এমপক্স রোগে চাই সচেতনতা
- ডা: আহাদ আদনান
- ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৫
মেডিক্যাল জগতে এমপক্স (বা মাঙ্কিপক্স) রোগটি একেবারে অজানা না হলেও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুই বছর আগে এই রোগটি মহামারী হিসেবে দেখা দিলেও এবার খুব দ্রুত সারা পৃথিবী হয়ে প্রতিবেশী দেশে হানা দিয়েছে। আমাদের তাই সতর্ক থাকা উচিত।
মাঙ্কিপক্স নামের ভাইরাস শরীরে প্রবেশের এক থেকে ২১ দিনের মাথায় লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। জ্বরের সাথে বিশেষ ধরনের ফুসকুড়ি (র্যাশ), গলা ব্যথা, প্রচণ্ড দুর্বলতা, শরীরে ব্যথাদায়ক গুটি, মাথা, মেরুদণ্ডসহ সারা শরীরে ব্যথা এই রোগের উপসর্গ। চামড়ায় প্রথমে ছোট লাল ঘা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে এতে পানি জমে। এরপর শুকাতে থাকে, নিচে নতুন চামড়া গজায়, পুরনো চামড়া ঝরে পড়ে। এই ফুসকুড়ি বা ঘাগুলো প্রচণ্ড ব্যথা এবং চুলকানি নিয়ে বাড়তে থাকে। শরীরের বিভিন্ন জায়গা বিশেষ করে হাত-পায়ের তালু, মুখের চারদিকে, কুঁচকি, পায়ু ও যৌনাঙ্গে ঘা হতে পারে। ফুসকুড়ি দেখা দেয়ার এক থেকে তিন দিন আগে থেকে নতুন চামড়া গজিয়ে পুরনো চামড়া ঝরে যাওয়ার সময়টা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
আক্রান্ত রোগীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ, যৌন সংস্পর্শ, নিঃশ্বাস (কথা বা শ্বাস নেয়া), মুখে চুমু এবং হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস নতুন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে। সমকামী ও বহুগামী ব্যক্তি বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী, শিশু, রোগ প্রতিরোধ কম এমন রোগী (এইচআইভি, ডায়াবেটিস, অপুষ্ট শিশু) কিংবা দীর্ঘদিন রোগ প্রতিরোধ কমার ওষুধ সেবনকারী (নেফ্রোটিক সিনড্রোম, ক্যান্সার), গর্ভবতী, অতিবৃদ্ধরাও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীতে পড়েন। আক্রান্ত বানর, কাঠবিড়ালি বা ইঁদুরের কামড় বা আঁচড় থেকে ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
অনেকসময় রোগ না সেরে জটিলতার দিকে যেতে পারে। ফোঁড়া থেকে সংক্রমণ, ডায়রিয়া, বমি, নিউমোনিয়া, চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিসমস্যা, মস্তিষ্কে সংক্রমণ, রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুও হতে পারে।
এ রকম লক্ষণ থাকলে কিংবা রোগের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এমন দেশে ২১ দিনের মধ্যে ভ্রমণ করে এলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া হটলাইনে জানাতে হবে। এই রোগের চিকিৎসা মূলত রোগীকে সাপোর্ট দেয়া। জ্বর, ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। চুলকানি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ লাগতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে চামড়ায় মলম, চোখের ওষুধ লাগতে পারে। প্রচুর তরল খাবার গ্রহণ করতে হয়। বিশ্রাম ও অন্যদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। জটিল ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করে জটিলতার চিকিৎসা করতে হয়।
বেশির ভাগ রোগী দুই থেকে চার সপ্তাহে সুস্থ হয়ে যায়। বারবার হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরা, আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা (যতদিন না পুরনো চামড়া ঝরে নতুন চামড়া গজায়) জরুরি। আক্রান্ত হলে চামড়া শুষ্ক এবং একাকী থাকলে খোলা রাখতে হবে। মুখে ঘা হলে লবণ-পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। ফুসকুড়ি খুঁচিয়ে ঘা করা যাবে না। সন্দেহজনক রোগীর আক্রান্ত চামড়া থেকে পিসিআর পদ্ধতিতে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়। কিছু দেশে গুঁটিবসন্তের টিকা এবং ভাইরাসবিরোধী ওষুধ দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। আমাদের জন্য সতর্ক থেকে প্রতিরোধ করাই একমাত্র উপায়।
লেখক : শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা