জন্মগত হৃদরোগ : কিভাবে বুঝবেন, কী করবেন
- ডা: মুহম্মদ আশিকুর রহমান
- ২১ মার্চ ২০১৯, ১৩:৫৪
‘জন্ম হোক যথা-তথা কর্ম হোক ভালো’... এ কথার সাথে আমি একমত নই। জন্মগত হৃদরোগ কেবল কোনো জন্মদাতা বাবা- মায়ের সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারাই বহুলাংশে দায়ী। হার্টের জন্মগত ত্রুটি হার্টের ভেতরে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলকে ব্যাহত করে। এর ফলে নবজাতকের শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। জন্মগত হৃদরোগের কিছু প্রধান কারণ হলো-
ক্স জন্মগত হৃদরোগ বংশগতভাবে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের রোগটি থাকতে পারে। পারিবারিকভাবে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর স্বল্পসময়ের ব্যবধানে মৃত্যুর ইতিহাস ওই পরিবারে জন্মগত হৃদরোগ বংশগতভাবে থাকার ইঙ্গিত বহন করে। কাজিন ম্যারেজ ও আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে অনেক সময় জন্মগত হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
ক্স সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের সঠিক ওষুধ না খাওয়ার জন্য জন্মগত হৃদরোগ হতে পারে। সে জন্য সব গর্ভবতী মায়ের উচিত যেকোনো কারণে চিকিৎসা গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারকে জানানো উচিত যে তিনি গর্ভবতী। সে ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে যে সব ওষুধ জন্মগত হৃদরোগ সৃষ্টি করতে পারে, সেসব ওষুধ লেখা থেকে ডাক্তারকে বিরত থাকতে হবে। ব্রণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ভিটামিন ‘এ’ এনালগ এবং মুড ডিস-অর্ডারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত লিথিয়াম ব্যবহারকারী মায়ের গর্ভের সন্তানের জন্মগত হৃদরোগ হতে পারে।
ক্স গর্ভকালীন অভ্যাসগত কারণে মা যদি অ্যালকোহল অথবা অবৈধ নেশাজাতীয় ড্রাগ সেবন করে তবে তা-ও নবজাতকের জন্য জন্মগত হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
ক্স গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এ সময় গর্ভবতী মা রুবেলাসহ অন্যান্য ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হলে তা নবজাতকের জন্মগত হৃদরোগের কারণ হতে পারে। সে জন্য গর্ভকালীন গর্ভবতী মায়ের উচিত কোলাহলপূর্ণ স্থান ও সামাজিক মেলামেশা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। অনেক সময় মা নিজেও জানেন না তিনি গর্ভবতী। তাই এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র প্রতিকারের উপায়।
ক্স চল্লিশোর্ধ্ব বা বয়স্ক মায়ের গর্ভজাত সন্তান মানুষিকভাবে বিকলাঙ্গ হতে পারে এবং তাদের জন্মগত হৃদরোগ সাথী হিসেবে থাকে। এর মধ্যে ‘ডাউন সিনড্রোম’ একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাই ছেলে সন্তানের আশায় চল্লিশ বছরের পর মায়েদের গর্ভধারণ থেকে নিজেকে বিরত রাখাই বাঞ্ছনীয় হবে।
তাই সবশেষে জীবনের বন্ধন যথাতথা না করে বা তাড়াহুড়া পরিহার করে সঠিক খোঁজখবরের মাধ্যমে করা উচিত। জন্ম যথা-তথা হলে কর্ম ফলাফল হিসেবে জন্মগত হৃদরোগ ললাটের লিখন হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘জনম্ সামঝা করো, ‘উক্তিটির সাথে আমি একমত পোষণ করছি।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।
আরো পড়ুন :
শিশুর জন্ডিস : কী করবেন
ডা: এম এ রাজ্জাক
সদ্য প্রসূত শিশুর জন্ডিস, বর্তমানে বহুল আলোচিত। যা শুনলেই চমকে উঠেন অভিভাবকেরা। জন্ডিস এর বাংলা শব্দ হলো ন্যাবা। অঞ্চল ভেদে কমলাও বলা হয়। যকৃতের পিত্ত নিঃসরণ ক্রিয়ার স্বল্পতা অথবা অবরুদ্ধতা বশত রক্তের পিত্ত মিশ্রিত হয়ে শারীরিক রক্ত মধ্যে সঞ্চালিত হয়ে শরীরস্থ চর্ম, চোখের শ্বেত বর্ণ স্থান মূত্র পীত বর্ণও হলুদে বা কমলা রঙের হলে ন্যাবা বা জন্ডিস বলে। ৬০ শতাংশ শিশুর জন্মের ১/২ সপ্তাহের মধ্যে জন্ডিস হয়ে থাকে।
যে ভাবে বুঝবেন জন্ডিস হয়েছে : ১) জন্মের প্রথম সপ্তাহেই শিশুর দিকে খেয়াল রাখতে হবে তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষিত হয় কিনা। ২) স্কিন হলদে দেখায় কিনা। ৩) শিশুর কপালে আঙুল দিয়ে আলতুভাবে চাপ দিয়ে উঠিয়ে নিন। যদি আঙুল উঠানোর পরে স্কিন হলদে দেখায় তবে বুঝতে হবে জন্ডিস হয়েছে। ৪) বাচ্ছা যদি বুকের দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়। ৫) শিশুর প্রস্রাব যদি হলুদ হয়। ৬) রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা যদি বেশি থাকে।৭) প্রিম্যাচিউর শিশু হলে। ৮) স্কিন সর্বদা হলুদ থাকলে।
কারণ : গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্ডিস থাকলে।
মা ও সন্তানের রক্তের ভিন্নতার কারণে। মায়ের জন্ডিস বর্তমান থাকলে। বেবির লিভারে কোনো সমস্যা থাকলে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে।
চিকিৎসা : সকালের মিষ্টি রোদে প্রতিদিন কিছু সময় রাখা। এতেই অধিকাংশ শিশু ভালো হয়ে যায়। প্রয়োজনে ফটোথ্যারাপি দিতে হবে। লক্ষণ সাদৃশ্যে কিছু অতি সাধারণ হোমিও মেডিসিন ব্যবস্থা করে অতি দ্রুত এবং চমৎকার সাফল্য পাওয়া যায়। চেলিডোনিয়াম, চায়না, নাক্স, ইপিকাক, ব্রায়ুনিয়া, কার্ডুয়াস ইত্যাদি।
সতর্কতা : যদি দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয়। বিলিরুবিনের মাত্রা যদি খুব বেশি হয়। শিশু খাবার বন্ধ করে দিলে। খিচুনি থাকলে, অন্যান্য রোগের সহাবস্থান থাকলে। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে আর মনে রাখবেন কোনোক্রমে মায়ের দুধ বন্ধ করবেন না।
লেখক : এসো: প্রফেসর তানজিম হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ। চেম্বার : সিটি হোমিও ইন্টারন্যাশনাল ২৩, জয়কালি মন্দির, ঢাকা। ফোন : ০১৯১২৮৪২৫৮৮