২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসলাম ও নৈতিকতা

-

ইসলাম অর্থ শান্তি ও স্রষ্টার প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। ইসলাম নতুন ধর্ম নয়। মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম আ:-এর জীবনবিধান থেকেই ইসলাম শুরু। ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সর্বোত্তম শান্তি ও কল্যাণ। আর মুসলমান কথাটির অর্থ হলো সর্বোত্তম শান্তি ও কল্যাণ স্থাপনকারী এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে আত্মসমর্পণকারী। ইসলাম মানবতার ধর্ম। সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও সাম্যের সেতুবন্ধ ও মাইলফলক হলো ইসলাম। ন্যায়, সত্য ও ত্যাগের স্মরণিকা ইসলাম। ইসলাম মহান আল্লাহ পাকের দেয়া এক পূর্ণাঙ্গ পরিপূর্ণ ও প্রগতিশীল জীবনব্যবস্থা। ইসলাম ধর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান। ইসলাম খুব সহজ ধর্ম। এতে জটিলতার কোনো অবকাশ নেই। ইসলাম সর্বদা শান্তির কথা বলে। সংঘাত সৃষ্টির জন্য মানুষ অনেক সময় ধর্মকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। ধর্মের মধ্যে বিভেদ ধর্মের মূল চেতনাকে পাল্টে দেয়। সবাই যদি সঠিকভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলাম ধর্মকে অনুসরণকরত জীবনে বাস্তবায়িত ও প্রতিফলিত করতে পারে তাহলেই বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ইসলাম ভুল পথে ব্যবহার করার মতো ধর্ম নয়। যদি ভুল পথে ব্যবহৃত হয় তা ধ্বংসাত্মক শক্তিতে পরিণত হয়। ধর্মের মূল চেতনাকে পাশ কাটানোর ফলে ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ চলে। ইসলাম ধর্ম কখনো সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। আর ইসলাম কখনো অসুস্থ ও অসহায় নয়। ইসলামকে অমান্য করা হয় বলেই মানুষ আজ অসুস্থ, অসহায়, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত।
মানুষের সহজাত ও মৌলিক প্রবৃত্তি ও মনোবলই হলো নিয়ম। নিয়ম মেনে চলা বা রক্ষা করা থেকেই নীতি, মূলনীতি বা প্রণালী। অর্থাৎ নিয়মের মূলতত্ত্ব ও উপাদানই হলো নীতি।
নীতির প্রতি মূল্যায়ন, সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন থেকেই আসে নীতিবোধ ও আদর্শিক গুণাবলি। আর এই নীতিবোধ থেকেই নৈতিকতা। অর্থাৎ নিয়ম থেকে নীতি, আর নীতি থেকে নৈতিকতা। নৈতিকতা হলো নীতিবোধ ও গুণাবলির দর্শন অর্থাৎ জীবন দর্শন। জীবনকে সুপথে সুকাজে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বৈশল্যকরণী। নীতি নৈতিকতা মূলত একটি প্রশিক্ষণ। এটা শেখার জন্য ব্যবস্থা, অনুশীলন ও চর্চার প্রয়োজন জরুরি। মানুষের জীবনের সততা, মহানুভবতা, উদারতা, ন্যায় পরায়ণতা, সভ্যতা, সাধুতা, অখণ্ডতা, একত্রতা, পূর্ণতা সর্বোপরি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, চরিত্র, মহত্ত ও আদর্শিক গুণাবলির সংমিশ্রিত আত্মশুদ্ধির স্বর্ণফসল হলো নৈতিকতা। জীবনচেতনার প্রথম সূর্যসিঁড়ি হলো নৈতিকতা। নৈতিকতা মানুষের জীবনের স্বচ্ছতার দিগন্তবিস্তারী প্লাবন ডেকে এনে দেয়। তাই মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণকেই নৈতিকতা বলা হয়।
নৈতিকতা আত্মার অস্তিত্বের ও আত্মোপলব্ধির ক্ষেত্রে নিবেদিত ও উৎসর্গীকৃত। দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও প্রধান অবলম্বন হলো নৈতিকতা অর্জন। নৈতিকতা অর্জন ব্যতিরেকে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নির্মল করা কখনো সম্ভব নয়। নৈতিকতা সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্মমতার আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য এক সাহসী প্রতিবাদী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। নৈতিকতা হলো আত্মশুদ্ধি, আত্মার মুক্তি ও শান্তির বাতিঘর। মানবিক গুণাবলি বিকশিত হওয়ার একমাত্র পথ নৈতিকতা। মানুষের ক্যারিয়ার গড়ার মাধ্যম হলো নৈতিকতা। জাতির সর্বক্ষেত্রে অবক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই নৈতিকতা। সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয় প্রতিরোধে রুচিশীল নীতিবান ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের শান্তির ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে কাতারবদ্ধ হতে হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠান নৈতিকতা অনস্বীকার্য। কারণ ইসলাম হচ্ছে একটি প্রাক্টিসিং ধর্ম। সর্বক্ষেত্রে সবাইকে নৈতিকতার চর্চার বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশে আজ সতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নৈতিকতার দুর্ভিক্ষ চলছে। নৈতিক সঙ্কটের আবর্তে কিষ্ট ভাগ্যাহত মানুষ আমরা। জীবনের পরতে পরতে একটা সত্য অবিরত আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে যায় তা হচ্ছে ইসলাম ধর্মের মধ্যে আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা সর্বাত্মকভাবে গ্রহণ করতে পারলে পৃথিবীটা প্রকৃত সুখের ও শান্তির হয়ে উঠত। নৈতিকতা সেই তাগাদা ও সেই শিক্ষাই নিয়ে আসে।
লেখক : শিক্ষাবিদ


আরো সংবাদ



premium cement