০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

কোরবানি ঈদে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য কারণ ও প্রতিকার

-

কোরবানি ঈদের পর এবং বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর কিছু মানুষ সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভোগেন এবং এই নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ চেয়ে থাকেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য
কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটি একেকজনের কাছে একেক রকম অর্থবহন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে খুব শক্ত মলত্যাগ হওয়া, কিংবা সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হওয়া কিংবা মলত্যাগ করতে প্রচুর সময় ব্যয় হওয়া, খুব জোরাজুরি কিংবা বল প্রয়োগ করে কিংবা মলদ্বারে কোনো কিছু প্রবেশ করিয়ে মলাশয় খালি করা বা মলত্যাগ করার পর মনে হওয়া যে, মলাশয় খালি হয়নি এরকম। কোষ্ঠকাঠিন্য দুই ধরনের- ১। অপঁঃব ঈড়হংঃরঢ়ধঃরড়হ বা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য ২। ঈযৎড়হরপব ঈড়হংঃরঢ়ধঃরড়হ বা দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য
যদি অল্প কয়েক দিনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যতার উপসর্গ দেখা দেয় অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যতার সময় যদি তিন মাসের কম হয়, তাহলে এই অবস্থাকে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতা বলে।
উদাহরণস্বরূপ, কোথাও কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ গোস্ত খাওয়ার পর দেখা গেলো দুই-তিন দিন মলত্যাগ হচ্ছে না কিংবা খুব শক্ত অল্প অল্প মলত্যাগ হচ্ছে, তাহলে এই অবস্থাকে অপঁঃব পড়হংঃরঢ়ধঃরড়হ বা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।
অথবা দেখা গেল, প্রতিদিন তিন বেলায় গোস্ত, মাছ, ডিম ইত্যাদি দিয়ে ভাত খাচ্ছে, তাই নিয়মিত মলত্যাগ হচ্ছে না, হলেও শক্ত মলত্যাগ হচ্ছে কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যতা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তা যদি তিন মাসের কম সময় হয়ে থাকে, তাহলে একে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হবে। অথবা সারা বছর সুস্থ, কিন্তু কোরবানি ঈদের দিন, ঈদের পরে প্রচুর পরিমাণ গোশত খাওয়ার পর দেখা গেল মলত্যাগ হচ্ছে না, পেট ফুলে যাচ্ছে, পেটে ব্যথা হচ্ছে, তবে এই অবস্থাকেও অপঁঃব ঈড়হংঃরঢ়ধঃরড়হ বা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতার উপসর্গ
ষ মল ত্যাগের সাধারণ রুটিন পরিবর্তন হয়ে যাবে ষ শক্ত মলত্যাগ হবে ষ মলত্যাগের সময় মলাশয়ে ব্যথা হবে ষ মলত্যাগ করতে গেলে জোর প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় হবে ষ মলত্যাগ অল্প অল্প হতে পারে ষ পেট ফুলে যেতে পারে ষ পেটে ব্যথা হতে পারে ষ কিছুক্ষণ পরপর বায়ু ত্যাগ হতে পারে ষ খাওয়ার রুচি কমে যাবে ষ দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ত মনে হতে পারে ষ স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটবে।
সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতার ফলে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে তা হলো-
ষ হেমোরয়েড বা পাইলস : পায়ুপথের আশপাশের রক্তনালী সমূহে প্রদাহ হতে পারে এবং মলত্যাগ করার সময় পায়ুপথে রক্ত যেতে পারে, এমনকি ব্যথাও হতে পারে, পায়ুপথে চুলকানি দেখা দিতে পারে। ষ এনাল ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে। ষ ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স/প্রস্রাবে অনিয়ম দেখা দিতে পারে।

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতার কারণ
অপঁঃব পড়হংঃরঢ়ধঃরড়হ বা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতা মূলত অস্বাভাবিক লাইফ স্টাইলের কারণে দেখা দেয়। যেমন- ষ আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া তথা শাকসবজি কম খাওয়া ষ নিয়মিত মলত্যাগ না করা, মলত্যাগ আটকিয়ে রেখে কাজকর্ম করা ষ নিয়মিত খাবার না খাওয়া ষ পরিমিত ঘুম না যাওয়া, চিন্তা অবসাদগ্রস্ত থাকা ইত্যাদি ষ আইবিএস এর সমস্যা থাকা ষ মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যথা- ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, এন্টি স্পাজমোডিক, এন্টি ডায়েরিয়াল ড্রাগস, আয়রন ট্যাবলেট, এলুমিনিয়াম যুক্ত এন্টাসিড ইত্যাদি ষ দৈনিক অত্যধিক পরিমাণ প্রোটিন খাওয়া যেমন অধিক পরিমাণ গোশত খেলে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতা দেখা দিতে পারে।

দৈনিক প্রোটিনের পরিমাণ কতটুকু হওয়া চাই?
ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন ইউএসএ’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রোটিন চাহিদা হচ্ছে ১ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট। অর্থাৎ একজন মানুষের ওজন যদি ৬০ কেজি হয়ে থাকে, আর সে যদি ভারী কোনো কাজ না করে, তাহলে তার দৈনিক প্রোটিন দরকার পড়ে ৬০ গ্রাম। আর ভারী কাজ করলে আরো ৩০ গ্রাম বাড়বে, অর্থাৎ ৯০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। এটা হচ্ছে স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন।
তবে একজন সুস্থ মানুষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত দৈনিক সর্বোচ্চ ২ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট করে প্রোটিন খেতে পারবে। সুতরাং একজন ৬০ কেজি ওজনের মানুষ দৈনিক সর্বোচ্চ ১২০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত। এর চেয়ে বেশি খেলে ডায়রিয়া কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। প্রোটিনের উপাদান হচ্ছে গোশত, মাছ, ডিম ইত্যাদি।

এবার বুঝে নিই, ১২০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারলে কত গ্রাম গোশত খাওয়া যাবে?
আমরা অনেকে মনে করে থাকি যে, এক গ্রাম গোশত মানে এক গ্রাম প্রোটিন, যা ভুল ধারণা। আমেরিকার ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম রান্না করা গোশতের মাঝে ২৬ গ্রাম প্রোটিন, ১০ গ্রাম ফ্যাট, ৬১-৬৩ গ্রাম পানি থাকে।
তার মানে, গোশত থেকে ২৬ গ্রাম প্রোটিন পেতে হলে ১০০ গ্রাম গোশতের প্রয়োজন, তথা ১ গ্রাম প্রোটিনের জন্য প্রায় ৪ গ্রাম গোশতের দরকার। আমরা একটু আগে জেনেছি, একজন ৬০ কেজি ওজনের সুস্থ লাইট ওয়ার্কার মানুষের দৈনিক প্রোটিন চাহিদা হচ্ছে ৬০ গ্রাম, সুতরাং সে স্বাভাবিক গোশত থেকে সেই পরিমাণ প্রোটিন নিতে চাইলে ৬০ী৪=২৪০ গ্রাম গোশত খেলেই যথেষ্ট।
আবার ৬০ কেজি ওজনের মানুষ দৈনিক সর্বোচ্চ ১২০ গ্রাম প্রোটিন কিংবা ৪৮০ গ্রাম গোশত খেতে পারবে। তবে তা হতে হবে তিন বেলায় ভাগ করে অল্প অল্প করে। অন্যথায় গধষধনংড়ৎঢ়ঃরড়হ ংুহফৎড়সব কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেবে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ২০০ গ্রামের বেশি গোশত খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে করণীয়
লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়। যেমন- ষ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি খেতে হবে ষ পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে ষ ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কম খেতে হবে ষ অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে ষ অত্যধিক গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ষ দৈনিক ১০০-১৫০ গ্রামের চেয়ে বেশি গোস্ত না খাওয়াই উত্তম ষ নিয়মিত ইসবগুলের শরবত খেতে হবে ষ সম্ভব হলে প্রতিদিন আপেল খাওয়া উত্তম, আপেলে পর্যাপ্ত ফাইবার রয়েছে ষ নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
অবশ্যই যেটা খেয়াল রাখবেন, যেদিন বেশি পরিমাণে গোশত খাওয়া হবে, সে দিন গোশতের সাথে শাকসবজি, গাজর, শসা ইত্যাদি খেতে হবে এবং সকাল, দুপুর, রাতে এক গ্লাস পানিতে দুই টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে ইসবগুলের শরবত খেতে পারেন। এতে করে কোলনের মধ্যে কিছু পরিমাণ পানি রিটেনশন হবে এবং মল তরল থাকবে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যারা নিয়মিত ইসবগুলের শরবত খায়, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যতার প্রবণতা ৯০% কমে যায়।
ঈদ উৎসবে পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। এতে দেহ ও মন সুস্থ থাকবে।
লেখক : পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল
এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ, dr. [email protected]
ফোন : ০১৬৮৪৯৩৬০৬৭


আরো সংবাদ



premium cement
ইফার দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত ঢাকা ওয়াসার কেউ দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা : উপদেষ্টা আসিফ ২২ ফেব্রুয়ারি হাবের নির্বাচন রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে ২ জনকে হত্যা ৪২ লাখ টাকাসহ প্রতারক চক্রের সদস্য গ্রেফতার ডিএমপি কমিশনারের সাথে য্ক্তুরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ তারুণ্যের উৎসবে স্থান পাচ্ছে জুলাই আগস্টের তথ্যচিত্র মৃত্যুবার্ষিকী : রফিকুল ইসলাম আধুনিক অটোমোবাইলস জোন প্রতিষ্ঠার দাবি ওয়েলফেয়ার অব ড্রাইভারস্ এন্ড মেকানিক্সের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা অবমাননার অভিযোগ, আটক ৩ ১০ লাখ টাকার অনুদানের চেক শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর

সকল