২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ

বাধা নয়, কাজ করতে দিন

কবে নির্বাচন সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন : পিআইডি -

দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের ‘গণতন্ত্রহীনতায়’ দেশের যে পরিস্থিতি হয়েছিল, তা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে তার সরকার প্রস্তুত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফল ধরে রাখতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেছেন, রাতারাতি এ অবস্থা থেকে উত্তরণ কঠিন। দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই সপ্তাহ শেষে জনগণের যে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে, তা অনুপ্রেরণামূলক।
এ অবস্থায় সরকারকে ‘জিম্মি করে’ দাবি আদায়ের চেষ্টা না করারও অনুরোধ করেন তিনি।
দায়িত্ব নেয়ার ১৭ দিনের মাথায় রোববার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার এই ভাষণ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতাকে স্মরণ করে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ভাষণ শুরু করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর এখন বিভিন্ন পক্ষ নানা দাবি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
এভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজে বাধা না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে।
‘গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখকষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটি আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসঙ্গতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব।
‘কিন্তু আমাদেরকে ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না।’
ঘেরাও কর্মসূচি ও সমাবেশের মতো যেসব কর্মসূচি চলছে, তা বন্ধে সবার সহযোগিতা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।’
বিগত সরকারের সময়ে ‘দলীয়করণের ফলে হওয়া বৈষম্য দূরীকরণ’ এবং প্রশাসনে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেও সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমাদেরকে আইনশৃঙ্খলা অঙ্গনে অস্থির পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনে দেশপ্রেমিক সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজে যোগ দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রশাসনে চরম দলীয়করণ করার ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘ দিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
‘আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছি। তবে প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একই সাথে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সে জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায় সেটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলব, আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
কবে নির্বাচন সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : নির্বাচন কখন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগে সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগত সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব। যাতে হঠাৎ করে এ প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে। কখন আপনারা আমাদের বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সঙ্কটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সব শক্তি দিয়ে এ দায়িত্ব পালন করব। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এ লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।’
সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করব একটা আলোচনা শুরু করতে। আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাব, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এ আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। দিকনির্দেশনা না পেলে আমরা দাতা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আলোচনায় দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হতে পারছি না।’


আরো সংবাদ



premium cement
বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয় হিজবুল্লাহর একাধিক অবস্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গৃহবধূ নিহত মানবতার কল্যাণই জামায়াতের রাজনীতির মূলমন্ত্র : ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যু, সরকারের পদক্ষেপ কী? চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্যাকিং গ্রুপকে টার্গেট করছে যুক্তরাষ্ট্র ভারত ৪০০-এর আগেই গুটিয়ে যাবে : মাহমুদ হাসান ট্রাম্পের টার্গেট ইউক্রেন, কমলার গাজা সুইয়িং স্টেটগুলোর ভোটে প্রেসিডেন্ট হবেন ট্রাম্প! ইউক্রেনে যাচ্ছে ভারতের অস্ত্র! ক্ষুব্ধ রাশিয়া মার্কিন আদালতে অজিত ডোভালকে সমন, খালিস্তানি নেতাকে খুনের চক্রান্তের অভিযোগ

সকল