উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা
- মো: জহিরুল আলম শাহীন
- ০১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা প্রদানকারী খাদ্য, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও রোগ প্রতিরোধের জন্য খুবই উপকারী। শাকসবজি মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। শাকসবজিতে নানা রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতার উপাদান রয়েছে তা নিয়মিত পরিমাণমতো সেবন করে সুস্থ থাকা যায়। এমন অত্যন্ত উপকারী অতি-পরিচিত একটি সবজি হলো করলা। করলা এমন সব উপাদান রয়েছে যা মানুষের উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার হজম শক্তি বৃদ্ধি, চোখের নানা সমস্যা ও চর্মরোগ প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
পরিচিতি : করলা এক প্রকার লতানো বর্ষজীবী বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ, এর ফলই হলো করলা। কাঁচা ফল গাঢ় সবুজ তিক্ত স্বাদের লম্বা আকৃতির। করলা সারা বছরই জন্মে তবে শীত ও বর্ষাকালে প্রচুর জন্মে এবং পাওয়া যায়। করলার ইংরেজি নাম ইধষংধস অঢ়ঢ়ষব বৈজ্ঞানিক নাম গড়সড়ৎফরপধ ঈযধৎধহঃবধ. উদ্ভিদ জগতের ঈঁপঁৎনরঃধপবধব গোত্রের উদ্ভিদ। করলা তেতো বলে অনেকের কাছে তেমন পছন্দনীয় নয়। তবে পুষ্টিগুণ ও রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকর সবজি।
রাসায়নিক উপাদান : করলার পাতায় থাকে অম্লীয় রজন তিক্ত পদার্থ কিউকারবিটেন ট্রাইটার্পিনয়েড, গামাঅ্যামাইনো বিউটারিক এসিড, এতে আরো থাকে অ্যামাইনো এসিড, ক্যারোটিন, থায়ামিন, নিয়াসিন, এসকরবিক এসিড, খনিজ পদার্থ। ফলে থাকে , অনেক স্টেয়য়েডাল যৌগ, স্যাপোনিন তিক্ত কিউকারবিটাসিন, গ্লাইকোসাইড, ফেনলিক যৌগ, মোমোর ডাইকোসাইডস কে ও এল। বীজে থাকে এক প্রকার বিরেচক স্থায়ী তৈল লাইনোলেইক, অলিক আলফা, ইলিও স্টেবিক এসিডের ইস্টার, বিটা সিটোস্টেরল গ্লুকোসাইড, এলবুমিন, গ্লোবিউলিন, গ্লুটোলিন, পাতা, ফল ও বীজে ভিটামিন এ, বি, সি পাওয়া যায়।
পুষ্টি উপাদান : পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী করলায় পুষ্টি উপাদান হলোÑ খাদ্যশক্তি ২৮ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৯২.৪ গ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৮ গ্রাম, লৌহ ১.৮ গ্রাম, আঁশ ০.৮ গ্রাম, ভিটামিন সি ৯৬ মিলিগ্রাম, ভিটামনি এ ২১০ আই, ইউ, ভিটামনি বি-১ .০৭ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.০৬ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৫২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৭০ মিলিগ্রাম। এতে আরো অন্যান্য খনিজ উপাদান আছে। তবে জাত ও মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে পুষ্টি উপাদান কমবেশি হতে পারে।
উপকারিতা : করলা অত্যন্ত উপকারী ও রোগ প্রতিরোধক সবজি। একে প্রাকৃতিক ওষুধও বলা যায়। নিয়মিত করলা খেলে শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে না। তারুণ্য ধরে রাখে। চামড়ার বলিরেখা পড়ে না। এটি ভাইরাস নাশকও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, রক্ত পরিষ্কার করে। পানির সাথে করলার রস ও মধু মিশিয়ে খেলে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ও গলার প্রদাহ নিরাময়ে যথেষ্ট সাহায্য করে। করলাতে লুটিন এবং লাইকোপিন থাকে। এগুলো দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হজম কাজ তরান্বিত করে। নি¤েœ করলার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলোÑ
* করলাতে আছে এডনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন ফাইনেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোতে চিনি বা সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায়, ফলে রক্তের চিনির পরিমাণ কমে যায়। তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত করলা খান। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে। * যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বা রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়, তারা প্রতিদিন করলা খান; উপকার পাবেন। করলাতে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ কমাতে বিশেষ কাজ করে। * তা ছাড়া করলা হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে সতেজ রাখে। * প্রতিদিন সকালে করলার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে খেলে রক্তের দূষিত উপাদান দূর হয়। সেই সাথে এলার্জিজনিত সমস্যা কমে যায়। * যাদের পায়খানা কম হয় বা শক্ত পায়খানা হয়, তারা প্রতিদিন করলা খান; উপকার পাবেন।
সতর্কতা : করলা তিতা কমাতে রান্নার সময় তার রস বা পানি দিয়ে সিদ্ধ করে এ পানি ফেলে দেবেন না। এতে করলার পুষ্টিগুণ কমে যায়। করলা টুকরো টুকরো করে কেটে ফ্রিজে ভরে রাখবেন না। করলার তিতা কমাতে করলার সাথে আলু মিশিয়ে ভাজি করলে বা অন্য কোনো সবজি দিয়ে রান্না করলে তার তিক্ততা কমে আসবে। যেকোনো সবজির পুষ্টিগুণ পুরোপুরি পেতে তাজা খাওয়া উচিত। নিয়মিত শাকসবজি খান, সুস্থ থাকুন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা