ইসলামে জবাবদিহিতা
- ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
- ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
জবাবদিহিতা ইসলামের একটি অন্যতম মৌলিক বিষয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহিহ বুখারি এবং মুসলিম) জবাবদিহিতার কারণে ইসলামের সৌন্দর্য শুধু নয় বরং তার গ্রহণযোগ্যতাও হয়েছে সবার কাছে। এ কথা শতসিদ্ধ যে, আল্লাহ আমাদের কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া সৃষ্টি করেননি। পবিত্র কুরআনের দু’টি আয়াতে সরাসরি এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। তা হলোÑ ১. আমাদেরকে খলিফা (প্রতিনিধি) হিসেবে (সূরা আল-বাকারাহ, ২: ৩০) এবং ২. আল্লাহর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা আল-যারিয়াত, ৫৬:৫১) আর তাই এই দুনিয়ার প্রত্যেকটি কাজের জবাবদিহি করতে হবে আমাদের। (সূরা আল-হাশর, ৫৯:১৮) আমাদের সব কাজের বিবরণ আল্লাহ নিজেই সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছেন (সূরা ইনফিতর, ৮২: ১০-১২) এবং বিচারের দিন আমাদের তা পাঠ করার জন্য বলা হবে। (সূরা ইসরা, ১৭:১৪) সেসব কাজের ওপর ভিত্তি করে আমাদের পুরস্কার হিসেবে জান্নাত কিংবা শাস্তি হিসেবে জাহান্নামে দেয়া হবে। আর তাই এই দুনিয়াবি জীবনের প্রত্যেকটি কাজই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো কিংবা মন্দ সব কাজেরই বিনিময় দেয়া হবে এই দিনে। (সূরা ইসরা, ১৭:১৫) উপরন্তু, কোনো কিছুই; সম্পত্তি কিংবা ব্যক্তি সে দিন কারো কোনো কাজে আসবে না ব্যক্তির আমল ছাড়া আর আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। (সূরা ইনফিতর : ৮২:১৯)
উল্লেখ্য, ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যক্তির জবাবদিহিতা দুইভাবে বিবেচিত হবে। এক. এই দুনিয়াতে তাকে জবাবদিহি করতে হবে এবং দুই. আখেরাতের বিচারের দিবসে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ চুরি করলে তার হাত কেটে দেয়া হবে, কিংবা ডাকাতি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালালে তার বিপরীত দিক থেকে এক পা এবং এক হাত কেটে দেয়া হবে। অন্য দিকে, আখেরাতের জীবনের জবাবদিহিতা অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ, একজন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু কেউ যদি একাধিক ব্যক্তিকেও হত্যা করে তাহলে তাকে একাধিকবার হত্যা করা সম্ভব নয়। অন্য দিকে অনেক অপরাধী আছে যাদের সম্পর্কে জানা যায় না কিংবা জানার পরেও প্রচলিত বিধানে শাস্তি দেয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে, বৈষম্য অবধারিত হয়ে ওঠে। কিন্তু, আখেরাতে এটি করা সম্ভব হবে। এভাবে দুনিয়ার জীবনের প্রত্যেকটি অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে ইসলামে। এখানে তাই আখেরাতের বিচারে সফলতা কিংবা ব্যর্থতাই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। সেখানে জান্নাতিরাই হবে চূড়ান্তভাবে সফলকাম। (সূরা আল-হাশর, ৫৯:২০) ফলে, একজন বিশ্বাসীর সার্বক্ষণিক চিন্তাচেতনা থাকে তার কোনো অপরাধ সম্পর্কে কেউ না জানলেও কিংবা কোনো জবাবদিহিতা না করতে হলেও আল্লাহর সামনে তাকে দাঁড়াতে হবে এবং হিসাব দিতে হবে। (সূরা আন-নাবা, ৩৮) সুতরাং সে নিজেকে এসব থেকে বিরত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। ফলে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আখেরাতে প্রত্যেকটি বিষয়ের সূক্ষ্মভাবে হিসাব নেয়া হলেও বিশেষ কয়েকটি বিষয়কে কুরআন ও হাদিসে উল্লেখ করে তার উপরে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন, প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত কেউ এক কদমও সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। ১. কিভাবে সে তার জীবনকে অতিবাহিত করেছে? ২. তার যৌবনকে সে কিভাবে ব্যয় করেছে? ৩. সে কিভাবে অর্থ সম্পত্তি আয় করেছে? ৪. অর্জিত অর্থ সম্পত্তি কোন পথে ব্যয় করেছে? এবং ৫. সে তার জ্ঞানের আলোকে কী করেছে? (সুনানু তিরমিজি)
মূলত এ পাঁচটি প্রশ্নের মধ্য দিয়ে মানবজীবনের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও নির্বিশেষে সবার প্রত্যেক বিষয়েরও হিসাব নেয়া সম্ভব। এসব প্রশ্নের উত্তর তখনই যথাযথভাবে দেয়া যাবে যখন ব্যক্তি তার জীবনকে আল্লাহর দেয়া বিধানের আলোকে এবং রাসূল সা:-এর দেখানো পথে পরিচালিত করতে সচেষ্ট হয়।
সত্যিকার অর্থে কিভাবে এ জীবনকে কাজে লাগিয়ে আখেরাতের জীবনে সফলতা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারেও রাসূলুল্লাহ সা: কার্যকরী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাঁচটি বিষয়ের আগে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দাও। ১. বৃদ্ধ হওয়ার আগে তোমার যৌবনকে, ২. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে, ৩. দারিদ্র্যতার আগে সচ্ছলতাকে, ৪. ব্যস্ততার আগে অবসর সময়কে এবং ৫. মৃত্যুর আগে জীবনকে। (সুনানু আহমদ)
প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের মৃত্যু তথা ইহকালীন জীবনের শেষ মুহূর্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ একবারও কি চিন্তা করে দেখেছি কী প্রেরণ করছি আমাদের সত্যিকারের জীবনের জন্য? এসব চিন্তা সবারই করা জরুরি। সুতরাং, উল্লিখিত কুরআন ও হাদিসের আলোকে যদি আমাদের ইহজাগতিক জীবনের সময় ও সুযোগগুলোকে কাজে লাগানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারি তাহলে বিচার দিবসের কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে চূড়ান্ত সফলতা তথা জান্নাতে অধিবাসী হতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
লেখক : শিক্ষাবিদ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা