১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কবি আসাদ বিন হাফিজ আর নেই

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কবি আসাদ বিন হাফিজের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় : নয়া দিগন্ত -


বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও ৮০-এর দশকের খ্যাতিমান কবি আসাদ বিন হাফিজ (৬৬) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ‘অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার’ খ্যাত কবি গত কয়েক দিন ধরেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে ছিলেন। রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শোকে ভেঙে পড়েন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। তবে রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এ সংবাদে তার অনুরাগী অগণিত পাঠক, কবি, সাহিত্যিক ও সাস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। খাতিম্যান এই কবি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

গতকাল জোহর নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ড. আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, ডিইউজের বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম, দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রব, অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, কবি হাসান আলিম প্রমুখ।

নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ নিজ গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আসরের নামাজের পর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বড় ভাই অধ্যাপক ইউসুফ আলীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
কবি আসাদ বিন হাফিজ ১৯৫৮ সনের ১ জানুয়ারি গাজীপুরের কালীগঞ্জের মোক্তারপুরের বড়গাঁও এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি নিজ গ্রাম বড়গাঁও প্রাইমারি স্কুলে এবং বাড়ির পাশের মক্তবে আরবি শেখেন। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৮৩ সালে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসায়। পরে মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলার প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি মাসিক পৃথিবী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক, বাংলা সাহিত্য পরিষদের নির্বাহী, প্রীতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন।

কবি ফররুখ আহমেদের অনুসারী কবি আসাদ বিন হাফিজ ছোটবেলা থেকেই ইসলামিক সাংস্কৃতিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি তার সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অনুপ্রেরণা প্রকাশ করেছেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারেও অত্যন্ত গুরুত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সাহিত্যে বিপ্লবী চিন্তা চেতনার প্রকাশ ঘটে। তিনি ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন।
কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনাসহ সাহিত্যের সব শাখাতেই তিনি অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার লেখা প্রায় ৮১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘কি দেখো দাঁড়িয়ে একা সুহাসিনী ভোর’ এবং ‘অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার’।
কবি আসাদ বিন হাফিজ তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ কলম সেনা পুরস্কার (১৯৯৪), কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এমইউ আহমেদ পুরস্কার (১৯৯৭), বাংলাদেশ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার (১৯৯৭), ছড়ার ডাক পদক ও সম্মাননা (২০০৪), মেলোডি শিল্পীগোষ্ঠী পদক (২০০৪), কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪), গাজীপুর সংস্কৃতি পরিষদ কৃতী সংবর্ধনা (২০০৪), মরহুম ওমর ফারুক সম্মাননা স্মারক ‘কাব্যরতœ’ ২০১৬ ও সাহিত্যচর্চা সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা ও ইসলামী সাহিত্যে তার অবদান অতুলনীয়।
শোক : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতিমান বিশ্বাসী কবি ও সাহিত্যিক আসাদ বিন হাফিজের ইন্তেকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক শোকবাণীতে বলেন, কবি আসাদ বিন হাফিজ ছিলেন একাধারে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতিমান বিশ্বাসী কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী। তিনি আদর্শিক দিক দিয়ে ফররুখ আহমদের অনুসারী ছিলেন। তার রচনায় বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবী ধারা চোখে পড়ার মতো। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তার রচিত শিশুসাহিত্য ও ছড়া সমসাময়িক যুগে অতুলনীয়। তিনি ছিলেন বিরল সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার ও প্রকাশক। তার বহু গ্রন্থ, ইসলামী গান ও কবিতা নতুন প্রজন্মকে ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে।

তিনি আরো বলেন, তার ইন্তেকালে ইসলামী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং অহিভিত্তিক সাহিত্য অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। সদা হাস্যোজ্জ্বল, সাদামাটা, বিনয়ী ও নিরহঙ্কার ব্যক্তিত্বের ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে ক্ষমা ও রহম করুন এবং তার কবরকে প্রশস্ত করুন। তার গুনাহখাতাগুলোকে ক্ষমা করে দিয়ে নেকিতে পরিণত করুন। কবর থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রত্যেকটি মঞ্জিলকে তার জন্য সহজ, আরামদায়ক ও কল্যাণময় করে দিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন এবং তার শোকাহত পরিবার-পরিজন ও সহকর্মীদেরকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন। এছাড়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল ও সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম এক যৌথ শোকবার্তায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আসাদ বিন হাফিজের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রফেসর ড. এম কোরবান আলী ও জেনারেল সেক্রেটারি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করীম, কবিতা বাংলাদেশের সভাপতি কবি আল মুজাহিদী, সহসভাপতি ও কবিবন্ধু মোশাররফ হোসেন খান, সোলায়মান আহসান, হাসান আলীম, চৌধুরী গোলাম মাওলা, মুকুল চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক কবি ও গবেষক প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ, দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও সেক্রেটারি ড. মোস্তফা মনোয়ার, সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি যাকিউল হক জাকী, সেক্রেটারি মাহবুব মুকুল প্রমুখ গভীর শোক ও পবিরারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement