আল্লাহর সৃষ্টি রহস্যে আমরা
- আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন
- ০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
মহান প্রভু মানুষকে বানিয়েছেন সেরা বুদ্ধিসম্পন্ন জীব। ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সেরা সৃষ্টি হিসেবে আল্লাহ আদম ও বনি আদমকে সৃষ্টি করেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আমরা বনি আদমকে উচ্চ সম্মানিত করেছি, তাদের স্থল ও জলপথে বহন করে নিয়েছি, তাদের পবিত্র বস্তুগুলো থেকে খাদ্য দান করেছি এবং আমাদের বহু সৃষ্টির ওপরে তাদের উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেছি’ (ইসরা ১৭/৭০)।
এখানে প্রথমে ‘কার্রামনা’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে এমন কিছু বিষয়ে একচ্ছত্র সম্মান দানের কথা বলা হয়েছে, যা অন্য কোনো সৃষ্টিকে দেয়া হয়নি। যেমন জ্ঞান-বিবেক, চিন্তাশক্তি, ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যবোধ, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা ইত্যাদি। অতঃপর ‘ফাসসালনা’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যের তুলনায় মানুষকে উচ্চ মর্যাদা দানের কথা বলা হয়েছে। যেমনÑ মানুষের উন্নত হতে উন্নততর জীবনযাপন প্রণালী, গৃহ নির্মাণপদ্ধতি, খাদ্য গ্রহণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদিতে উন্নততর রুচিশীলতা, আইনানুগ ও সমাজবদ্ধ জীবনযাপন প্রভৃতি বিষয়গুলো অন্যান্য প্রাণী থেকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং নানা বৈচিত্র্যে ভরপুর।
পৃথিবীর সৃষ্টি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আল কুরআনে সূরা আম্বিয়ায় বলেছেন, ‘সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম’ (আম্বিয়া:৩০)। আরেক জায়গায় সৃষ্টিকে আশ্চর্য বুঝাতে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, তারা কি দেখে না, আমি কিভাবে উট সৃষ্টি করেছি?
উটের কথা বলা হয়েছে এ জন্য যে, উট মরু অঞ্চলের অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। যা এক সপ্তাহ না খেয়ে বালুর নিচে মুখ লুকিয়ে থাকতে পারে। আবার বোঝা বহন করতে পারে। তার পিঠে চেয়ারের মতো আসন আছে। এ জন্য উটকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলোÑ এ সৃষ্টিও মানুষের উপকারার্থে।
সূরা আর রাহমানে আল্লাহ অনেক সৃষ্টি নৈপুণ্যের বর্ণনা দিয়ে মানব জাতিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেনÑ তোমাদের রবের কোনটা কোনটা অস্বীকার করবে?
সূরা আর রাহমানের ১৯ নম্বর আয়াত : দুটি সমুদ্রকে পরস্পর মিলিত হতে দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে একটি পর্দা আড়াল হয়ে আছেÑ যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
এটি আলাস্কা উপমহাসাগরের মিলনস্থল, যেখানে দুটি সাগর মিলিত হয়েছে অথচ এই দুটি সাগরের পানি কখনো একত্রে মিশে না। এই পানিগুলোও সারা পৃথিবীতে আমাদের উপকারে আসছে।
এভাবে আল্লাহ নারী আর পুরুষের সৃষ্টি করেছেন, আর দু’জনই বাকশক্তিসম্পন্ন প্রাণী। ‘হায়ওয়ানে নাতেক’ কিন্তু দুটির মধ্যে মাংসপেশির পার্থক্য দিয়ে উভয়কে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সৃষ্টি করেছেন। এরা একই রক্তে-মাংসে গড়া। এদের থাকা ও চলাফেরা একই রকম। একই মানুষের সামান্য নাপাক পানি থেকে জন্ম। অথচ এ দুইয়ের মধ্যে রয়েছে কণ্ঠের পার্থক্য, শক্তির পার্থক্য ও জ্ঞানের পার্থক্য। এমনকি চালচলনেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
এবার আসুন এ মানুষের পরিচয়ের দিক সম্পর্কে। মানুষের মধ্যে মুসলিম-অমুসলিম বা বিভিন্ন জাতি যেমন : হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, সাদা-কালো ইত্যাদি রয়েছে। ধনী ও গরিব আবার এদের মধ্যে ভাষার পার্থক্য। সারা পৃথিবীতে ১৮৮টি ভাষায় মানুষ কথা বলে। গবেষকদের মতে প্রতি চল্লিশ কিলোমিটার পর পর ভাষার পরিবর্তন হয়। আবার একজন ব্যক্তি অনেকগুলো ভাষা জানেন। আবার কেউ একটিও ঠিক মতো পারেন না। আমাদের ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ নাকি আঠারোটি ভাষা জানতেন। কত রকমের সৃষ্টি রহস্য। আল্লাহ জীবিত থেকে মৃত মানুষ বা প্রাণী, মৃত বীজ থেকে জীবিত গাছ বের করতে পারেন। সব পারেন এটাই হলো তার সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য।
এবার এটাকে আপনি নারী আর পুরুষের মধ্যে উপমা হিসেবে ব্যবহার করুন। হিন্দু-মুসলিমের সাথে উপমা দিন। এভাবে স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুলের উপমা দিয়ে আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য প্রকাশ করুন। তাহলেই তো আপনি সেরা।
আমরা কিসের তৈরি কিছুই বোঝা যায় না। অথচ আমাদের কত কর্ম-চিন্তা-গবেষণা। আমরা কী দ্বারা পরিচালিত। শক্তি উৎপাদনের উৎস কোথায়? ভেবে দেখেছি কখনো? একটি গাভীকে আমরা সবুজ ঘাস খাওয়াই কিন্তু দুধ দেয় সাদা। তাও পরিমাণে কয়েক কেজি। অথচ সে আমাদেরই ঘরে আমাদের মতোই বাস করে। এভাবে কোনো মানুষকে খুব খাওয়ালে ওভাবে দুধ আসবে না। গাছপালা, নদী-নালা, আকাশ-বাতাস, বায়ু ও রাত-দিন সব সৃষ্টির সেরা। বাতাস তো দেখাই যায় না। তারপর আবার চ্যালেঞ্জ। কুরআন বলছে ‘হাল তারা মিন ফুতুর’? অর্থাৎ কোনো ভুল কি দেখতে পাও?
আমাদের সৃষ্টিটাই রহস্য। এ রহস্যের গবেষণা করলে উত্তর মেলে আল্লাহ সর্বেসর্বা। তিনি তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য রাতের অংশে তাঁর ইবাদত করার জন্য বলেছেন। আর সৃষ্টির রহস্যে সারা পৃথিবীতে সব সময় কোনো না কোনো দেশে রাত চলছে ভোর হচ্ছে। তার মানে ২৪ ঘণ্টা তাঁর ইবাদত চলছে। এই সৃষ্টি রহস্যে আমরা আছি, ভাবতে ভাবতে আবার চলেও যাবো।
লেখক : প্রবন্ধকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা