সিসিইউ থেকে কেবিনে খালেদা জিয়া
সুচিকিৎসার দাবি বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্টজনদের- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। হৃদযন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার বসানোর পর সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৫টায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের কেবিনে নেয়া হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার হার্টে পেসমেকার স্থাপনের পর সোমবার আরো বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। সেসব রিপোর্ট মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা পর্যালোচনা করে তাকে সিসিইউর সব সুবিধাসংবলিত কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে এখন তার চিকিৎসা চলছে।
এর আগে রোববার বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার সফলভাবে বসানো হয়। এরপর তাকে সিসিইউতে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
গতকাল দুপুরে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড বৈঠকে বসে। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের গত ১২ ঘণ্টার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন। এর পর সিসিইউতে খালেদা জিয়াকে বোর্ড সদস্যরা দেখতে যান। এরপর আবার বৈঠক করে তাকে কেবিনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। মেডিক্যাল বোর্ডের এই বৈঠকে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা: জুবাইদা রহমানসহ অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। তার হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। একটাতে রিং পরানো হয়েছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে বিদেশী চিকিৎসক ও মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে পেসমেকার বসানো হয়েছে বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ জানান। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গত ১১ জানুয়ারি তিনি বাসায় ফেরেন। সে সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে তার পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এমন পরিপ্রেক্ষিতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এরপর তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পর তাকে বাসায় নেয়া হয়েছিল।
সুচিকিৎসার দাবি ৭১ বিশিষ্ট নাগরিকের : সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৭১ জন বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তি। এক যুক্ত বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় সরকারের হয়রানির শিকার হয়ে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্দী জীবনযাপন করার ফলে নানাবিধ স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন যা বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার অমানবিক ব্যবহার ও আচরণ করছে, যা সাংবিধানিক লঙ্ঘন। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে অ্যাডভান্সড সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া জরুরি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনদের মধ্যে রয়েছেন, বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ, কবি আল মুজাহেদী, প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, প্রফেসর ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার চৌধুরী, প্রফেসর এম রফিকুল ইসলাম, কবি আবদুল হাই শিকদার, এরশাদ মজুমদার, রুহুল আমিন গাজী, প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, প্রফেসর ড. সদরুল আমীন, এডভোকেট মো: আবুল কাসেম, প্রফেসর ড. আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, কাদের গনি চৌধুরী, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, আলমগীর মহিউদ্দিন, প্রফেসর ড. ওবায়দুল ইসলাম (ঢাবি), প্রফেসর ড. মোহা: এনামুল হক (রাবি), ডা: ওয়াসিম হোসেন, প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান (ঢাবি), প্রফেসর ড. ইয়ারুল কবীর (ঢাবি), প্রফেসর ড. ফজলুল হক (বাকৃবি), প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান (ঢাবি), প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান (জাবি) প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ (রাবি), প্রফেসর ড. মীর্জা গোলাম হাফিজ কেনেডী (বাকৃবি), প্রফেসর ড. শামছুল আলম (জাবি), প্রফেসর ড. আল মোজাদ্দেদ আলফে সানী (ঢাবি), প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন (ইবি), মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, খুরশীদ আলম, কবি হাসান হাফিজ, কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, প্রফেসর ড. নছরুল কাদের (চবি), প্রফেসর ড. রেজাউল করিম (খুবি), প্রফেসর ড. সাজেদুল করিম (শাবিপ্রবি) প্রমুখ।
বিদেশে চিকিৎসার দাবি গণতন্ত্র মঞ্চের : অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার দাবি করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। গতকাল সোমবার গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের নেতৃবৃন্দ আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। নেতৃবৃন্দ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে যে, তিনি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। দেশে তার উন্নত চিকিৎসার সুযোগ নেই। ফলে খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা জরুরি। কিন্তু সরকার চিকিৎসকদের পরামর্শ উপেক্ষা করে খালেদা জিয়ার প্রতি অমানবিক ও অসাংবিধানিক আচরণ করছে। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৯ বছর। শর্তসাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও প্রবীণ বয়সেও খালেদা জিয়া কার্যত কারাবন্দী। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নানা রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসক দল তার অসুস্থতার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। দেশের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, একজন নারী হিসেবে উপরন্তু একজন জেলবন্দী ব্যক্তির যথাযথ সুচিকিৎসা পাওয়া ন্যূনতম মানবাধিকারের অংশ।
ইউট্যাব : সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। সময়ক্ষেপণ না করে অবিলম্বে তাকে মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সোমবার ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো: মোর্শেদ হাসান খান এই আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিটি দিয়েছেন।
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাজীপুর মহানগর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সোমবার বিকেলে নগরীর রাজবাড়ি সড়কের দলীয় কার্যালয়ে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো: শাহাদাত হোসেন শাহিনের সভাপতিত্বে এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আশরাফ নেওয়াজ চৌধুরী শাওনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাসুদুল কবীর মোনায়েম, জহিরুল ইসলাম জহির, শিপলু বখশি, সিরাজুল ইসলাম সাথী, তুশার খান, মুশফিকুর রহমান নজরুল, আব্দুল মান্নান মণ্ডল, মতিউর রহমান মতি, আপেল মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী মোল্লা, প্রিন্স মাহমুদ প্রমুখ।
অপরদিকে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পুর উদ্যোগে টঙ্গী সমাজকল্যাণ রোডস্থ তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক এজিএস সাজেদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ফারুক হোসেন খান, যুবদল নেতা নাজমুল হোসেন মণ্ডল, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা রাতুল ভূঁইয়া, ছাত্রদল নেতা সুমন লস্কর, ইউসুফ হোসেন প্রমুখ।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় জয়পুরহাট জেলা বিএনপির উদ্যোগে মাছুয়া বাজার জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, জয়পুরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহাব, শহর বিএনপির আহ্বায়ক মতিউর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিআইপি আনেয়ারুল হক আনু, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এ টি এম শাহেনেওয়াজ কবির শুভ্র, জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল গফুর মণ্ডল, আনিসুর রহমান তালুকদার, আব্দুস সামাদ বাবু, শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি, স্বেচ্ছাসেবকদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম, তাঁতিদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম, তৌফিক, মতিন, যুবদল সদস্য সোহাগ, সেঞ্জু, সাগর, তারেক ইবনে ফিরোজ, বেলায়েত হোসেন বেনু, বাদশা, সম্রাট, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাইসুল আলম রিপন, শহর ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ শুভ, কলেজ শাখা ছাত্রদলের নাইম, শহর শাখার আলী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক রাতিক, জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক কনক প্রমুখ।
গাবতলী (বগুড়া) সংবাদদাতা : বগুড়ার গাবতলী নশিপুরের বাগবাড়ী গ্রামবাসীর আয়োজনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও মুক্তি কামনায় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে গতকাল বিশেষ দোয়া করা হয়েছে।
এতে অংশ নেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সিনিয়র সহসভাপতি এবং সাবেক এমপি মো: হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, জেলা বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাজ্জাকুল আমিন রোকন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আরিফুর রহমান মজনু, উপজেলা বিএনপির ক্ষুদ্র-ঋণ ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, ছাত্রদল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা