ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
হাসিনা-কাদেরসহ ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে আরো এক হত্যা মামলা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ সদস্যসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৫৪ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আবেদনটি করেন গত ১৮ জুলাই নিহত ওই ছাত্রের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া। এ সময় ফারহানের মা ও বোন উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আজ প্রথম ভিক্টিম পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। যে অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে সে ঘটনাটি ওই দিন ১৮ জুলাই দেশের অধিকাংশ মানুষকে কাঁদিয়েছিল। ওই সময়ও ছাত্র আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। সে সময় ১৮ বছরের একটি বাচ্চা ছেলে ফাইয়াজ, সে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র। তার মিস্টি হাসির ছবি গোটা দেশ এবং গোটা দুনিয়া দেখেছে। তাকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে বাবা-মায়ের সাথে এসেছিলেন ফাইয়াজের বোন সায়মা ইসলাম ফারিন। ট্রাইব্যুনালের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি ভাই হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, ভাইয়া আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমি আর সাধারণ জীবনযাপনে ফিরতে পারিনি। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি ক্ষণে ভাইয়ার স্মৃতি ভেসে ওঠে। ওর জন্য আমার মন সারাক্ষণ কাঁদে। এখন পর্যন্ত আমার পড়ালেখা শুরু করতে পারিনি। আমি আজ আদালতে এসেছি ভাইয়ার হত্যার যেন বিচার হয়। এই বিচার যেন ঝুলে না থাকে।
অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই সকাল থেকেই রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বর এলাকায় রাপা প্লাজার সামনে মূল সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। যেখানে ধানমন্ডি এলাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আন্দোলনকারীদের সাথে মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে ফারহান ফাইয়াজও অংশ নেন। সকাল থেকেই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। সেই সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এইচএসসি ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন। ফারহানের বন্ধুরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে লালমাটিয়ায় অবস্থিত সিটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ২৩ থেকে ৫৪ ক্রমিক নম্বর আসামিরা ১৮ জুলাই দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সরাসরি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন এবং গুলিবর্ষণ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ফারহান ফাইয়াজ সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ১২টি অভিযোগ দায়ের করা হলো।
আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে সাধারণ নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা, নির্যাতন, আটক, গুম করার অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ফারহান ফাইয়াজকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন।
আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যা বের সাবেক ডিজি হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মোহাম্মদপুর জোনের তৎকালীন ডিসি এইচ এম আজিমুল হক, এডিসি রওশানুল হক সৈকত, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন, এসআই শাহরীয়া আলম, ওসি মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, ধানমন্ডি থানার ওসি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি- সেক্রেটারি, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারি, জহির উদ্দিন আহমেদ ওরফে বিচ্ছু জালালসহ ৫৪ জন।
শ্রমিকদল কর্মী হত্যা, শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় শ্রমিকদল কর্মী রিয়াজুল তালুকদারকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে নিহতের ভাই রুবেল তালুকদার বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদির জবানবন্দী গ্রহণ করে অভিযোগটি যাত্রাবাড়ী থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। বাদিপক্ষের আইনজীবী জহিরুল হাসান মুকুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল খান, সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল, সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সাবেক সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, নাহিম রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের আরো ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট বিকেল ৫টার সময় যাত্রাবাড়ী থানার চার রাস্তার মোড়ে হাজার হাজার ছাত্র জনতা এক দফা আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করছিল। সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে হাজার হাজার ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালায়। এ সময় বাদির ভাই যাত্রাবাড়ী থানার শ্রমিকদল কর্মী মো: রিয়াজুল তালুকদারকে তারা গুলি করে হত্যা করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা