২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কিছু ব্যাংক চলছে ঋণ করে

দুই দিনে ধার করল ৪০ হাজার কোটি টাকা
-

ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে কিছু ব্যাংক। টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত অর্থ না পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও নিয়মিত ঋণ নিচ্ছে। গত দুই দিনে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো ধার করেছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একাই ধার দিয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক শ্রেণীর ব্যাংক পরিচালকরা ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু দিন শেষে ওই অর্থ পরিশোধ করছেন না। আবার ব্যাংকের খাতায় খেলাপি ঋণ দেখাচ্ছেন না। অথচ এসব ঋণের বিপরীতে অর্জিত আয় মুনাফা হিসাবে দেখানো হচ্ছে। আবার নানা সুবিধার মাধ্যমে কিছু ব্যবসায়ী দিনের পর দিন ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ না করেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গ্যাস সঙ্কটের কারণে অনেক কলকারখানার শতভাগ উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি ডলার সঙ্কটের কারণে শিল্পের কাঁচামালও আমদানি করতে পারছে না কিছু খাতের ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা, ভবন ভাড়াসহ নানা ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। একই সাথে মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক আমানতকারী ব্যাংক থেকে তাদের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। সবমিলেই ব্যাংকের নগদ আদায় কমে গেছে। আর নগদ আদায় কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনায়। এরই প্রভাবে কিছু ব্যাংকের টাকার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ জন্য প্রতিদিনই কলমানি মার্কেটসহ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে।

ব্যাংকিং খাতের সার্বিক এ চিত্র তুলে ধরে গত ১৩ জুলাই ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আক্ষেপ করে বলেছেন, ঋণ আদায় না করে ঋণের সুদকে আয় দেখিয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে ব্যাংক। সেই মুনাফার অর্থ থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। সরকারকে ট্যাক্সও দিচ্ছে। আসলে কোনো আয়-ই হয়নি। আমানতের অর্থ লুটে খাচ্ছে কয়েকটি গোষ্ঠী। সরকারের সহযোগিতায় তারা পুষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের কারণেই এখন আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিক খাতের ক্লিনিং করতে হবে জানিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলো সমাধান না করে জিইয়ে রাখছে। অর্থাৎ ঘরের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ঝাড়ু দিয়ে কারপেটের নিচে রেখে দিচ্ছে। এতে করে কি আসলে দুর্গন্ধ দূর হবে? না, এটা আবার দুর্গন্ধ ছড়াবে। ব্যাংককে মন্দ ঋণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার লুকিয়ে এ খাতের সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য আর্থিক খাতের ক্লিনিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। এ উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে।

টাকা ধার করছে ব্যাংকগুলো : বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ১৪ ও ১৫ জুলাই দুই দিনে ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করেছে মোট ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একাই ধার দিয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। গত ১৪ জুন ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করেছে মোট ১১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। আর ১৫ জুলাই এক দিনে ব্যাংকগুলো টাকার সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ বাংক থেকে ধার করেছে ১৯ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে সর্ব্বোচ্চ ১০ শতাংশ সুদ গুনতে হয়েছে।

অপর দিকে কলমানি মার্কেট থেকে দুই দিনে ধার করেছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪ জুলাই ধার করেছে ৫ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা এবং ১৫ জুলাই ধার করেছে ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এজন্য ব্যাংকগুলোকে সুদ গুনতে হয়েছে সর্বনিম্ন ৯ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement