প্রতিবেশীর হক
- ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করি। মানুষকে নিজের প্রয়োজনের তাগিদেই সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে হয়। নানা করণে সমাজবদ্ধভাবে বাস করে থাকি। প্রতিবেশীর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা: বলেছেন- ‘আশপাশের ৪০ ঘর পর্যন্ত প্রতিবেশী বলে বিবেচিত হবে’। [আলকাফি : ২/৬৬৯ হা. ১, ২. মিশকাতুল আনওয়ার : হা. ২১৪, মকাসেদো হাসানা : হা. ৩৪৯] আর এই পতিবেশীর প্রতি আমাদের রয়েছে অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সা: একাধিক হাদিসে প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেনÑ আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজে পেটভরে খায়, সে মুমিন নয়।’ [মিশকাত] এ হাদিসের আলোকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, প্রকৃত মুমিন হতে হলে প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে আছে রাসূল সা: হজরত আবু জর রা:-কে বলেন ‘হে আবু জর, যখন তুমি তরকারি রান্না করবে, তাতে একটু বেশি করে পানি ঢেলে দিও এবং তা দ্বারা পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ রেখো’। [মুসলিম শরিফ] প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কতটুকু তা এ হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, একজন লোক নবী কারিম সা:-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:, অমুক মহিলা বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করে, নফল রোজা রাখে, দান-খয়রাত করে, এসব বিষয়ে সে বেশ খ্যাত। কিন্তু সে প্রতিবেশীকে মুখের দ্বারা কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ সা: তার পরিণাম সম্পর্কে বললেন ‘ সে জাহান্নামি’ ওই ব্যক্তি আবারো বললÑ হে রাসূল সা:, অমুক স্ত্রীলোকের সম্বন্ধে এ কথা বলা হয় যে, সে (ফরজ ও ওয়াজিব আমল পুরোপুরি আদায় করে তবে) নফল রোজা কখনো কখনো রাখে, নামাজ কম আদায় করে এবং পনিরের যৎসামান্য পরিমাণ দান-খয়রাত করে। কিন্তু সে মুখের দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। কী পরিণাম হবে? উত্তরে রাসূল সা: বললেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মিশকাত শরিফ]
হজরত উকবা বিন আমির রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে দুই ব্যক্তির মুকাদ্দমা কিয়ামতের দিন সবার আগে পেশ করা হবে, তারা হবে প্রতিবেশী।’
প্রতিবেশীর সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রাখতে হবে। প্রতিবেশীকে মাঝেমধ্যে কিছু উপহার প্রদান করা উচিত। এতে দু’জনের মধ্যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে। যার যা সামর্থ্য আছে, সে অনুযায়ী উপহার দিতে হবে। তবে অন্যের উপহারকে কোনোভাবেই তুচ্ছ মনে করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘হে মুসলিম রমণীরা, কোনো প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীর দেয়া কোনো উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে। যদিও তা একটি ছাগলের সামান্য পায়াও হয়।’ [মুসলিম] প্রতিবেশীকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়াতে আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন। প্রতিবেশীদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ থাকা ইসলাম কামনা করে না। বরং প্রতিবেশীরা পরস্পর সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতার সাথে বসবাস করবেন, ইসলাম এটাই কামনা করে। আমরা প্রত্যেককে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত না করলে, সমাজে শান্তি নষ্ট হয়ে যাবে। অশান্তিতে ভরে যাবে সমাজ তথা দেশ এবং সারা দুনিয়া। আমার দ্বারা আমার প্রতিবেশী যদি ভালো আচরণ না পায়, তাহলে আমার ঈমানের পরিচয় কোথায়? আমার মধ্যে কতটুকু মনুষ্যত্ব আছে? প্রকৃত ঈমানদার মানুষের দ্বারা কখনো তার প্রতিবেশী কষ্ট পেতে পারে না। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! ওই ব্যক্তির ঈমান নেই। প্রশ্ন করা হলোÑ হে আল্লাহর রাসূল সা:, কার ঈমান নেই। তিনি ইরশাদ করেন, ‘যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়’। [বুখারি শরিফ, ও মুসলিম শরিফ]
লেখক : প্রবন্ধকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা