তিস্তা নিয়ে ভারতের প্রস্তাব আগে বিবেচনা করা হবে
- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:১৭
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারতের প্রস্তাব আগে বিবেচনা করা হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তিস্তা নদী বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী। এই যৌথ নদী নিয়ে ভারত একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। একই সাথে ভারত থেকে একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে আসবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে যৌথভাবে সমীক্ষার পর প্রকল্পটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু তিস্তা যৌথ নদী এবং যাদের সাথে এই যৌথ নদী তাদের প্রস্তাব আছে, সুতরাং সেই প্রস্তাবটিই আমাদের আগে বিবেচনা করতে হবে, এটাই স্বাভাবিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এ সব কথা বলেন। শেখ হাসিনা আজ সোমবার চীন যাচ্ছেন। এই সফরে অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চায়না মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রফতানি, জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারক সই (এসওইউ) হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিভেদের কারণে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনো আশার আলো দেখতে না পেয়ে বাংলাদেশ নদী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ, দুই পাড় রক্ষা, সেটেলাইট টাউনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অর্থায়ন চেয়েছিল বাংলাদেশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন প্রস্তাবিত প্রকল্পটির সম্ভাবতা যাচাই করে। বাংলাদেশের বিগত জাতীয় নির্বাচনের পর তিস্তা প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়ো ওয়েন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের কিছুদিন আগে দেশটির তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়েত্রা ঢাকা এসে তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময় তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে পাঠানোর ঘোষণা দেয়। তিস্তা প্রকল্পটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সংযোগ স্থাপনকারী ‘চিকেন নেক’ সংলগ্ন হওয়ায় এতে চীনের উপস্থিতি নিরাপত্তা হুমকি হিসাবে বিবেচনা করছে দিল্লি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অনুরোধে তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন। তবে প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পের ইস্যুটি উত্থাপন করা হবে না। চীন যদি তিস্তা প্রকল্প উত্থাপন করে, তবে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কট কাটাতে চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত সইয়ের জন্য কোনো ঋণ চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক আমাদের তালিকায় নেই। অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি এমওইউ হবে। এর ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের অগ্রাধিকারের নিরিখে এবং সমঝোতার ভিত্তিতে ব্যাংকিং বা অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতা চাওয়া হবে। আমাদের রিজার্ভ এখন ভালো আছে। রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশ বাজেটারি সাপোর্ট নিয়ে চীনকে কোনো প্রস্তাব দিয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কোনো প্রস্তাব নেই। সব প্রস্তাব আমরা সবসময় গ্রহণ করি না। আমাদের প্রয়োজনের নিরিখে এবং আমাদের প্যারামিটারগুলো সন্তুষ্ট হলে তখনই আমরা সেটা সহায়তা গ্রহণ করি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরে আবার অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সহযোগিতা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আমরা নেইনি।
বাণিজ্য বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীনের সাথে আমাদের বাণিজ্য বৈষম্য অনেক বেশি। এই বৈষম্য মেটানোর জন্য আমরা যাতে আরো বেশি করে কৃষি এবং অন্যান্য পণ্য রফতানি করতে পারি সে জন্য অশুল্ক বাধাসহ অন্য যে বাধাগুলো আছে তা দূর করা এবং চীনের আমদানিকারকদের উৎসাহিত করার ওপর আমরা জোর দেবো। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। চীনের অনেক বিনিয়োগ আছে। তারা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে। উন্নয়ন ইস্যুটি আমাদের অগ্রাধিকারে থাকবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা অগ্রাধিকার পাবে।
তিব্বত ও তাইওয়ান বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতায় বিশ্বাস করি।
কর্মসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী সোমবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন। তিনি একই দিন চীনের স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়া হবে এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে অভ্যর্থনা জানানো হবে। অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা