ইসলামি বাজার কৌশলের মৌলিক হাতিয়ার
- ড. এম উমর চাপরা
- ২৯ জুন ২০১৮, ০০:০০
ইসলাম বাজার কৌশলের মৌলিক হাতিয়ারগুলোকে (মুনাফা অর্জন, ব্যক্তিগত সম্পদ, প্রতিযোগিতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিকেন্দ্রীকতা) স্বীকৃতি দিয়েছে এই মর্মে যে, এগুলো দ্বারা দক্ষতা সৃষ্টি করা যায়। ইসলামি কৌশল এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছে যে, উন্নয়নের প্রাথমিক উপায় এবং শেষ কথা হচ্ছে মানুষ। মানুষেই বাজার কৌশলের ব্যবহারকারী। সুতরাং সে মানুষকে আগে যথেষ্টরূপে পরিশুদ্ধ করতে হবে, যেন তারা বাজার কৌশলকে কাজে লাগিয়ে তাদের নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারে সমগ্র সমাজের কল্যাণ বিবেচনায় রেখে। বিষয়টি অনেকটা সেনাবাহিনীকে বন্দুক সরবরাহ করার মতো।
সেনাবাহিনীতে কেউই ইচ্ছামতো বন্দুক ব্যবহারে স্বাধীন নয়। প্রত্যেকেই কিছু নিয়মের অধীনে বন্দুক চালনা করে থাকে এবং এমনিভাবে সেনাবাহিনীর সামগ্রিক শৃঙ্খলা বন্দুকের যথাযথ ব্যবহারকে নিশ্চিত করে তোলে। অনুরূপভাবে, যখন প্রতিযোগিতা স্বীয় স্বার্থকে সীমিত করে দেয়, তখন উদ্যোক্তাদের আপন স্বার্থ বৃদ্ধি সন্তর্পণে আপনা থেকেই সংযত হতে পারে, যদি তারা তাগিদ অনুভব করে যে, এমন কাজ তারা করবে না যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
ব্যক্তির নৈতিক সংস্কার সাধন করতে হবে যেন তার মধ্যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি সর্বক্ষণ কাজ করে। ইসলাম শুধু নৈতিক সংস্কারের মধ্যেই নিজেকে সীমিত রাখেনি। ইসলাম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পদ্ধতির মধ্যে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সন্নিবেশিত করেছে যেন সব দু®প্রাপ্য সম্পদ আর্থসামাজিক ন্যায়ের প্রয়োজন অনুসারে হতে পারে।
অর্থনীতিকে ইসলামীকরণ মানে অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান ও সরকারের আচরণকে ইসলামি অর্থনৈতিক কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে শুদ্ধ করা। এ প্রক্রিয়া বাজারব্যবস্থাকে মানবীয় করে তুলবে এবং ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সরকার ও বাজারব্যবস্থাকে ইসলামি জীবনব্যবস্থার লক্ষ্য অর্জনে ইতিবাচক অবদান রাখতে সহায়তা করবে, অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকাকে উন্নত ও শক্তিশালী করে তুলবে।
সুতরাং মুসলিম দেশগুলোতে বিরাজমান বর্তমান বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ন্যায়বাদী উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে বাজারব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে একমাত্র বিকল্প ব্যবস্থা হচ্ছে ওই দেশগুলোর অর্থনীতিকে ইসলামীকরণ। বর্তমান বৈষম্য ইসলামীকরণের ফলে শুধু বিদূরিত হবে না, বরং ইসলামি শরিয়তের লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখবে। ব্যক্তি-স্বার্থ, ব্যক্তিগত সম্পদের অধিকারী হওয়া এবং বাজার নির্ধারিত মূল্য ইত্যাদি বিষয়গুলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অর্থনীতির এসব উপাদান অন্য বিষয়গুলোর প্রভাবে অধিকতর মানবীয় হয়ে উঠবে।
এসবের মধ্যে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ধারণা মানুষের স্বার্থকে ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়া থেকে পরকালের অনন্ত জীবন পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে। এ ধারণাটি ব্যক্তিস্বার্থকে সমাজকল্যাণের আওতায় লালন করতে ব্যক্তিকে উৎসাহিত করে। এসব কিছু নৈতিক স্বচ্ছতার সাথে একত্র হয়ে ব্যক্তি ও সরকারের পণ্য ক্রয়ের ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রিত করবে। অর্থাৎ অনাহুত ভোগ থেকে বিরত রাখবে। ফলে প্রচুর সম্পদ ভোগ-ব্যয়ের হাত থেকে বেঁচে যাবে। বাজারমূল্য নির্ধারিত হওয়ার বাপারে যখন স্বচ্ছতা চলে আসবে, তখন প্রচুর সম্পদ উদ্বৃত্ত হয়ে পড়বে; যা দিয়ে সামাজিক সাধারণ চাহিদা পূরণ তো করা যাবেই, এমন কি বর্ধিত হারে সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও রফতানি করা যাবে। প্রকৃত চাহিদাভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থা এবং সম্পদের ইনসাফপূর্ণ বণ্টনের ফলে উন্নততর দক্ষতা সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। তা ছাড়া বর্ধিত সরবরাহ এবং নি¤œমূল্য নিশ্চিত হতে পারে।
ভূমি সংস্কার এবং ুদ্র ও ছোট শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে এবং ইসলামি শিক্ষার আলোকে সনাতনী অর্থ ব্যবস্থার পুনর্গঠনের মাধ্যমে সম্পদ ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা থেকে বিরত রাখা, আত্মকর্ম সংস্থানমূলক সুযোগ বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাস করা যেতে পারে। ইনসাফপূর্ণ উপায়ে সম্পদ বিতরণ এবং অভাব পূরণের মাধ্যমে উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানবসম্পদের অধিকতর ব্যবহার এবং উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে মানুষের শক্তি-সামর্থ্য সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলা যাবে। মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাওয়া এবং বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ক্রমহ্রাসমান উন্নয়ন এবং কল্যাণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
এসব কিছুর পরও গরিবের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। তবে কিছু ভর্তুকি দেয়ার মাধ্যমে গরিবের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে না। বরং সংগঠিত উপায়ে নিবিড়ভাবে সরকার ও সামাজিক সংস্থাগুলো থেকে ত্রাণকার্যক্রম গরিবের মধ্যে পরিচালনা করতে হবে। এই ত্রাণ কর্মসূচির আর্থিক উৎস হবে জাকাত, দান-খয়রাত এবং বাজেটে সম্ভব সর্বোচ্চ পরিমাণে বরাদ্দকৃত অর্থ।
মুসলিম সরকারগুলো দুর্ভাগ্যবশত ইসলামকে শুধু একটি সেøাগান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ইসলাম অর্থনীতি ও সামাজিক কল্যাণে যে অবদান রাখতে পারে, তার কোনো কিছুই ওই সরকারগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। প্রফেসর খুরশীদ আহমদ ঠিকই বলেছেন, মুসলিম দেশের সরকারগুলো ইসলাম থেকে যে উন্নয়ন ধারণা লাভ করে, তা উন্নয়ন অর্থনীতিতে কাজে লাগানোর কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও সমন্বয় সাধন একটি দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ইসলামি সরকারগুলো যত তাড়াতাড়ি অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও সমন্বয় সাধনের কাজ শুরু করবে, ততই তাদের জন্য ও মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। সব মুসলিম দেশের সব সমস্যার সমাধান হিসেবে ইসলামীকরণকে ব্যবহার করা যাবে না। শতাব্দীর পুরনো জঞ্জাল, নৈতিক অবক্ষয়, দুঃশাসন, ভ্রান্তনীতির অনুসরণ ও আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক ও বিনিময় হারের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা দূর হতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
অনুবাদ : ড. মাহমুদ আহমদ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা