২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিদায় রোনালদো : ইউরোর মহাকাব্যের কিংবদন্তির বীরগাথা

বিদায় রোনালদো - ফাইল ছবি

‘হয়তো’, ‘সম্ভবত’- কথাগুলোর আর কোনো মূল্য নেই। জল্পনা অতীত। পরেরবারও ইউরো কাপ খেলবে পর্তুগাল। নতুন প্রজন্ম, নতুন রক্ত। ইউরোপের সেরা প্রতিযোগিতায় ঘাম-রক্ত ঝরাবেন একঝাঁক উঠতি পর্তুগিজ তারকা। সাথে নিশ্চয়ই পাবেন আজকের দিনের প্রতিষ্ঠিত ফুটবলারদের। থাকবেন না শুধু একজন। ক্যামেরা ঘুরে যাবে গ্যালারির দিকে। এক বহু পরিচিত মুখ সেখানে হাসছেন নতুনদের সাফল্য দেখে। আনন্দে চিৎকার করছেন, গোল মিস হলে আফসোস করছেন। পরমুহূর্তেই উৎসাহ দিচ্ছেন তার দেশ পর্তুগালকে।

না, তখন আর তার গায়ে মেরুন জার্সিটা থাকবে না। পিছনে লেখা থাকবে না সেই বিখ্যাত ৭ সংখ্যাটা। ২০২৮-র ইউরোয় তিনি আর প্রধান নায়ক নন। পার্শ্বচরিত্রও নন। ফুটবলের রঙ্গমঞ্চ থেকে দর্শকের আসনে নেমে আসা এক ‘সাবেক’। যিনি ইউরোয় শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন শুক্রবার, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে।

‘শেষ ম্যাচ’, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ‘শেষ ম্যাচ’। এখনও ফুটবলবিশ্বকে বিদায় জানাননি তিনি। শুধু ইউরো কাপে আর কোনো দিন নামবেন না রোনালদো। তাতেও ‘শেষ ম্যাচ’ শব্দটা লিখতে অস্বস্তি হয়। লিখে ফেলার পর অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। কি-বোর্ডে ব্যাকস্পেস আছে। না বলতে চাওয়া অনেক কথা মুছে ফেলা যায়। কিন্তু জীবন? চরৈবতি মন্ত্রে এগিয়ে চলতে চলতে সে যে কখন নির্মম হয়ে উঠবে, তার আন্দাজ করা ক্ষুদ্র মানুষের কাজ নয়।

কিন্তু আভাস তো ছিল। স্লোভেনিয়া ম্যাচের পর খোদ রোনালদো জানিয়ে দিয়েছিলেন এটাই তার শেষ ইউরো। মাথায় তখনও কথাটা গাঁথেনি। এখনো পুরোপুরি মানতে চাইছে না। সময় বয়ে যাবে নিজের ছন্দে, তখন শূন্যস্থান আরো স্পষ্ট হবে। সারা মাঠময় তাকে খুঁজে বেড়াবে চোখ। নেই, ইউরোর মঞ্চে ফুটবলার রোনালদো আর নেই। ফ্রান্সের কাছে হেরে তার যে ছবি দেখল ফুটবল দুনিয়া, তা সংক্রামিত হতে থাকবে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ।

ঠিক যেভাবে কুড়ি বছর ধরে ইউরো কাপকে মাতিয়ে রেখেছেন রোনালদো। ১২ জুন, ২০০৪ থেকে ৬ জুলাই, ২০২৪। ফিগোর পাশে ১৭ নম্বর জার্সি থেকে ৭ নম্বর জার্সিকে নিজের নামে পরিচিত করে তোলা। পথের শেষে আজ ডেড অ্যান্ড। পথের দুপাশে অসংখ্য রেকর্ডের মাইলফলক। সবচেয়ে বেশি ছয়বার ইউরো খেলার নজির। ১৪টা গোল, আটটা অ্যাসিস্ট। শুকনো তথ্য পরিসংখ্যানেই পাতার পর পাতা ভরে যেতে পারে। রেকর্ডের আরেক নাম রোনালদো। রেকর্ডের বাইরেও আছে আরেক রোনালদোর নাম।

২০১৬-র ইউরো জয়। যে কাজ ইউসেবিও, ফিগোরা করতে পারেননি, সেই কাজ করলেন রোনালদো-পেপেরা। কিন্তু একটা কাঁটাও যেন ফুটে থাকে। ম্যাচের ২৫ মিনিটে চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দলকে তাতিয়ে গেলেন ১২০ মিনিট। আর সেটা নিয়ে কত কটাক্ষ! আসলে লোকে ভুলে যায়, সেবারের গ্রুপের ছবিটা। ‘এফ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে তিনি জোড়া গোল না করলে যে নকআউটেই ওঠা হতো না! সেমিফাইনালে ওয়েলসের বিরুদ্ধে প্রথম গোলটা কার ছিল, সেটাও বোধহয় আলাদা করে মনে করিয়ে দিতে হয়। আরো একটু পিছনে ফিরলে দেখা যাবে ইউরো যোগ্যতা অর্জন পর্বের আই গ্রুপের টপস্কোরারের নাম জনৈক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

আসলে রোনালদো গোল করবেন, ম্যাচ জেতাবেন, এটাই স্বভাবসিদ্ধ ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ব্যতিক্রম হলেই ধেয়ে আসে প্রশ্নবাণ। তাতে অবশ্য লাভই বেশি। ভালোবাসা তাকে শক্তি দেয়, আর ঘৃণা-ব্যঙ্গ করে তোলে আরো শক্তিশালী। আর এই মানুষটা ২০১৬-এর ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে টাইব্রেকারের আগে সতীর্থ জোয়াও মুতিনহোকে সাহস দেন এই বলে, ‘এবার সব স্রষ্টার হাতে।’

এবারের ইউরোয় কি তার থেকে আলাদা? তিনি পেনাল্টি মিস করছেন। যে দৃশ্যের সঙ্গে একেবারেই অভ্যস্ত নয় ফুটবল দুনিয়া। তার পর মাঠেই কেঁদে ফেললেন। শেষ পর্যন্ত পরিত্রাতা হয়ে উঠল গোলরক্ষক দিয়েগো কোস্তার হাত। আবার কিছুটা অতীতে ফেরা যাক। ২০২২-এর কাতার বিশ্বকাপ। গ্রুপ পর্বে ঘানার বিরুদ্ধে ম্যাচে চরমতম ভুল করে বসেছিলেন পর্তুগিজ গোলরক্ষক। প্রায় বল তুলে দিয়েছিলেন ঘানার ইনাকি উইলিয়ামসের পায়ে। গোল হলে গ্রুপের ছবিটা বদলে যেত। শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। ম্যাচ শেষে কাঁধ ঝুঁকে গিয়েছে কোস্তার। তাকে গিয়ে যেটা বললেন রোনালদো, তার আক্ষরিক অর্থ হতে পারে, 'আরে হাসছ না কেন? আমরা তো জিতেছি নাকি! সেটাই আসল কথা। জয় পেয়েছি, এবার মন খুলে হাসো।' সেই কোস্তার হাত তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।

আর আজ? না, মন খুলে হাসার অবকাশ নেই। শুধুই বিচ্ছেদের বিষাদ। বিদায় পরিচিতা… ইউরো মহাকাব্যের শেষে বিদায় এক যোদ্ধার। রোনালদোর পৃথিবীতে যেমন স্রষ্টার হাত আছে, তেমনই তিনি প্রতি মুহূর্তে পরীক্ষা নেন। সেই উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে ২০১৬-এর চ্যাম্পিয়ন। এবার হলো না। কিন্তু নিজের জন্য পরবর্তী লক্ষ্য নিশ্চয়ই ঠিক করে রেখেছেন তিনি। ২০২৬-এর বিশ্বকাপ। শেষবার সর্বস্ব দিয়ে নিজের পরীক্ষা নেবেন তিনি। নিজেকে প্রমাণ করার পথচলা যে তার ফুরোয় না। পথের বিধাতা প্রসন্ন হেসে বলেন, 'পথ আমার তখনো ফুরোয় না। চলে, চলে, এগিয়েই চলে…”
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

 


আরো সংবাদ



premium cement
সিলেট সীমান্তে ৬৩ লাখ টাকার চোরাই পণ্যসহ আটক ২ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োগ করা হবে অবসরপ্রাপ্তদের : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যু : ভাংচুর পুরান ঢাকার ২ কলেজে পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের লেনদেন স্থগিত সাগর থেকে টুনা মাছ আহরণে সহযোগিতা দেবে মালদ্বীপ সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কেন আলোচনায় ২৩ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে কেএনএ’র গোপন আস্তানার সন্ধান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত গাজীপুরে আরো এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান রাজশাহীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধন

সকল