হজের প্রবর্তক আদম আ:
- ফয়সল আহমদ জালালী
- ২৯ জুন ২০১৮, ০০:০০
কাবাঘর নির্মাণ, এর তাওয়াফ, হজ পালন সৃষ্টির আদিকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। আদি মানব ও মানবী হজরত আদম আ: ও মা হাওয়া আ: হজ পালন করেন। হজের কিছু কাজ তাঁদের অনুকরণে তাঁদের সন্তানেরা আজো পালন করে যাচ্ছেন। কাবাঘর প্রথম নির্মাণ করেছিলেন কে? ফেরেশতারা না আদম আ:? এ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে বিজ্ঞজনের মাঝে। ভিন্নতা রয়েছে বর্ণনাতেও।
পৃথিবীর প্রথম নির্মিত ঘর : দুনিয়ার বুকে নির্মিত প্রথম ঘর কাবা শরিফ। ইরশাদ হচ্ছেÑ ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো মক্কায়, তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি।’ (আলে ইমরান: ৯৬) অনেক মুফাসসির মনে করেন, বসবাস ও ইবাদত উভয় দিক দিয়ে কাবা ছিল মানবসভ্যতার প্রথম ঘর। ভিন্ন মতে, এটি ছিল ইবাদতের নিমিত্ত নির্মিত প্রথম ঘর। হজরত আদম ও মা হাওয়া আ: দুনিয়ায় অবতরণের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দিগন্তে যাত্রা করেন। অবশেষে মক্কায় তাঁদের মধ্যে মিলন ঘটে। আরাফা, মুজদালিফা, মিনা ও হাজরে আসওয়াদের ইতিহাস তাঁদের সাথেই সম্পর্কিত। বলা হয়, আরাফায় হজরত আদম ও মা হাওয়ার মধ্যে দুনিয়ায় অবতরণের পর প্রথম পরিচয় ঘটে। মুজদালিফায় তাঁদের মাঝে আলাপ সংঘটিত হয়। মিনায় হজরত আদম আ:-এর আকাক্সা পূর্ণ হয়।
আরাফাহ : এটি একটি স্থানের নাম। এখানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ কাজ। এখানে অবস্থান করা না হলে হজ আদায় হয় না। ‘আরাফ’ ধাতু থেকে আরাফাহ শব্দের উদ্ভব। অনেক তাত্ত্বিক মনে করেন, এখানে হজরত আদম ও মা হাওয়ার মাঝে পৃথিবীতে অবতরণের পর পরিচয় ঘটেছিল বলে আরাফাহ নামে তা প্রসিদ্ধ। (মোল্লা আলী কারী, মিরকাত, পাদটীকা সুনানু আবু দাউদ প্রথম খণ্ড, পৃ: ২৬৫)।
মুজদালিফা : এটি ইজদিলাফ শব্দ থেকে উদগত। এর অর্থ একত্র হওয়া, পাশাপাশি হওয়া। হজের একটি ঐতিহাসিক স্থানের নাম হলো মুজদালিফা। স্থানটি এ নামে পরিচিতি লাভের কারণ সম্পর্কে অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত হলো, এখানে এসে হজরত আদম ও মা হাওয়া একত্র হয়েছিলেন। (আল আসকালানি, ফাতাহুল বারি, বরাত পাদটীকা সুনানু আবু দাউদ, প্রথম খণ্ড. পৃ: ২৬৭)।
মিনা : এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। হজের প্রধান কাজগুলো এখানে অবস্থান করে আদায় করা হয়। এর নামকরণের মাঝেও আদম আ:-এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। জিব্রাইল আ: এখানে এসে আদম আ:-এর কাছ থেকে বিদায় নিতে চাইলেন। জিব্রাইল আ: তাঁকে বললেন, তুমি কিসের কামনা করো। আদম আ: বললেন, আমি জান্নাতের তামান্না করি। এ ‘তামান্না’ শব্দ থেকে মিনা পদের উৎপত্তি। (আইনি, উমদাতুলকারি, বরাত পাদটীকা হিদায়া প্রথম খণ্ড. পৃ: ২৪৪)।
জিব্রাইলের নির্দেশে আদম ও হাওয়ার কাবা নির্মাণ : ফেরেশতাগণ কর্তৃক প্রথমে কাবা নির্মিত হয়। অতঃপর জিব্রাইল আ: হজরত আদম ও মা হাওয়াকে তা নির্মাণের নির্দেশ দেন। তাঁরা কাবা নির্মাণের পর আল্লাহর নির্দেশে এর তাওয়াফ করেন। অতঃপর আদমপুত্র শিস আ: কাবা মেরামত করেন। বহুকাল পর হজরত নূহ আ: কাবায় হজ পালন করেন। হজরত আদম কাবা নির্মাণ করতে পাঁচটি পাহাড়ের পাথর ব্যবহার করেছিলেন। যেগুলো লুবনান, তুরে জাইতা, তুরে সায়না, আল জুদি ও হেরা। (আবদুর রাজ্জাক, আল-মুসান্নাফ, মুহিব আত-তাবারি, শিফাউল গিরাম প্রথম খণ্ড. পৃ: ৯২)। বিশিষ্ট তাবেয়ি মুজাহিদ বলেন, হিন্দ অঞ্চল থেকে আদম আ: পদব্রজে ৪০ বার হজব্রত পালন করতে গিয়েছিলেন। তিনি এত দীর্ঘদেহী ছিলেন যে, তার একেকটি পদক্ষেপ তিন দিনের পথ ছিল। (সিরাত বিশ্বকোষ, ইফা, প্রথম খণ্ড. পৃ: ১০৪)।
হাজরে আসওয়াদ : হাজরে আসওয়াদ মানে কালো পাথর। এটি প্রথম দিকে ছিল হাজরে আবয়াদ বা সাদা পাথর। কালক্রমে পাপীতাপীর পাপ গ্রাস করে তা কালো রূপ ধারণ করে। এটি একটি জান্নাতি পাথর। হজরত আদম আ: জান্নাত থেকে নেমে আসার সময় সেটিকে সাথে নিয়ে আসেন। (সুনানু তিরমিজি প্রথম খণ্ড. পৃ: ১৭৭, আজরাকি, তাওয়ারিখে মক্কা, পাদটীকা ঐ)। জান্নাতি এ পাথরটির ইতিহাস আদম আ:-এর সাথে সম্পৃক্ত, এটি এখনো কাবাঘরের সাথে যুক্ত রয়েছে। তাওয়াফকালে তাতে চুমো খাওয়ার জন্য হাজীগণ প্রাণপণ চেষ্টা করেন। আদিকাল থেকে তা চলে আসছে।
বায়তুল্লাহর হজ করেছিলেন সব নবী : এ জগতে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাদের সঠিক সংখ্যা কেউ জানে না। সংখ্যার সাথে ঈমান-আমলের কোনো সম্পর্ক না থাকায় ইসলামে তা গৌণ। এক লাখ বা দুই লাখ নবীর সংখ্যা গণনা করা নিছক ধারণা মাত্র। এ নবীগণ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রেরিত হয়েছিলেন। তবুও আল্লাহ তায়ালা দু-তিনজন ছাড়া সব নবী-রাসূলকে কাবা শরিফে হজ পালনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ দুই বা তিনজন অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকায় হজ করতে পারেননি। এ ব্যাপারে ‘উরওয়াহ ইবন জুবায়র রা:-এর বর্ণনাটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, সব নবীই হজ পালন করেছিলেন। তবে হুদ ও সালেহ আ:-এর বিষয়টি ভিন্ন। নিজ নিজ উম্মতের কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তাদের ইন্তেকাল হয়। নূহ আ: হজ করেন; কিন্তু তার সময়কালের প্লাবনে কাবাঘর আক্রান্ত হয়। ইব্রাহিম আ: পরবর্তীকালে এ ঘরের সন্ধান লাভ করলে তৎপরবর্তী সব নবী-রাসূল কাবার হজ করেছিলেন (বায়হাকি পঞ্চম খণ্ড. পৃ: ১৭৭, হাদিস নম্বর ১০১২২)।
আবু মূসা আল আশয়ারি রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘রাওহা’ দিয়ে ৭০ জন নবী যাত্রা করেছিলেন, তাদের মধ্যে মূসা আ:ও ছিলেন। আবা পরিহিত, নগ্ন পা বিশিষ্ট এসব নবীর গন্তব্য ছিল আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ। (তাবরানি বরাত আত-তারগিব ওয়াত তারহিব দ্বিতীয় খণ্ড.পৃ: ১৮০)। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মূসা আ: লাল ষাঁড়ের ওপর সওয়ার হয়ে কুতওয়ানি জামা পরে হজ করেছিলেন। (তাবরানি বরাত আত তারগিব ওয়াত তারহিব গ্রাগুক্ত)।
মাকামে ইব্রাহিম : ইব্রাহিম আ: যেই পাথরটিতে দাঁড়িয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন, তা এখনো অবিকৃত রয়েছে। তাঁর পদচিহ্ন বিশিষ্ট পাথরটি অতি যতেœ কাবার দরজার সামনে এখনো সংরক্ষিত। এখানে সালাত আদায় করার জন্য মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। মক্কা বিজয়ের পর কাবাঘর থেকে রাসূলুল্লাহ সা: ইব্রাহিম আ:-এর মূর্তি অপসারণ করেছিলেন। জমজম, সাফা-মারওয়াহ, মিনা ও জামারাহ ইত্যাদি ঐতিহাসিক চিহ্নাদি থাকা সত্ত্বেও ইব্রাহিম আ:-এর মক্কায় আগমনকে অস্বীকার করা চরম বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ছাড়া অন্য কিছু নয়, যা ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা করে থাকে। বিকৃত বাইবেলে ইব্রাহিম আ:-এর মক্কায় আগমনকে অস্বীকার করা হয়েছে। এর চেয়ে হাস্যকর কোনো কথা পৃথিবীতে অন্য কিছু আছে বলে আমার জানা নেই।
লেখক : মুহাদ্দিস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা