তিন পাহাড়ী কন্যার দান
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ
- ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:৩৩
টানা দ্বিতীয় সাফ ফুটবল জিতে এখন জোয়ারে পুরস্কারে ভাসছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ক্রীড়া মন্ত্রনালয় এক কোটি টাকা দেয়ার পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন থেকে দেড় কোটি টাকার দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও ২০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার দেয়। আরো পুরস্কার অপেক্ষা করছে সাবিনাদের জন্য।
কয়েকটি সংস্থা ঋতু পর্না-মনিকা চাকমাদের সংবর্ধ্বনা দেবে। এজন্য সাফজয়ীরা বাফুফে ভবনেই অবস্থান করছেন।
এবারের এই সাফ জয়ে অন্যদের মতো অবদান তিন চাকমা মেয়ে মনিকা চাকমা, রুপনা চাকমা এবং ঋতু পর্না চাকমারও। বিশেষ করে ফাইনালে এই তিন পাহাড়ী কন্যার ভূমিকাটা বিশাল। অন্যদের ছাড়িয়ে গেছেন তারা। নেপালের বিপক্ষে মনিকার গোলেই পিটার জেমস বাহিনীর এগিয়ে যাওয়া। এরপর নেপাল সমতা আনলেও ঋতু পর্নার দর্শনীয় গোলে ২-১ এ জয়ে শিরোপা ধরে রাখা। অরপর পোস্ট আগলে রেখে বাংলাদেশের শিরোপা নিশ্চিত করার বাকি কাজটি করেছেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। ঋতু হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। আর ২০২২ এর মতো এবারো সাফের সেরা গোলরক্ষক রুপনা।
মনিকা এবং রুপনা আগ থেকেই সিনিয়র বাংলাদেশ দলে। ঋতু ডাক পান ২০১৮ সালে। সে বছরই অলিম্পিক গেমস বাছাই খেলায় ভারতের বিপক্ষে এক সাথে খেলা এই তিন চাকমা ফুটবলারের। যদিও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমস্যার কারনে খেলা হয়নি মনিকার। বয়সে ছোট ঋতুর সেবছরই সিনিয়র লাল-সবুজ জার্সীতে অভিষেক। ২০২২ সাফেও ঋতু ছিলেন বদলী খেলোয়াড়। ওই সময় মনিকা ও রুপনা ছিলেন দলের নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
তবে এবারের সাফে বাম পায়ের ঋতুকে ছাড়া একাদশ চিন্তাই করতে পারেননি কোচ বাটলার। তিন পাহাড়ী মেয়ের অসামান্য অবদানেই ফাইনালে চুপসে যায় নেপালীরা। এই মুহূর্তটাকে নিজেদের জন্য বিশেষ কিছু মনে করছেন তিন জন। ঋতু পর্নার মতে, ‘আমাদের জন্য খুবই স্মরণীয় সেই মুহূর্তটি।’ মনিকার মতে, ‘হান্ডেডে হান্ডেড শিরোপা জয়ের সেই মুহূর্তটি।’
খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ির মেয়ে মনিকা ২০১৩ সালে আন্ত: প্রাথমিক স্কুল ফুটবল দিয়ে এই খেলায় আসেন। ২০১৫ সালে জুনিয়র জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর লাল-সবুজ জার্সী প্রথম গায়ে তোলা শুরু। সে থেকে এখন পর্যন্ত টিকে আছেন দাপটের সাথে। ২০১৮ সালে তিনি প্রথম সিনিয়র দলে সুযোগ পান। এ পর্যন্ত ১৬টি আন্তর্জাতিক গোল তার। তবে তার সবেচেয়ে মনে রাখার মতো গোল ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক ফুটবলে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে দূর থেকে করা গোলটি।
পাশে থাকা ঋতু কথাটি টেনে নিয়ে বলেন, ‘ওই গোলের জন্যতো ফিফা মনিকাকে ম্যাজিকাল চাকমা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।’ মনিকা এরপরেই স্থান দিচ্ছেন এবারের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে করা গোলকে। জানান, ফাইনালে যখন বলটি আমি পেলাম তখন চিন্তায় ছিল যেভাবেই হোক গোল করতে হবে। শেষ পর্যন্ত গোলটি করে দলকে এগিয়ে নিয়েছি।
রাঙ্গামাটির ঘাড়গা ইউনিয়নের মগাছড়ির মেয়ে ঋতুর প্রিয় এবং স্মরণীয় ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে করা বাম পায়ের সেই অসাধারণ গোলটি। তার আন্তর্জাতিক গোল মোট ১৪টি। ২০১৮ সালে মিয়ানমারের বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেক ঋতুর। জানান, ২০১২ সালে আমি ফুটবলে আসি। আমাদের এই পর্যায়ে আসাটা স্থানীয় কোচ রিবচেন চাকমার কল্যাণেই। তিনি না থাকলে আজ আমাদের এখানে পেতেন না। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আমাদের তুলে এনেছেন। মনিকাকেতো খাগড়াছড়ির আরো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নিয়ে আসেন।
রুপনা ফুটবলে আসা আন্তঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা ফুটবল দিয়ে। ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে হওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ফুটবল দিয়ে তার বাংলাদেশ দলে খেলা শুরু। তাকে ছাড়া বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক পজিশনটা কল্পনাই করা যায় না।
এক সাথে তিন চাকমা মেয়ের অবদানে বিশেষ করে ফাইনালে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে শিরোপা এনে দেয়। ঋতুর মতে, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই গর্বের। আমাদের জাতি গোষ্ঠীর মতো পুরো বাংলাদেশীরাও আমাদের নিয়ে গর্ব করে। আমরা সেই ছোট বেলা থেকেই এক সাথে আছি। স্কুলে এক সাথে পড়েছি। আমাদের স্কুল, আমাদের এলাকার লোকজন সবাই ভীষন আনন্দিত।’ মনিকার দেয়া তথ্য, ‘শুরু বাংলাদেশের লোকজনই নয়, বিদেশে যেসব চাকমারা আছেন তারাও অভিনন্দন জানাচ্ছেন এই অর্জনের জন্য।’
সাবিনা, সুমাইয়া, ঋতু, মনিকারা বিদেশী ক্লাবে খেলছেন। সেই সুযোগ এখনও আসেনি রাঙ্গামাটির ভ’ইয়াদানের মেয়ে রুপনার। এই আফসোস তাকে বেশ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। জানান, ‘ওরা বিদেশী ক্লাবে খেলছে। আমি এখনও খেলতে পারেননি। এতে কষ্ট তো একটু আছেই।’ আর ঋতুর কস্ট ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ দলে থাকতে না পারাটা। সেই দলে মনিকা ও রুপনা ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা