পরকালে অনন্ত সুখের জীবন
- জী এম আবুল কালাম আজাদ
- ৩১ মে ২০১৯, ০০:০০
পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে সভ্যতার উত্তরণে সামন্ততন্ত্র, রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, পুঁজিতন্ত্র, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারায় বিশ্ব রাষ্ট্রসমগ্র পরিচালিত হয়। তবে রাষ্ট্রের বা পৃথিবীর মানুষের ধর্মীয় চেতনা একটি মৌলিক বিষয়। সমাজ সংসারে এ ধর্মীয় অনুশাসনের গভীর শৃঙ্খলা যেমন রয়েছে আবার এ ক্ষেত্রে উদাসীনতারও অন্ত নেই। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীবÑ এ দাবির কারণেই বিশেষভাবে চোখ কান খোলা রেখে একটু তাগিদ করেই মনে হয় ধর্মীয় অনুশাসনগুলো জানা, মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের অন্যতম পন্থা হতে পারে।
হজরত আদম আ: পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানব। সেই হিসেবে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব থেকে ইসলাম ধর্মের সূত্রপাত তা নিশ্চয় করে বলা যায়। শুধু এক আল্লাহর আনুগত্য ও আদেশ পালনের জন্য পৃথিবীতে স্বাধীন, ক্ষমতাশালী ও ধীশক্তি সম্পন্ন জিন ও ইনসানকে (মানুষ) আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন; আর কালে কালে ঈমান ও আমলের সাথে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, বিশ্বাস ও তাঁর নির্দেশিত পথে চলার জন্য মানুষকে হেদায়েত দানে আল্লাহ্ পৃথিবীতে বহু নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। তাওরাত, যবুর, ইনজিল, কুরআন আল্লাহর দানকৃত চারটি আসমানি কিতাব। সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল-কুরআন শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিব্রাইল আ:-এর মাধ্যমে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ওপর নাজিল হয়। সব বিচারে যিনি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। যাঁর দ্বারা জীবনে কখনো কোনো অন্যায় বা ভুল সঙ্ঘটিত হয়নি। ইসলাম ধর্মের চারটি উৎস হলো কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস। এখানে কুরআন হলো সরাসরি আল্লাহর বাণী আর হাদিস হলো হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ধর্মীয় আমল ও দিকনির্দেশনা।
আল কুরআনুল মাজিদের প্রথম সূরা (অধ্যায়) আল ফাতিহা, আয়াত (বাক্য) ৭। এ সূরাতে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালারই জন্য যিনি নিখিল জাহানের রব। যিনি দয়াময় মেহেরবান, বিচার দিনের মালিক। আমরা একমাত্র তোমারই (আল্লাহর) ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদিগকে সঠিক দৃঢ় পথ প্রদর্শন করো। ঐসব লোকের পথ, যাদের তুুমি পুরস্কৃত করেছ, যারা অভিশপ্ত নয়, যারা পথভ্রষ্ট নয়।’
আল কোরআন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এ পবিত্র গ্রন্থে বিশ্বাসসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা, নৈতিক নির্দেশ, শরিয়তি বিধিনিষেধ, আহ্বান-আমন্ত্রণ, উপদেশ, সাবধান বাণী, সমালোচনা, তিরস্কার, ভীতি প্রদান, সুসংবাদ, সান্ত্বনা, যুক্তিপ্রমাণ, সাক্ষ্য-উদাহরণ, ঐতিহাসিক ঘটনা, বিশ্ব প্রকৃতির নিয়ম নিদর্শনের প্রতি ইঙ্গিত, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা বাণী প্রদান করা হয়েছে। ঈমান কলেমা, নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজÑ এ পাঁচটি বিষয় হলো ইসলামের রুকন বা খুঁটি এবং ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানদের পালন করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য; যা অস্বীকার করলে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে এবং কঠিন পাপী জালেমের খাতায় নাম উঠে যাবে এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও শেষ বিচারে শাস্তি বা দোজখ অনিবার্য। সূরা আল ফাতিহাতে আল্লাহ্ পাক যা বলেছেন তা যদি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয় তবে নিঃসন্দেহে সূরা ফাতিহাকে আল কুরআনের মুখবন্ধ বা সারমর্ম বলা যেতে পারে, বলাও হয়েছে তাই। এ সূরা একটি প্রার্থনা যা হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নবুওয়াতের প্রথম অধ্যায়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে নাজিল হয়। একে কুরআন মাজিদের অগ্রভাগে স্থান দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই কথা শিক্ষা দেয়া যে, এ মহান গ্রন্থ হতে উপকৃত হতে হলে সর্বপ্রথম খোদার কাছে প্রার্থনাই করতে হয়।
জীবন, জীবনের কর্ম-সাধনা, সু-কর্ম, পাপ-অনাচার, সাফল্য-সুখ, ব্যর্থতা-বেদনা সব মিলিয়ে জীবনগাথার পরিসীমা ব্যাপক-সুবিশাল, সরল কিংবা জটিল। সবই জীবনের অধ্যায়। তবে যে মৃত্যু অনিবার্য, সেই মৃত্যুর পরে কি? মৃত্যু তো মৃত্যুই; মৃত্যুর পরে আবার কি? যদি কিছুই না মনে করা হয় তাহলে যা ইচ্ছে তাই করার প্রবণতায় মনুষ্য সমাজ লাগামহীন, বাজেভাবে পরিচালিত হতে পারে। তবে, মানুষের মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কী নির্দেশনা আছে তার কিছু উদ্ধৃতি এ নিবন্ধের স্বার্থে উল্লেখ করতে পারি।
আল্লাহ্র প্রভুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তোমরা কি জানো না যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান? ইহা কি জানা নাই যে, আকাশ ও পৃথিবীর প্রভুত্ব একমাত্র আল্লাহরই জন্য? তিনি ব্যতীত অন্য কেহই তোমাদের বন্ধু ও সাহায্যকারী নাই।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-১০৭ শেষাংশ)
‘তিনি (আল্লাহ) আসমান জমিনের স্রষ্টা। তিনি যাহা কিছুরই সিদ্ধান্ত করেন, তাহার জন্য শুধু বলেন, ‘হও’ আর অমনি তাহা হইয়া যায়। (সূরা আল বাকারা, আয়াত-১১৭]। আল্লাহ্ যাহা চাহেন সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোনো কাজ করার ফায়সালা করেন, তখন শুধু বলেন; হইয়া যাও, আর তখনই তাহা হইয়া যায়।’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৪৭ শেষাংশ]
‘তারপরে যাহারা আল্লাহর বিরুদ্ধে কুফরি অবলম্বন করিয়াছে, না তাহাদের ধনসম্পদ কোনো উপকারে আসিবে, না তাহাদের সন্তান। ইহারাতো জাহান্নামি এবং তাহারা চিরদিনই সেখানে থাকিবে।’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১১৬]
‘হে নবী, দুনিয়ার রাজ্যসমূহে খোদার নাফরমান লোকদের দম্ভপূর্ণ চলাফেরা তোমাকে যেন প্রতারিত করিতে না পারে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৯৬ প্রথমাংশ) ‘ইহা কয়েক দিনের জীবনের স্বল্প আনন্দমাত্র অতঃপর ইহারা সকলেই জাহান্নামে প্রবিষ্ট হইবে, আর ইহা হইতেছে নিকৃষ্টতম স্থল।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত- ১৯৭]
আল্লাহর ক্ষমা প্রদর্শনে তিনি বলেন, ‘আকাশ রাজ্য ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সবই আল্লাহ্র। তোমরা তোমাদের মনের কথা প্রকাশ করো আর নাই করো আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদের নিকট হইতে সে সম্পর্কে হিসাব গ্রহণ করিবেন। অতঃপর যাহাকে ইচ্ছা মাফ করিবেন, আর যাহাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন; ইহা তাহার এখতিয়ার, তিনি সর্বশক্তিমান।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-২৮৪]
‘কেহ যদি কোনো পাপ কাজ করিয়া ফেলে কিংবা নিজের উপর জুলুম করিয়া বসে এবং তাহার পর খোদার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে সে খোদাকে ক্ষমাকারী ও অনুগ্রহশীল পাইবে।’ [সূরা- আন নিসা, আয়াত-১১০]
‘খোদার নাফরমানি ও অবাধ্যতা হইতে দূরে থাকো। জানিয়া রাখিও, তোমাদিগকে একদিন খোদার সহিত অবশ্যই সাক্ষাৎ করিতে হইবে। হে নবী, তোমার উপস্থাপিত বিধান যাহারা মানিয়া লইবে তাহাদিগকে কল্যাণ ও সৌভাগ্যের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-২২৩ শেষাংশ)
আল্লাহ্র প্রভুত্ব, একত্ববাদ, শ্রেষ্ঠত্ব, সাবধান বাণী, অনুগ্রহ, দয়া, ক্ষমা ও পুরস্কার ঘোষণা দান সম্পর্কে আল কুরআনের ১১৪টি সূরায় অসংখ্যবার উল্লেখ করা হয়েছে। মৃত্যুর পর পাপপুণ্যের অনিবার্য বিচার, অনিবার্য কষ্টের পরকাল কিংবা অনন্ত সুখের জীবন সমগ্র মানবকুলের জন্য নির্ধারিত ও অনিবার্য। আল্লাহ্ মহান, ক্ষমাশীল ও দয়াময়, আল কুরআনে তার ঘোষণাও রয়েছে; যে কোনো অবস্থায় যে কাউকে আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিতে পারেন। তবে, অনিবার্যভাবে ইসলামী বিধানে চলতে হবে; আর মহান আল্লাহর নিকট অবিরত ভুল, ভ্রান্তি আর পাপের মার্জনা প্রার্থনা করে যেতে হবে।
লেখক : মহাব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ব্যাংক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা