১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

বিএসএমএমইউ’র ভিসিকে অবরুদ্ধ করে স্নাতকোত্তর কোর্সে ঢোকার চেষ্টা ১৩ চিকিৎসকের

বিএসএমএমইউ’র ভিসিকে অবরুদ্ধ করে স্নাতকোত্তর কোর্সে ঢোকার চেষ্টা ১৩ চিকিৎসকের - ছবি : সংগৃহীত

স্নাতকোত্তর কোর্সে বিনা পরীক্ষায় প্রবেশের অনুমতি আদায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো: শাহীনুল আলমকে অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ফজিলাতুন্নেসা কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ৯৪তম সিন্ডিকেট সভা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৩ জন মেডিক্যাল অফিসার সিন্ডিকেট মিটিংয়ের বাইরে তাদের দাবির পক্ষে হট্টগোল করেন। এদের কয়েকজন সিন্ডিকেট মিটিংয়ের ভেতরে সিন্ডিকেট সদস্য না হওয়ার পরও আগে থেকে হট্টগোল করার জন্য বসেছিলেন এবং বাইরে বাকিরা ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর এ ১৩ জনের কয়েকজন ডাক্তার স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছিলেন কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেননি।

শেষ পর্যন্ত বিনা পরীক্ষায় বিশেষ বিবেচনায় কোর্সে ভর্তি করার জন্য গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ ডাক্তাররা কয়েকজন বহিরাগতকে নিয়ে এসেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও এই ১৩ চিকিৎসকের একজন ডা. এরশাদ এহাসান সোহেল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি অস্বীকার করলেও তার সাথে যখন এই প্রতিবেদক কথা বলছিলেন তার পাশে একজন দাঁড়িয়েছিলেন। জিজ্ঞাসা করলে ডা. এরশাদ এহাসান নিজেই স্বীকার যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি তার চেম্বারের সহকারি, ডাক্তার নন।

সিন্ডিকেট সভার বাইরে হট্টগোল করা চিকিৎসকরা তাদের দাবির ব্যাপারে যুক্তি হিসেবে জানান, বিগত সরকারের সময়ে তারা পরীক্ষায় টিকতে পারেননি, আবার তাদের পরীক্ষা দিতেও দেয়া হয়নি। কয়েকজন আছেন পরীক্ষায় টিকে ভর্তিও হতে পারেনি, তারা নানা ভাবে বৈষম্যর শিকার। তাই তাদের এবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দিতে হবে। পরীক্ষায় টিকে ভর্তি হতে পারেননি এই দাবির ব্যাপারে প্রমাণ চাইলে কোনো ডকুমেন্টও দেখাতে পারেননি। বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসকদের থেকে জানা গেছে, যে ১৩ ডাক্তার গতকাল ভিসিসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের অবরুদ্ধে করে রাখে এরা সবাই বিএসএমএমইউ-এর প্রক্টর শেখ ফরহাদের অনুসারী। শেখ ফরহাদ গতকাল সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত থাকলেও তিনি বাইরের হট্টগোল থামাতে কোনো ব্যবস্থা নেননি। কীভাবে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে তাদের দাবি আদায় করা হবে এ ধরনের একটি গোপন সভা গত বুধবার রাতেই ঠিক করে রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউ-এর ভিসি অধ্যাপক ডা. মো: শাহিনুল আলম বলেন, ‘এই ডাক্তাররা বিএসএমএমইউতে আগে থেকেই কর্মরত আছেন। এরা ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এখন তারা বিশেষ বিবেচনায় নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হতে চায়। এই হট্টগোলের কথা শুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক ডাক্তার ফজিলাতুন্নেসা কনভেনশন হলে গিয়ে উপস্থিত হন। পরে সিন্ডিকেটের সভা কোনো ঝামেলা ছাড়াই শুরু হয় বিকাল ৪টার কিছু পর শেষ হয়। গতকালকের সভায় এই ১৩ ডাক্তারদের ব্যাপারে মার্জনার জন্য বিশ্ববিদ্যায়লসমুহের চ্যান্সেলরের (রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট) কাছে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। চ্যান্সেলর যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনেই তাদের ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এর আগে গত বুধবার এই ১৩ ডাক্তারের কয়েকজন ভিসি অধ্যাপক ডা. শাহীনুলমকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অফিসে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ ও বিএসএমএমইউ-এর ড্যাবের স্থগিত হওয়া কমিটির সভাপতি ডা. এরফানসহ কোর্সে ভর্তি হতে চাওয়া ১৩ জন ডাক্তার এবং বহিরাগত অনেক বিএনপি কর্মী। বুধবার ভিসিকে তারা ১৩ চিকিৎসককে বিনা পরীক্ষায় কোর্সে ভর্তি করার জোর দাবি করে আসেন। একই সাথে সাবেক ভিসি’র পিএস-১ ইয়াহিয়া ও পিএস-২ সাইফুলকে ভিসি’র পিএস পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য ভিসিকে তারা বাধ্য করার চেষ্টা করেন। জানা গেছে, ডা. শেখ ফরহাদ এবং ডা. এরফান ভিসি’র কাছে জানতে চান কেন আগের ভিসির পিএস দু’জনকে বাদ দেয়া হলো। এসব অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডাক্তার শেখ ফরহাদকে পাওয়া পায়নি। তার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

যে চিকিৎসকরা পরীক্ষায় পাস করা ছাড়াই বিশেষ বিবেচনায় স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হতে চান তারা হলেন ডা. একেএম কবির আহমেদ (অর্থোডনটিকস), ডা. সারজানা সুলতানা (অর্থোডনটিকস), ডা. শাহরিয়ার শামস লস্কর নেফ্রলজি), ডা. মুহাম্মদ এরশাদ এহাসান (ইউরোলজি), ডা. মো: আবু নাসের (ডার্মাটোলজি), ডা. এ কে আল মিরাজ (ভাস্কোলার সার্জারি), ডা. মাহবুবুল ইসলাম খন্দকার (ইউরোলজি), ডা. জিয়াউদ্দিন মাহমুদ দিনার (অ্যান্ডোক্রাইনোলজি), ডা. এমডি রিয়াজুল জান্নাত (কনজারভেটিভ ডেনটিস্ট্রি), ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সালাম (গ্যাস্ট্রোএন্টেরলজি), ডা. এবিএসএম সিরাজুল হক (নিউরোলজি), ডা. হাসিবা আক্তার চৌধুরী (পেডিয়াট্রিক ডেনট্রিস্ট্রি), ডা. সিলভিয়া চৌধুরী (ডার্মাটোলজি)।

গতকালের সিন্ডিকেট সভায় প্রকাশনা যথেষ্ট থাকায় সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে গাইনি অনকোলজির ডা. নুর ই জান্নাত, রেডিওলজির ডা. মাহমুদ হাসান মোস্তফা কামাল, ডা. মোর্শেদা বেগম, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির ডা. এ বি এম ছফিউল্লাহ, ডা. মো: জাহিদুর রহমান, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফিশিয়াল সার্জারি বিভাগের ডা. সাখাওয়াত হোসেনকে। ২০১৩ সাল থেকে তাদের সহযোগী অধ্যাপক পদ কার্যকর হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement