উসওয়াতুন হাসানাহ
- অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক
- ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আল্লাহ বলেন, ‘(হে প্রিয় নবী!) নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত’। আমাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ আরো বলেন, ‘আল্লাহর রাসূলের (জীবনালেখ্যের) মধ্যে নিশ্চয় তোমাদের জন্য উসওয়াতুন হাসানাহ বা উত্তম (প্রশংসিত) আদর্শ নিহিত রয়েছে।’ একবার জনৈক সাহাবি মা আয়েশার রা: খিদমতে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর রাসূল সা:-এর চরিত্র সম্বন্ধে জানতে চাইলেন, উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা জবাবে বলেন, ‘কুরআনে যে আদর্শ ও চরিত্রের বর্ণনা পাওয়া যায়, হজরতের চরিত্রও ঠিক অনুরূপ।’ ইসলামি দুনিয়ার চতুর্থ খলিফা মহাবীর আলী রা:-এর ভাষায়Ñ ‘আল্লাহর হাবিব নিজের চরিত্র হতে তিনটি জিনিস দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন : ০১. তর্ক-বিতর্ক, ০২. অপ্রয়োজনীয় কথা, ০৩. বাহুল্য বলা। অন্যের বেলায়ও তিনটি জিনিস ত্যাগ করেছেন : ০১. কাউকে মন্দ বলতেন না, ০২. কারো অভ্যন্তরীণ ব্যাপার মুখে নিতেন না, তিন. কারো দোষ প্রকাশ করতেন না।
নবীজী ছিলেন যেমনি বিনয়ী, তেমনি মিষ্ঠভাষী। অতিরাগের মুহূর্তেও তিনি কোনো দিন কাউকে কটুকথা বলেননি। তার মধুময় ব্যবহারে শত্রুও মুগ্ধ হয়ে যেত। অসতর্ক মুহূর্তের তার মুখ থেকে কোনো দিন মিথ্যা কথা বের হয়নি। সত্যবাদিতার জন্যই আরববাসী তাকে ‘আল আমিন’ ‘আস সাদিক’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
রাসূলে করিম সা: ছিলেন সত্যিকারের সংসারী এবং আদর্শ সামাজিক ব্যক্তি। নিজেকে শ্রমিক বলতে তিনি গর্ববোধ করতেন। তিনি একাধারে প্রেমময় স্বামী, ¯েœহময় পিতা, ধৈর্যশীল সংসারী, দরদি বন্ধু, সফল ব্যবসায়ী, মহান আইন প্রণেতা, দক্ষ শাসক, দূরদর্শী রাজনীতিজ্ঞ, সর্বস্তরেই তিনি সবার ঊর্ধ্বে। তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে পরাক্রমশালী শত্রুদের পরাজিত করে নিজেকে সাহসী যোদ্ধা বলে প্রমাণিত করেছেন। বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে তিনি নিপুণ সেনাপতিরূপে অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
সব অবস্থাতে হজরত সা: নিজেকে সুখী মনে করতেন। কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েও খুশি মনে সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন। বাস্তবিক নবীজীর তুলনা স্বয়ং তিনিই। মানুষ যা কিছু সুন্দর ও মহৎ কল্পনা করতে পারে, নবীজী একক ছিলেন তার জ্বলন্ত আদর্শ। নিঃসন্দেহে স্র্রষ্টার সেরা সৃষ্টি তিনি। তিনিই আমাদের জন্য অনুকরণীয়-অনুসরণীয় একমাত্র ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’-‘সর্বোত্তম মহান আদর্শ’।
মহানবী সা: তার চারিত্র্যিক পরশপাথরের মাধ্যমে বিশ্ব সমাজকে সুন্দরভাবে পরিগঠন করতে প্রয়াস চালান। সামাজিক, রাজনৈতিক, অথনৈতিক বিশ্বে সঙ্ঘটিত করলেন এক সফল বিপ্লব। নৈতিকতা, সভ্যতা, শালীনতা, পবিত্রতা, শিষ্টতার অসংখ্য নীতি ও পদ্ধতি তার জীবন থেকে বের হয়ে বিশ্বের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক সমস্যার সমাধানে তিনি যে বিধান দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে বহু অর্থনৈতিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে তিনি যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন, তার মাধ্যমে আজ পর্যন্ত দুনিয়ার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় অনেকগুলো বিপ্লব সঙ্ঘটিত হয়ে গেছে এবং আজো হচ্ছে। ইনসাফ ও আইনের যে সব মূল নীতি তিনি রচনা করেছিলেন, সেগুলো বিশ্বের বিচারব্যবস্থা ও আইন তত্ত্বের চিন্তাধারাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং এখনো তার প্রভাব নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। মহানবী সা: মানুষকে যে আদর্শের প্রবাহে সিক্ত করেছিলেনÑ তা ছিল আল্লাহ প্রদত্ত এবং নির্ভেজাল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তার চরিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তিনি স্থান-কাল-সীমানার প্রভাবমুক্ত এক বিশ্বনেতা সার্বজনীন ও শাশ্বত আদর্শ। তার আদর্শের উপযোগিতা সময় ও অবস্থার ব্যারিকেড ছিন্ন করে শতাব্দী ও সহস্র্রাব্দের সীমানা পেরিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে- কাল থেকে কালান্তরে।
তাই বিশ্বের সামাজিক বিশৃঙ্খলার এই দিনে, রাজনৈতিক অস্থিরতার এই ক্ষণে, অর্থনৈতিক জটিলতার এই যুগে মহানবী সা:-এর শিক্ষার বড় প্রয়োজন। তার আদর্শকে দ্রবীভূত করে প্রতিটি ব্যক্তির প্রাণে ছড়িয়ে দিতে হবে। তার প্রচারিত আদর্শকে সামষ্টিকভাবে আকড়ে ধরে বিশ্ব সমাজটাকে নতুন করে গড়তে হবে। ব্যক্তি ও সামষ্টিক প্রচেষ্টায় মহানবী সা:-এর চিরসুন্দর, চিরভাস্বর ও চিরবিস্ময় শাশ্বত আদর্শকে ব্যক্তি থেকে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আসতে পারে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি।
লেখক : জাতীয় প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত ইমাম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা