২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অসিলার বিধান

-

দোয়ার েেত্র আমরা বিভিন্ন সময় নবী অলিদের মাধ্যম বা অসিলা হিসেবে ব্যবহার করি, যা আদৌ কুরআন-সুন্নাহ কর্তৃক স্বীকৃত নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, দোয়া একটি ইবাদত যা অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী হতে হবে। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য অসিলা বা মাধ্যম প্রয়োজন নতুবা আল্লাহ তা কবুল করবেন না, এমন আকিদা পোষণ করা জায়েজ নেই। আমল সরাসরি আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়, কোনো অসিলার প্রয়োজন হয় না। আল্লাহ পাক বলেনÑ ‘তাঁরই (আল্লাহর) দিকে পবিত্র বাণীগুলো আরোহণ করে এবং সৎকর্ম একে উন্নীত করে।’ (সূরা ফাতির : ১০)
সুতরাং আমল সরাসরি আল্লাহর দরবারে চলে যায় কোনো অসিলার প্রয়োজন হয় না। দোয়া সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনÑ ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করি’। (সূরা আল মুমিন : ৬০)
‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করেÑ বলুন, আমি তাদের অতি নিকটে। যারা আমাকে ডাকে, আমি তাদের ডাকে সাড়া দেই’। (সূরা বাকারাহ : ১৮৬)
আল্লাহ পাক আমাদের যত দোয়া শিা দিয়েছেন, তাতে কোথায়ও তিনি অসিলা বা মাধ্যম ধরে দোয়া করতে শিা দেননি। আদম আ:-কে আল্লাহ তায়ালা যে দোয়াটি শিা দিয়েছিলেন তা ছিলÑ হে আমাদের রব! আমাদের নিজেদের ওপর আমরা জুলুম করেছি, যদি তুমি আমাদের মা না করো এবং আমাদের রহম না করো, তাহলে আমরা তিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো। এখানে কাউকে অসিলা বা মাধ্যম বানিয়ে আদম আ: দোয়া করেননি।
মহানবী সা: আমাদের যত দোয়া শিখিয়েছেন, তাতেও কাউকে অসিলা বা মাধ্যম বানিয়ে দোয়া করতে বলেননি। যেমন আমাদের শিখানো কয়েকটি দোয়া এরকমÑ ১. হে আল্লাহ! আমাদের বাড়িয়ে দাও, কমিয়ে দিও না। আমাদের দান করো, মাহরুম করো না। আমাদের সম্মানিত করো, অপমানিত করো না। ২. হে আল্লাহ! এমন এলম থেকে পানাহ চাই, যে এলম কোনো উপকারে আসে না। এমন কলব থেকে পানাহ চাই, যে কলব তোমাকে ভয় করে না। তবে দোয়া করার েেত্র কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কিছু অসিলা বা মাধ্যম রয়েছে যা অবলম্বনে দোয়া করা যায়। যেমনÑ ১. ঈমানের অসিলা দিয়ে দোয়া করা। আল্লাহ পাক নিজেই তা আমাদের শিখিয়েছেন। যেমনÑ ‘হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আমাদের মা করো এবং জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও’। (সূরা আলে ইমরান: ১৬)
২. আল্লাহ পাকের নাম ও গুণাবলির অসিলা দিয়ে দোয়া করা। আল্লাহ বলেনÑ ‘আল্লাহর অনেক সুন্দর নাম রয়েছে, সে নামের মাধ্যমে তোমরা দোয়া করো’। (সূরা আরাফ : ১৮০)
যেমন এভাবে বলাÑ ‘হে আল্লাহ! তোমার গাফফার নামের অসিলায় আমাদের মা করো।’
৩. নিজ আমলের অসিলা দিয়ে আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করা। যেমন এভাবে বলোÑ ‘হে আল্লাহ! আমি যে সালাত আদায় করেছি এর অসিলায় আমাকে মা করে দাও।’ সহিহ বুখারিতে আছে, বনি ইসরাইলের তিন ব্যক্তি গুহায় আটক হওয়ার পর প্রত্যেকেই নিজ নিজ উত্তম আমলের অসিলা দিয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করে তাদের গুহা থেকে মুক্তি দান করেছিলেন। ৪. কোনো নেক ব্যক্তির কাছে দোয়া চাওয়া। যেমনÑ সাহাবিগণ বিভিন্ন সময় রাসূল সা:-এর কাছে দোয়া চেয়েছেন। এমনকি রাসূল সা: নিজেও সাহাবিদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। যেমনÑ হজরত ওমর রা: ওমরাহ করার সময় রাসূল সা: তাঁর কাছে দোয়া চেয়েছেন। রাসূল সা: বলেনÑ ‘হে আমার ভাই! তুমি দোয়ায় আমাদেরকে ভুলে যেও না’। (আবু দাউদ)
কোনো নেক বান্দা যদি ওই মজলিসে উপস্থিত থাকে, তাহলে তাকে অসিলা বা মাধ্যম করে দোয়া জায়েজ আছে। হজরত ওমর রা: এভাবে দোয়া করেছিলেনÑ ‘হে আল্লাহ! তোমার রাসূল সা: যত দিন আমাদের মাঝে ছিলেন, তত দিন তাঁকে অসিলা করে আমরা তোমার কাছে দোয়া করতাম। এখন তোমার রাসূল সা: দুনিয়াতে নেই, তাঁর চাচা আব্বাসকে রা: অসিলা করে দোয়া করছি, হে আল্লাহ! তাঁর অসিলায় আমাদের বৃষ্টি দাও’। (বুখারি)
উপরি উক্ত চার উপায়ই হলো কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক দোয়া করার নিরেট উপায়। অন্য কোনো উপায়ে দোয়া করা জায়েজ নেই। যেমনÑ যদি কেউ এভাবে বলে হে আল্লাহ, তুমি উমুক ওলির অসিলায় আমাকে মা করো। তাহলে তা জায়েজ নেই। সে জন্য নবী বা ওলিকে অসিলা করে দোয়া করা যাবে না। কারণ আল্লাহ পাক বা রাসূল সা: আমাদের এভাবে দোয়া করতে শিা দেননি। সাহাবিরা রা: রাসূল সা:-কে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসা সত্ত্বেও তাঁরা রাসূলকে সা: অসিলা বা মাধ্যম করে দোয়া করেননি। এমনকি যখন মদিনায় দুর্ভি হয়েছিল, তখনো রাসূলের সা: অসিলা দিয়ে কেউ দোয়া করেননি। অথচ তাঁর কবর তাঁদের কাছেই ছিল।
মৃত ব্যক্তিকে কোনোভাবেই অসিলা বা মাধ্যম করা যাবে না। কেননা মৃত ব্যক্তিকে অসিলা করার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ কোনো দলিল নেই। যদি কেউ মনে করেন, এদের অসিলায় বা মাধ্যমেই দোয়া আল্লাহর কাছে পৌঁছে এবং কবুল হয়, তাহলে শিরক হবে। কেননা আরবের মুশরিকরা তাদের মূর্তি ও দেবদেবীর ব্যাপারে এ বিশ্বাসই পোষণ করত। যেমন আল্লাহ পাক বলেন, ‘যখন মুশরিকদের জিজ্ঞেস করা হয় কে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন? কে আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন? কে তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের রব? উত্তরে তারা বলে আল্লাহ। যখন তাদের প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তোমাদের মূর্তি পূজার উদ্দেশ্য কী? তারা বলে, তারা আমাদের আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেবে এবং তারা আমাদের সুপারিশ করবে।
বস্তুত আল্লাহর কাছে আমল পৌঁছাতে হলে অন্যের অসিলা বা মাধ্যম প্রয়োজন বা দোয়া করতে হলে অন্য কোনো ব্যক্তিকে অবলম্বন করে আল্লাহর কাছে দোয়া পৌঁছাতে হবে এ ধরনের আকিদাহ পোষণ করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement

সকল