সংবাদ যাচাইয়ের গুরুত্ব
- ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
- ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
মিথ্যা সংবাদ বলতে আমরা অসত্য, ভুল, বেঠিক প্রভৃতি সংবাদ বা তথ্যকে বুঝে থাকি। এটি দু’টি কারণে হতে পারে। ১. ইচ্ছাকৃত ও ২. অনিচ্ছাকৃত। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন কিংবা প্রচারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পক্ষান্তরে, অনিচ্ছাকৃত অসত্য বা মিথ্যা তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো উদ্দেশ্য নাও থাকতে পারে আবার থাকতেও পারে। এ রকম সংবাদ ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবনে পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য হওয়ায় দ্রুত সময়ে অধিক মানুষের কাছে তাই এ ধরনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে নিমেষেই। যে কারণে আধুনিক বিশ্বের সর্বস্তরের সব সমাজ ব্যবস্থায় চিন্তাশীল ও দায়িত্ববান ব্যক্তিরা তাই উৎকণ্ঠায় আছেন কিভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ এবং বন্ধ করা যায়। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই যেন কার্যকরী হচ্ছে না বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এ সংশ্লিষ্ট ছয়টি বিষয় জড়িত। যেমন : ১. তথ্য বা সংবাদ ২. সংবাদ রচনাকারী এবং প্রচারক ৩. উদ্দিষ্ট পাঠক বা প্রাপক ৪. মাধ্যম (যে মাধ্যম ব্যবহার করে এসব তথ্য সরবরাহ করা হয়) ৫. এসব তথ্যের প্রভাব যাদের জীবনে পড়ে এবং ৬. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ কিংবা বন্ধের জন্য নিয়োজিত। এই ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিই নিজ নিজ স্বকীয়তায় দায়বদ্ধ।
আইন করে কিংবা সাময়িক কিছু পদক্ষেপে এগুলো বন্ধ করা কঠিন। ধর্ম সেখানে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষ ইসলামের অনুসারী। তারা যদি তাদের ধর্মকে জেনে পালন করে, তাহলে এমন অপরাধের সাথে কখনো নিজেকে জড়াতে চাইবে না এটিই স্বাভাবিক।
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিটি সমস্যার টেকসই সুন্দর সমাধান দিয়ে থাকে। আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই যখন দেখি আধুনিক বিশ্ব যখন কোনো সমস্যাকে নতুন ভেবে তা নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে তখন ঠিক সেই বিষয়ে প্রায় ১৪৫০ বছর আগে ইসলাম গুরুত্বের সাথে আলোচনা করে মানব কল্যাণে সঠিক সমাধান দিয়ে দিয়েছে।
আল-কুরআনের ৪৯ নম্বর সূরা আল-হুজরাতের ৬ নম্বর আয়াতে বিষয়টিকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ, যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা তা যাচাই বাছাই করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।’
এখানে যে বিষয়গুলা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো :
পাপাচারী ব্যক্তি বলতে শুধু ব্যক্তি নয় বরং তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যে বা যা কিছুই আমাদের কাছে মিথ্যা বা বানোয়াট হিসেবে পরিচিত তা অন্তর্ভুক্ত হবে।
দ্বিতীয়ত, যে মাধ্যম ব্যবহার করা হয় সেটি যদি এ রকম আগেও করে থাকে বলে প্রমাণিত হয় তবে সে ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যাদের কাজই হলো উদ্ভট সংবাদগুলোকে আকর্ষণীয় করে পরিবেশন করা কিন্তু তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না।
যে ব্যক্তির কাছে সংবাদ পৌঁছাবে তার প্রথম কাজই হলো সত্যতা যাচাই করা এবং সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে না নেয়া কিংবা অন্যের কাছে প্রচার না করা।
তথ্যটি যাদের জীবনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হয় তাদের রক্ষা কিংবা সতর্ক করা জরুরি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কর্তাব্যক্তি যারা এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন তারা সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকবেন যেন কোনো ভুল পদক্ষেপ না নিয়ে বসেন। এ ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় হতে পারেÑ ক. এসব সংবাদের ভিত্তিতে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া এবং খ. এসব সংবাদের তৈরিকারক, প্রচারক ও প্রচার মাধ্যমকে তা বন্ধের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেয়া। সবচেয়ে বেশি যেটি লক্ষ করা যায় তা হলো, এসব সংবাদ যখন তাদের নিজেদের কোনো উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হয় তখন তারা নিশ্চুপ থাকেন আবার যখন তাদের বিরুদ্ধে যায় তখনই তাদের অতি উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। এটি মোটেও উচিত নয়।
এসব ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের সূরা আন-নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতের বাস্তবায়ন করতে পারলেই কেবল সমাধান করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। এখানে আল্লাহ বিধান করেন এভাবে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান করো, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের যদি বিপক্ষে যায় তবুও। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে নিজেদের প্রবৃত্তির (কামনা-বাসনা) অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের সব কাজকর্ম সম্পর্কেই অবগত।’
পবিত্র কুরআনের অন্য একটি আয়াতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’
পরিশেষে বলব, এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ধর্ম কী বলে তা সম্পর্কে অবহিত করা জরুরি। অন্যদের পাশাপাশি মসজিদের ইমাম ও খতিবদেরই দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের চার লাখ মসজিদে সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও মুসল্লিদের পরামর্শ দেয়ার সুযোগ পান তারা। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবেই কনফারেন্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সম্প্রতি আমেরিকান অ্যাম্বাসি ও মুভ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে একটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা হলো সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে উৎকণ্ঠার পাশাপাশি পরিত্রাণে উপায় খুঁজে বের করতে তারা দারুণ উৎসাহী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইয়ুথরা বেশি অ্যাকটিভ, তাই সচতেনতায় তাদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণকেও নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : শিক্ষাবিদ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা