২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বয়সজনিত চোখের রোগ

-


সুস্থ সুন্দর চোখ কার না কাম্য? কিন্তু এই সুস্থ সুন্দর চোখে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের ভেতরে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের ফলে চোখের সুস্থতা হুকমির মুখে পড়ে।

চালশে রোগ : বয়স চল্লিশের পর কাছে কোনো কিছু দেখতে অসুবিধা হওয়াকে চালশে রোগ বলা হয়। খবরের কাগজ পড়ার সময় অথবা সুঁই সুতার কাজ করার সময় সমস্যাটি ধরা পড়ে।
কাছের জিনিস ঝাপসা দেখা, মাথা ব্যথা করা এই রোগের লক্ষণ। বয়সজনিত কারণে চোখের লেন্সের পাওয়ার কমে যাওয়ার কারণে এই রোগ হয়। ডাক্তারের পরামর্শে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।

ছানিরোগ : বয়সজনিত কারণে চোখের স্বচ্ছ লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে দৃষ্টি কমে যাওয়াকে ছানিরোগ বলা হয়। এতে সাধারণত আগে পরে দুই চোখই আক্রান্ত হয়। দূরে এবং কাছে ঝাপসা দেখা, আলো সহ্য করতে না পারা, আলোর চতুর্দিকে রঙিন দেখা এই রোগের লক্ষণ। কোনো ওষুধে এই রোগের চিকিৎসা করা যায় না। একমাত্র অপারেশন করে ছানি অপসারণের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। সবচেয়ে আশার কথা ছানি অপসারণ করে কৃত্রিম লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে প্রায় স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে পাওয়া সম্ভব।

এআরএমডি : বয়স ৫০-৬০-এর পর রেটিনার সবচেয়ে দৃষ্টি সংবেদনশীল অংশে পরিবর্তনের কারণে চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়াকে এআরএমডি (এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন) বলা হয়। আস্তে আস্তে দৃষ্টি কমে যাওয়া কোনো জিনিসকে বাঁকা দেখা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। রেটিনার পরিবর্তনের কারণে চোখের ভেতর রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত এই রোগে দুই চোখ আক্রান্ত হয়। চোখের ভেতরে ইনজেকশন প্রয়োগে অথবা লো-ভিশন চশমা ব্যবহারে রোগের চিকিৎসা করা হয়।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি : অনিয়ন্ত্রিত এবং অনেক দিনের ডায়াবেটিস রোগের কারণে বয়স্কদের এই রোগ হয়। চোখের রেটিনার রক্তনালীতে পরিবর্তনের কারণে রেটিনায় পানি জমে যাওয়া এমনকি রক্তপাত হতে পারে। চোখের ভেতরে ইনজেকশন প্রয়োগ, লেসার এবং অপারেশনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।

গ্লুকোমা : চোখের স্বাভাবিক চাপ (১০-২১) মি:মি: মার্কারি। চোখের চাপ স্বাভাবিক এর চেয়ে বেড়ে চোখের পেছনে স্নায়ু অকার্যকর হয়ে যাওয়াকে গ্লুকোমা রোগ বলা হয়। যাদের পরিবারে গ্লুকোমা রোগ আছে, যারা মাইনাস পাওয়ারের চশমা পরে, যাদের ডায়াবেটিস অথবা উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের মধ্যে পঞ্চাশ বছর বয়সের পর এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চোখে ঝাপসা দেখা, দৃষ্টি সীমানা সরু হয়ে আসা, চোখে হালকা ব্যথা হওয়া ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। কিছু কিছু গ্লুকোমাতে প্রচণ্ড চোখ ও মাথা ব্যথা এবং বমির ভাবও হতে পারে। বিভিন্ন রকম চোখের ড্রপ প্রয়োগে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। ওষুধে প্রয়োগে না হলে অপারেশনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

চোখ দিয়ে পানি পড়া : বয়সজনিত কারণে নাকের গোড়ার দুই পাশে অবস্থিত নেত্রনালী সরু হয়ে এই রোগ হয়। চোখের পানি সরু নেত্রনালী দিয়ে না সরতে পেরে চোখের কোনায় পানি জমা হয়ে থাকে এবং অনবরত পানি পড়তে থাকে। মাঝে মধ্যে নেত্রনালী ফুলে গিয়ে ব্যথা বেদনা হতে পারে। নেত্রনালীর অপারেশনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

করণীয় :
ষ নিয়মিত চক্ষু ডাক্তারের কাছে চোখ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
ষ প্রতি পাঁচ বছর পরপর চোখের পাওয়ার চেক করা প্রয়োজন।
ষ ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ষ পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্য খেয়ে চোখের বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
ষ নিয়মিত পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে।
ষ হঠাৎ করে চোখে কম দেখলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে বেশির ভাগ বয়সজনিত চোখের রোগের সুচিকিৎসা সম্ভব। চোখের রোগ সম্পর্কে সচেতনতা এবং নিয়মিত চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক রোগ প্রতিরোধও সম্ভব।
লেখক : চক্ষু বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম


আরো সংবাদ



premium cement