০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ৮ শাবান ১৪৪৬
`

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অস্তিত্বের হুমকিতে আইসিসি

- ছবি : সংগৃহীত

মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত সবচেয়ে গুরুতর অপরাধগুলোর বিচার করার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

দ্য হেগ থেকে এএফপি জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল, কোনোটিই আইসিসির ১২৫ সদস্য রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত না হলেও নিষেধাজ্ঞাগুলো আদালতের কার্যক্রমকে বড় ধরনের সঙ্কটে ফেলতে পারে।

নিষেধাজ্ঞার ফলে আইসিসির কর্মকর্তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ হয়ে পড়বে, যা তাদের কাজকে জটিল করে তুলবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মার্কিন প্রতিক্রিয়ার ভয়ে আদালতের সাথে লেনদেন করতে অনিচ্ছুক হতে পারে।

এতে আদালতের প্রযুক্তিগত ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সংক্রান্ত কার্যক্রম, এমনকি প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অভিযোগ অনুযায়ী নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিরা সামনে আসতেও দ্বিধা করতে পারেন।

টিএমসি আসের ইনস্টিটিউট ও আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেমস প্যাট্রিক সেক্সটন বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা হয়তো আইসিসির সাথে সম্পর্ক রাখাই বন্ধ করে দেবে, কেননা এটি তাদের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

সেক্সটন আরো বলেন, ‘মাইক্রোসফটের মতো বড় সরবরাহকারীরা আগেভাগেই নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারে।’
তিনি নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক অপরাধবিচারের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন।

যুদ্ধ, হলোকাস্ট ও গণহত্যাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনআইওডির থাইজ বউফনেখত বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা আইসিসির জন্য ‘অভ্যন্তরীণ সঙ্কট’ সৃষ্টি করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, আইসিসির বর্তমান প্রধান কৌঁসুলি করিম খান তার শীর্ষ টিমে কয়েকজন মার্কিন নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, ‘এখন তারা একসাথে কাজ করতে পারবে না।’

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং জটিলতার আশঙ্কায় কিছু কর্মীদের আগেভাগে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বউফনেখত এএফপিকে বলেন, ‘আইসিসি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, ফলে এর কার্যক্রমে প্রচুর আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং জড়িত।’

আদালত কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে?
বউফনেখত বলেন, ‘একেবারেই কিছু করতে পারবে না। নৈতিক যুক্তি দাঁড় করানো যেতে পারে যে এটি আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে যায়। কিন্তু এটি কেবল মার্কিন মিত্রদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যারা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় সতর্ক থাকে।’

সেক্সটন বলেন, আদালত সম্ভবত কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে আইসিসি ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে।

আইসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আদালতের কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যের ওপর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে বা তাদের কাজে বাধা দেয়া হলে আদালত আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে।

আইনগতভাবে এর অর্থ হলো আইসিসি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি সম্ভব হলেও সেক্সটন বলেন, ‘এতে পরিস্থিতির উত্তাপ কমবে না, বরং আরো বেড়ে যেতে পারে।’

এর পরিণতি কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও আগ্রাসনের অপরাধ তদন্তকারী আইসিসিকে দুর্বল করা হলে বিশ্বব্যাপী একনায়কদের অবাধ ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর উদ্দেশ্য হলো, যে ন্যায়বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরিশ্রম করেছে, তা দুর্বল ও ধ্বংস করা। এটি এমন এক বৈশ্বিক নিয়মকে আঘাত করছে, যা সবার জন্য প্রযোজ্য এবং সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চায়।’

যদি নিষেধাজ্ঞাগুলো, যেমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে, কৌঁসুলিকে লক্ষ্য করেই দেয়া হয়, তাহলে আফগানিস্তান, ইউক্রেন ও সুদানের মতো সঙ্কটপূর্ণ অঞ্চলে চলমান অপরাধ তদন্তেও প্রভাব পড়বে।

সেক্সটন বলেন, ‘এর ফলে এমনকি সেসব মামলারও বিচার বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যেগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি নেই। এটি শুধু ফিলিস্তিন পরিস্থিতির তদন্ত নয়, সব তদন্তকেই দুর্বল করবে।’

তিনি আরো উল্লেখ করেন, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো এমন এক সময় এসেছে, যখন আইসিসি এরই মধ্যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

দ্য হেগে সন্দেহভাজন এক লিবিয়ান যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতারের পর ‘ভুলভাবে লেখা গ্রেফতারি পরোয়ানা’ পাওয়ার অভিযোগ তুলে ইতালি তাকে মুক্তি দিয়েছে, যা আদালতকে বিব্রত করেছে।

এছাড়া ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করার বিষয়ে কিছু দেশ দ্বিধা প্রকাশ করেছে, যা আদালতের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

সেক্সটন বলেন, ‘আমি মনে করি এটি আইসিসির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এটি আদালতের জন্য একটি সত্যিকারের সঙ্কটময় মুহূর্ত।’

এর আগে কি এমন ঘটনা ঘটেছে?
২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আইসিসির তৎকালীন কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এর কারণ হলো, আদালত তখন আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করছিল।

ওই সময় পম্পেও আইসিসিকে ‘একটি প্রহসনের আদালত’ বলে অভিহিত করেন।

পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বছর পর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন এবং ওয়াশিংটন আইসিসির প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে ‘আলাপ-আলোচনার’ প্রতিশ্রুতি দেয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে, যাতে এমনকি নেদারল্যান্ডসে সামরিক অভিযান চালানোর মতো চরম পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

২০০২ সালে মার্কিন কংগ্রেস তথাকথিত ‘হেগ আক্রমণ আইন’ পাস করেছিল, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আইসিসির হেফাজতে থাকা মার্কিন নাগরিকদের মুক্ত করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
শাহজাদপুরে বিএনপি নেতা সরোয়ার ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত ২০ রুয়েটে প্রথম বর্ষ প্রাক-নির্বাচনী ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রধান সিটি এডিটর আশরাফুল ইসলামকে সংবর্ধনা আমদানি কমলেও বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে `সাংবাদিকতায় মেধাস্বত্ত্বের চর্চা' শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গড়তে চাই : এ টি এম মাসুম আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নেবে না সেটাই আমরা চাই : মেজর হাফিজ রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতিসঙ্ঘ প্রধান আওয়ামী লীগের বড় শত্রু শেখ হাসিনা : আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হলের নাম পরিবর্তন পুলিশের এক ডিআইজি ও তিনজন এসপি আটক

সকল