্ষা গ্রহণের। স্বয়ং আল্লাহই মানুষের শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। জন্ম থেকেই তার শিক্ষার অঙ্কুর ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তাকে কিছুটা আকল ঢুকিয়ে দিয়েছেন আর তা দিয়ে তার ওপর অধিক পরিমাণে জ্ঞানার্জনকে প্রত্যেক নরনারীর জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর দান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে সময়টা এ নশ্বর পৃথিবীতে অতিবাহিত হচ্ছে, তারই নাম জীবন। এ পার্থিব জীবন অতিবাহিত করে পারলৌকিক জীবনের অনন্তকালের জন্য পাথেয় অর্জনের নিমিত্তে যে জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন, তা কিভাবে কোথা থেকে হবে? আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য আলাদাভাবে পৃথক পদ্ধতিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। মানবকুলের জন্য যে পদ্ধতিতে যে শিক্ষার ব্যবস্থা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন করে রেখেছেন, তা হচ্ছে কিতাব অবতীর্ণকরণসহ রিসালাতের ব্যবস্থা পদ্ধতি। সর্বযুগের সব কওমের সঠিক শিক্ষার জন্য আল্লাহ নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। মানুষ যাতে সঠিক শিক্ষার অভাবে বিপদগামী হয়ে অধঃপতনের অতল তলে তলিয়ে না যায় এবং অনন্তকালের শাস্তি জাহান্নামের অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে মুক্তি পায়, তার জন্যই এ ব্যবস্থা। মনুষ্যকুল পিতা হজরত আদম আ: একই সাথে নবী ও মানুষ ছিলেন। তিনিই কেবল প্রথম মানুষ ও নবী ছিলেন, শুধু যদি মানুষ হিসেবে তাঁকে পাঠানো হতো, তবে প্রয়োজনীয় শিক্ষার জন্য তিনি কোথায় কার কাছে যেতেন? তাই তাঁকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবী করে পাঠালেন এবং তাঁর শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। জ্ঞান মানুষের জন্য অতি উত্তম নিয়ামত। এ নিয়ামত তো অন্যের কাছে নেই। সুতরাং এটা দেবে কে? আল্লাহ তায়ালা তার নিজের বাছাইকৃত বহুসংখ্যক মানুষকে নবী-রাসূল করে যুগে যুগে বিভিন্ন কওমের নিকট তাদের সঠিকভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন। নবী-রাসূলগণ আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার মাধ্যমে যার যার কওমকে পশুত্ব থেকে তুলে এনে মনুষ্যত্বের মর্যাদা দান করেছেন।
আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সা: সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী। তিনি যে কওমের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, তারা পরিণত হয়েছিল মানবজাতির নিকৃষ্ট সন্তানে। তাদের অবয়ব ছিল দেখতে মানুষ, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ছিল ইতর প্রাণীর চেয়েও ইতর ও অধম। তারা অজ্ঞতার অন্ধকারের বেষ্টনীতে আবদ্ধ ছিল । ধনী ও তৎকালীন তথাকার নেতৃস্থানীয় লোকেরা পরম স্বাধীনতার আবরণে চরম স্বেচ্ছাচারিতা করে বেড়াত। অপর দিকে গরিবেরা ছিল চরম অবহেলিত, অত্যচারিত ও নিপীড়িত। সম্পূর্ণ পরিবেশ গরিবদের ওপর ছিল ত্রাসের রাজত্ব। উঁচু-নীচু ভেদাভেদ ছিল চরম আকারের। নারীদেরকে তারা ঘৃণার পাত্রী বানিয়ে রেখেছিল। তাদের বেলায় তাচ্ছিল্যের সীমা ছিল না। পুরুষেরা সঙ্গতিসম্পন্ন হলে যত ইচ্ছা তত নারীকে ভোগদখল করত।
মেয়েশিশুকে তারা নিজেদের জন্য অপমানের বিষয় বলে জীবিত কবর দিত। অর্থনীতি ছিল সুদভিত্তিক। আল্লাহ তায়ালা যদি খারাপ কিছু সৃষ্টি করে থাকেন তা হচ্ছে সুদ। জাহেলি যুগে মক্কাবাসীরা কাবাঘর মেরামতের কাজে সুদের টাকা লাগায়নি, অথচ মুসলিম দেশগুলোতে উচ্চপর্যায়ের লোকেরা সুদের টাকা মসজিদ-মাদরাসায় দেদার লাগাচ্ছে ও নাম কুড়াচ্ছে। সুদ গরিবদের ওপর ধনীদের চরম ও সামষ্টিক অত্যাচার। যেখানে সুদপ্রথা থাকবে, সেখানে দাসপ্রথার জন্ম হবে। দাসপ্রথা একটি চরম অমানবিক প্রথা। তিনি শিশুদের প্রতি, পশুদের প্রতি, মুসাফিরদের প্রতি কী আচরণ করতে হবে তা নিজে করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। বৈদেশিক নীতি, সমরনীতি, ব্যবসানীতি সব কিছুর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। উপরি উক্ত যেসব কাজ নবীজি মোটেই পছন্দ করেননি, সেগুলোর প্রতি আমাদের চরমভাবে বৈপরীত্য পোষণ করতে হবে। নবীজি কোনো আংশিক দায়িত্ব নিয়ে আসেননি, বরং সামগ্রিক দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে একযোগে নবীর আনুগত্য করতে হবে। নবীর দেখানো পথে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে মুক্তির নেশায় ব্রতী হতে হবে; তবেই আমরা ইহকাল ও পরকালীন কল্যাণ লাভে সমর্থ হবো। মুক্তি পাবো আখেরাতে।
লেখক : সাবেক ডেপুটি ডাইরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক

 


আরো সংবাদ



premium cement