২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসলামের উন্নয়ন ধারণা

-

ইসলামী শিক্ষা একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা। ঠিক ইসলাম যেমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। জীবনের প্রতিটি বিষয়ে যৌক্তিক ও কার্যকরী উপায় বাতলে দিতে পারে ইসলামী শিক্ষা। বর্তমান বিশ্বে মানব ও সামগ্রিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নিয়ে আলোচিত হচ্ছে তা হলোÑ জাতিসঙ্ঘের ‘সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোলস’ (টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য)। বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে এ লক্ষ্যমাত্রাকে একটি বিশেষ উপায় বিবেচনা করে প্রতিটি দেশ, জাতি ও সমাজ একাত্মতার সাথে বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যগুলোর চতুর্থতম হলো কোয়ালিটি এডুকেশন। কোয়লিটি এডুকেশন নিয়েও ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ ও দেশে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও পদ্ধতির প্রকাশ আমরা লক্ষ করি। মূলত শিক্ষার উদ্দেশ্যই মানব উন্নয়ন। আর উন্নত মানুষই টেকসই অন্যান্য উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যা একজন ব্যক্তিকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। তার সেই যোগ্যতা নিজের ও অন্যের সমানভাবে উপযোগী হবে। যদি তা না হয়, তা হলে বুঝতে হবে; শিক্ষায় গলদ আছে।
উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থাও উন্নত। কিন্তু সমস্যা হলোÑ সেখানের শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও অভাব দেখা দিয়েছে নৈতিকতার, মানবতার; নিশ্চিত করতে পারেনি অন্যের নিরাপত্তা। দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলন তাই অবস্থান করে নিয়েছে শক্তভাবে; ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে নেই কোনো শান্তি। সেখানের মানুষও তাই উপায় খুঁজে ফিরছে প্রতিনিয়ত। নিজের অভাব যেখানে অপূরণীয়, সেখানে অন্যের অভাব ঘুচানো কঠিন নয় কি? এহেন পরিস্থিতির উপায় হতে পারে ধর্মীয় শিক্ষা।
সে ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে ইসলামী শিক্ষা। প্রতিটি ধর্মই নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারলেও ইসলাম যেহেতু সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক সর্বশেষ এবং পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, ইসলামী শিক্ষা তাই পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এ ধর্ম ও ধর্মীয় শিক্ষার একটি বিশেষ বিশেষত্ব হলো, ধর্মীয় সব শিক্ষা ও আচার-আচরণ তাওহিদের ওপর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। ওহির শুরুতেই তাই ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে...’ বলে এ ধর্মের অনুসারীদের নির্দেশ শিক্ষাকে অবশ্যম্ভাবী করে দেয়া হয়েছে। (সূরা আল আলাক ৯৬ : ১) উপরন্তু ইসলামী জ্ঞানের মূল দু’টি উৎস যথাÑ ‘কুরআন ও হাদিস অপরিবর্তিতভাবে আমাদের মাঝে উপস্থিত। এখানে জ্ঞানীদের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করা হয়েছে।’ (সূরা আল জুমার ৩৯ : ৯) অনুসারীদের বিশেষায়িত করা হয়েছে প্রতিনিধি (খলিফা) হিসেবে। (সূরা আল বাকারাহ, ২ : ৩০) তাদের দায়িত্বই হলো অন্য কোনো কিছুকে কিংবা ক্ষতি না করে প্রকৃতিকে যথাযথভাবে এভাবে কাজে লাগাবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ হুমকির মধ্যে না পড়ে। কোনো কারণ বা প্রয়োজন ছাড়া তাই একটি গাছের পাতা ছিঁড়তেও নিষেধ করা হয়েছে। নিষেধ করা হয়েছে সমুদ্রের মাঝে অবস্থানকারীকেও পানির অপচয় করতে। এভাবে প্রকৃতিকে শুধু রক্ষা করা হয়নি, বরং অন্যের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে তার অধিকার। এটি ইসলামী শিক্ষার অন্যতম আরেকটি মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় যে বিষয়গুলোকে সামনে রেখে গুণগত যে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, তা মানব চিন্তাপ্রসূত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে দেয়া সম্ভব নয়। মানব চিন্তার প্রকৃতি হলো তা তার নিজের, দল বা গোষ্ঠীর, সমাজ ও পরিবেশের ঊর্ধ্বে নয়। সে চিন্তা তাই পৃথিবীর বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর হয় না এবং হতে পারে না। অথচ সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক দেয়া বিধানগত শিক্ষাব্যবস্থায় অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রেখেই যুগোপযোগী করে দেয়া হয়। সেখানে সমাজ, রাষ্ট্রভেদে লক্ষ্যে পৌঁছতে কার্যকরী হবে এটি খুবই স্বাভাবিক। পবিত্র কুরআনে তাই আল্লাহ ঘোষণা করছেন, ‘আমি এ কিতাবে (কুরআনে) কোনো কিছুই ছেড়ে দেইনি (কোনো কিছুরই আলোচনা বাদ রাখেনি)।’ (সূরা আল-আনআম ৬ : ৩৮)
এখন এই কুরআনি শিক্ষাকে কাজে লাগানোর কার্যকরী উপায় বের করার দায়িত্ব আমাদের। এটি ঈমানী দায়িত্ব। মানবতার কল্যাণে এ কাজটি তখন হয়ে উঠবে ইবাদত। সত্যিকারের ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়ন হলে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবে ন্যায্য অধিকার। ন্যায়বিচার হয়ে উঠবে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। শান্তি সেখানে নিশ্চিত। আর একটি শান্তিপূর্ণ জাতিই কেবল অন্যের অধিকার নিশ্চিত করতে আত্মনিয়োগ করতে পারে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে সমাজে। অকল্যাণ আর ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারে গোটা বিশ্বকে। নিজের জীবনের চেয়ে অন্যকে গুরুত্ব দিতে পারলে দারিদ্র্য দূর হবে সমাজ থেকে। অন্যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রতি, স্বার্থপরতা, জুলুম, শোষণ, নির্যাতন হারিয়ে এমন একটি সমাজব্যবস্থা চালু হবে, যা চলতে থাকবে শেষ দিবস (কিয়ামত) পর্যন্ত। এটিই হওয়া উচিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সুনির্দিষ্ট উপায়। রাসূলুল্লাহ সা: ঘোষণা করছেন, ‘মুসলিম হলো ওই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদে থাকে।’ (সহিহ বুখারি) এটি ইসলামী শিক্ষার শিক্ষা। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করতে মুসলিম-অমুসলিম দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পদ্ধতি ও কৌশলগত পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
লেখক : প্রবন্ধকার

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল