২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আল্লাহই আলিমুল গায়েব

-

গায়েব জানেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি ছাড়া তাঁর সৃষ্টির কেউ বিন্দুমাত্র গায়েবের খবর জানে না। গায়েব মানে হচ্ছে, প্রচ্ছন্ন লুকানো অদৃশ্য বা আবৃত। পারিভার্ষিক অর্থে গায়েব হচ্ছে এমন জিনিস যা অজানা এবং যাকে জানার উপায়-উপকরণগুলো আয়ত্ত করা যায় না। দুনিয়ার এমন বহু জিনিস আছে যা এককভাবে কোনো কোনো লোক জানে এবং কোনো লোক জানে না। আবার এমন অনেক জিনিস আছে, যা সামগ্রিকভাবে সমগ্র মানবজাতি কখনো জানত না, আজো জানে না এবং ভবিষ্যতেও কখনো জানবে না। জিন, ফেরেশতা ও অন্যান্য সৃষ্টির ব্যাপারেও এই একই কথা। কতক জিনিস তাদের কারো কাছে প্রচ্ছন্ন এবং কারো কাছ প্রকাশিত। আবার অসংখ্য জিনিস এমন আছে, যা তাদের সবার কাছে প্রচ্ছন্ন ও অজানা। এসব অদৃশ্য জিনিস একমাত্র একজনের কাছে দৃশ্যমান। তিনি হচ্ছেন মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ। তাঁর কাছে কোনো জিনিস অদৃশ্য নয়। সব কিছুই তাঁর কাছে সুস্পষ্টভাবে পরিদৃশ্যমান।
আয়াতুল কুরসিতে বলা হয়েছেÑ ‘কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কেও তিনি অবগত। তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না’ (সূরা বাকারাহ-২৫৫)।
বিভিন্ন হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কিছু মোজিজা বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো ছিল বিশেষ সময় ও মুহূর্তের জন্য। এটা তাঁর সাধারণ গুণ ছিল না। আল্লামুল গুয়ুব এবং বান্দা যেখানেই থাক আল্লাহ তার সাথে আছেন, বান্দার নিকটে আছেন...ইত্যাদি আল্লাহর গুণ। কুরআনের আয়াত তো দূরের কথা, একটি জয়িফ হাদিসেও দ্ব্যর্থহীনভাবে এ অর্থে কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি।
এই বিশ্ব জাহানের ব্যবস্থাপনা এবং এর অন্তর্নিহিত কার্যকারণ ও ফলাফল বুঝার মতো কোনো জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। মানুষ, জিন ও ফেরেশতা বা অন্য কোনো সৃষ্টিই হোক না কেন, সবার জ্ঞান অপূর্ণ ও সীমিত। বিশ্ব জাহানের সমগ্র সত্য ও রহস্য কারো দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই।
রাসূলুল্লাহ সা: গায়েব জানেন এবং কোনো মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে উপস্থিত হন। অর্থাৎ তাঁর ‘ইলমুল গায়েব’ আছে এবং তিনি হাজির-নাজির। এগুলো প্রচলিত বানোয়াট ও মিথ্যা কথা। এ কথা বলা শিরক।
ইলমুল গায়েব অর্থÑ অদৃশ্যের জ্ঞান অর্থাৎ যিনি দৃশ্য-অদৃশ্য, প্রচ্ছন্ন-অপ্রচ্ছন্ন ও গোপনীয় সব কিছু তার জানা। আর হাজির-নাজির অর্থÑ উপস্থিত ও দর্শক। হাজির-নাজির বলতে বোঝান হয়, সর্বত্র বিরাজমান ও সবকিছুর দর্শক। অর্থাৎ তিনি সদা-সর্বদা, সর্বত্র উপস্থিত বা বিরাজমান এবং তিনি সদা-সর্বদা সবকিছুর দর্শক। যেহেতু তিনি সদা-সর্বত্র বিরাজমান ও সব কিছুর দর্শক, তিনি সর্বজ্ঞ ও সব যুগের সব স্থানের সব গায়েবি জ্ঞানের অধিকারী। এ দুটোই আল্লাহর গুণ। কুরআন ও হাদিসে এ দুটি গুণ আল্লাহর জন্যই উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূল সা:-এর সম্পর্কে এ ধরনের শব্দ কুরআন-হাদিসের কোথাও ব্যবহার করা হয়নি।
আল্লামা লাখনবি তার আল আসারের ৩৮ পৃষ্ঠায় বলেছেন, ‘এগুলো সবই সুন্দর করে সাজানো মিথ্যা ও বানোয়াট কথা’। মোল্লা আলী কারিও তার আল আসরারের ৩২৩-৩২৫ পৃষ্ঠায় অনুরূপ কথা বলেছেন। ইবনু হাজার মাক্কি তার ‘আল-মিনাহুল মাক্কিয়াহ’ গ্রন্থে ও অন্যান্য প্রাজ্ঞ আলেম সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, এ কথাগুলো ভিত্তিহীন ও মিথ্যা’ (পৃষ্ঠা-৩৭২ ও ৩৭২, আস সুন্নাহ ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত ডিসেম্বর-২০০২)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদেরকে বলো, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না কবে তাদের উঠিয়ে নেয়া হবে’ (সূরা নমল-৬৫)।
সূরা নামলের উল্লিখিত ৬৫ নম্বর আয়াতের পূর্ব থেকে আল্লাহর সৃষ্টিকর্ম, ব্যবস্থাপনা ও জীবিকা দানের দিক দিয়ে এই মর্মে যুক্তি পেশ করা হয়েছে, আল্লাহই একমাত্র ইলাহ। এবার আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ জ্ঞানের দিক দিয়ে জানানো হচ্ছে, এ ব্যাপারেও মহান আল্লাহ হচ্ছেন লা শারিক। পৃথিবী ও আকাশে ফেরেশতা, জিন, নবী, আউলিয়া অথবা মানুষ ও অমানুষ যেকোনো সৃষ্টি হোক না কেন, সবারই জ্ঞান সীমাবদ্ধ। কিছু না কিছু জিনিস সবার কাছ থেকে গোপন রয়েছে। সব কিছুর জ্ঞান যদি কারো থাকে তাহলে তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এ বিশ্ব জাহানের কোনো জিনিস এবং কোনো কথা তাঁর কাছে গোপন নেই। তিনি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সব কিছু জানেন।
আল্লাহু আলিমুম বিজাতিস সুুদুর ও আল্লামুল গুয়ুব। যিনি গোপন সত্যের জ্ঞান রাখেন। (বিভিন্ন অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে) আল্লাহ যখন বলবেন, ‘হে মরিয়াম পুত্র ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করো?’ তখন সে জবাব দেবে, ‘সুবহানা’আল্লাহ! যে কথা বলার কোনো অধিকার আমার ছিল না, সে ধরনের কোনো কথা বলা আমার জন্য অশোভন ও অসঙ্গত। যদি আমি এমন কথা বলতাম, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই তা জানতে পারতেন, আমার মনে যা আছে আপনি জানেন, কিন্তু আপনার মনে যা আছে আমি তা জানি না, আপনি তো সমস্ত গোপন সত্যের জ্ঞান রাখেন (সূরা মাইদা-১১৬)।
আল্লাহ আলিমুল গায়িব সব প্রকার অদৃশ্য বস্তুর জ্ঞান তিনি রাখেন। হজরত ঈসা আ:-এর জবাব থেকেই এর সুস্পষ্ট ধারণা আমরা পাই। মানুষের মনের অন্ধকার কুঠুরিতে কী আছে, আল্লাহর কাছে তা দিবালোকের মতোই সুস্পষ্ট। কারণ তিনি আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞ।
লেখক : ব্যাংকার


আরো সংবাদ



premium cement
‘নানা গুজবে’ সেন্টমার্টিনে বিধিনিষেধ বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ওপর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের হামলা না’গঞ্জের পপি হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটি গঠিত চট্টগ্রামে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে শতাধিক মার্কেট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বৈষম্যের শিকার পল্লবী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহবুব কুবির সাথে ইবনে সিনা ট্রাস্টের চুক্তি, ২৫ শাখায় মিলবে সেবা এলাকাবাসীকে চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকতে কায়কোবাদের খোলা চিঠি ধলেশ্বরী নদীর মোল্লারহাট ফেরিঘাট অবৈধ দখলদারের নিয়ন্ত্রণে মোহন মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি পেলেন ঢাবির ১৫ শিক্ষার্থী

সকল