২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গুজব রটনাকারীর ভয়াবহ পরিণতি

-

তথ্য পরিবেশেন করার ক্ষেত্রে ইসলামে বিধিনিষেধ রয়েছে। সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘিœত হয়, এ জাতীয় তথ্য পরিবেশন করা ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজ। কারণ ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যকে সমর্থন করে। ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি করে, সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ভুয়া তথ্য দিয়ে গুজব সৃষ্টির ফলে মানুষের প্রাণহানি ঘটে, সম্পদের ক্ষতি হয়। যা কখনোই একজন নাগরিকের কাম্য হতে পারে না। ভুয়া তথ্য পরিবেশন করা হলো ফাসিক ব্যক্তির কাজ। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলোÑ মোমিন ব্যক্তির কাছে যখন কোনো খবর বা তথ্য আসবে, সে তা পরিবেশন করার আগে তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে নেবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে, তা হলে তোমরা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে’ (সূরা হুজরাত-৬)।
গুজবকে কেন্দ্র করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। যা মূলত ভুল তথ্য আদান-প্রদান করা থেকে সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া শোনা কথার মধ্যে তথ্যবিভ্রাটের সুযোগ থাকে। তথ্যবিভ্রাটের গুজবে সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নবুয়ত পরবর্তী সময়ে মুনাফিকরা ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে কূটকৌশল করত। তারা সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশিয়ে সমাজে গুজব রচনা করত। এর মূল উদ্দেশ্যে ছিলÑ আরবের আন্তঃগোত্রীয় সম্প্রীতি নষ্ট করা। হজরত মুহাম্মদ সা:-কে সত্য প্রচারের ক্ষেত্রে বিব্রত বা বাধাগ্রস্ত করা। কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘মুনাফিক দল, যাদের অন্তরে কুফরির ব্যাধি রয়েছে ও যারা মদিনায় গুজব রটনা করে বেড়ায়, তারা যদি বিরত না হয়, তা হলে আমি নিশ্চয়ই আপনাকে তাদের ওপর প্রবল করে দেবো, অতঃপর এরা সেখানে আপনার প্রতিবেশী হিসেবে সামান্য কিছ্ ুদিনই থাকতে পারবে’ (সূরা আহযাব-৬০)।
সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। যার বেশির ভাগই গুজবকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে। সাধারণত গুজব রটানোর ক্ষেত্রে মুনাফিকরা উঠতি বয়সের তরুণদের ব্যবহার করে থাকে। মোমিনদের গুজব সৃষ্টি করার বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘যে বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই, তার পেছনে পড়ো না; কেন নাÑ কান, চোখ ও অন্তর, এ সব কয়টির (ব্যবহার) সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩৬)।
ইসলাম শান্তি ও ন্যায়ের ধর্ম। যুগ যুগ ধরে সব সমাজব্যবস্থায় মুনাফিকদের চক্রান্ত অব্যাহত ছিল। মুনাফিকদের প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। গুজব রটনাকারীকে কেয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘অতঃপর তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে, যে মানুষকে গোমরাহ করার জন্য অজ্ঞতাবশত আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করে; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সীমা লঙ্ঘনকারী জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না’ (সূরা আনআম-১৪৪)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেনÑ ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা এবং হাত থেকে সব মুসলমান নিরাপদ থাকে’ (বোখারি-৯)। মোমিন বান্দাদের ইসলামী মূল্যবোধ অনুযায়ী তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। গুজব সৃষ্টির মতো ঘৃণ্য কাজ থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement

সকল