ভ্যাপসা গরমে গর্ভবতীর খাবার ও জীবনযাপনে সচেতনতা
- অধ্যাপক ডা: শাহীন আক্তার
- ০৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
ভ্যাপসা গরমে যখন সবার জীবন হাঁসফাঁস। এই সময়টাতে গর্ভবতীদেরও অনেক বেশি সচেতন থাকা দরকার। কারণ গরমের কারণে গর্ভবতীদের ডিহাইড্রেশন থেকে শুরু করে ইউরিন ইনফেকশন, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই গরমে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই সুস্থ থাকতে পারবেন।
গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে এই সময় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। তাই শরীর সুস্থ রাখতে নিয়ম করে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। গরমে সস্তি পেতে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করা যাবে না। প্রয়োজনে মাটির পাত্রে পানি রেখে সেই পানি পান করুন। গরমে প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে ড্রিহাইড্রেশন বা পানিশূনতা সাধারণ সমস্যা। দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিলে শরীর দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয়ে যায়। তাই প্রচুর তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের জুস, লাচ্ছি, লেবু মিশ্রিত পানি, দই ইত্যাদি পান করতে হবে। আর প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পানীয় খাওয়াতে থাকতে হবে। শরীর যদি অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে ওয়ারেসও খেতে পারেন। বাইরে থাকলে অনেকই ক্লান্তি দূর করতে রাস্তার ধুলাযুক্ত খোলা খাবার দাবার ও পানীয় খেয়ে থাকেন। গরমের সময় মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ে এবং খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় এবং বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই ছড়ায় যেমন কলেরা, ডায়রিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি। তাই গর্ভবতী মায়েদের রাস্তার নোংরা ও খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
এই গরমে দিনের বেলা বাইরে বের হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। একান্ত প্রযোজন হলেই বাইরে যাবেন। শরীর ঢাকা ঢিলে-ঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে । সঙ্গে ছাতা নিবেন এবং মাথায় স্কার্ফ পরবেন। সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। চাইলে সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে দিনে দুইবার গোসল করতে পারেন। ঘুমাবার আগে গোসল করে নিতে পারলে শরীরের তাপমাত্রা কমে এবং ঘুম আরামদায়ক হয়। বাইরে বের হওয়ার সময় হাতে পানির ¯েপ্র বোতল রাখতে পারেন যাতে গরম বেশি অনুভূত হলেই শরীরে হাল্কা পানি ¯েপ্র করিয়ে নেয়া যায়। গরমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাঁতারও কাটতে পারেন। এতে ভালো ব্যায়াম হবে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গরমের এই সময়টাতে গর্ভবতী মায়েরা তেল, ঝাল, মসলাসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন। ঘরে তৈরি শাক, সবজি হালকা পদ রেঁধে খান। প্রতিদিন কম মিষ্টি আছে মৌসুমি ফল খান। ফল খেলে দেহে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের ঘাটতি মিটে যাবে। রোগব্যাধিও দূরে থাকবে। গর্ভকালীন সময়ে খাবার দাবার হওয়া চাই বিভিন্ন মিনারেল ও ভিটামিনযুক্ত। তাই যেসব খাবারে প্রোটিন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন বেশি পাওয়া যায় যেমন নানা প্রকার ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, ডিম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খেতে হবে। আর এ সময় চর্বিযুক্ত খাবার যতটা পাড়া যায় এড়িয়ে চলা । অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
গর্ভবতী মায়েদের এ সময় অভ্যন্তরীণ পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়া ক্রিয়া সহজ করতে একবারে বেশি না খেয়ে বার বার অল্প অল্প করে খাওয়া তার জন্য অনেক উপকারী । বারবার অল্প অল্প করে খেলে তার বিপাক ক্রিয়া সহজ হওয়ার পাশাপাশি তার শরীরের ওপর চাপ কম পড়ে এবং শরীর অধিক পরিমাণে তাপ উৎপাদন হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করতেই হবে। তা হলেই নিজের পাশাপাশি সুস্থ থাকবে গর্ভের সন্তান। তবে গরমের এই সময়টাতে রোদ ওঠার পর ব্যায়াম করা যাবে না। বরং চেষ্টা করা একদম সকালে বা সন্ধ্যের পর ব্যায়াম করা। গর্ভাবস্থায় সাধারণত মহিলাদের শরীরে এমনিতেই রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। গরমের সময় কেউ গর্ভ ধারণ করলে তার গরম আরো বেশি অনুভূত হয়।
গরমে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় বলে গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত বিশ্রামের দরকার হয়। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাও জরুরি। গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। ঘরের বিভিন্ন কাজ যদি করতে হয় তাহলে সেটা সকালের দিকে করে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এ সময় তুলনামূলকভাবে তাপমাত্রা কম থাকে।
ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা,কফি পান করলে রক্তচাপসহ দেহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এসব পানীয় অনেকের উদ্বিগ্নতা ও বিরক্তিভাব বাড়ায়। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনসহ গর্ভবতীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে । তাই এ সময়ে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় গ্রহণ না করাই ভালো। এ ছাড়া ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় গর্ভের সন্তানের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে যেমন শিশু অপরিপক্ব কিংবা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হয়ে জন্ম নিতে পারে । এমনকি শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়েও জন্মানোর আশঙ্কা রয়েছে। যদি খেতেই হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অল্প অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
লেখক : নবজাতক, শিশু, কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড হেল্থ কেয়ার, মিরপুর-৬ ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা