১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

৩ ইস্যুতে বিএনপির নতুন কর্মসূচি

তৃণমূলের কথা শুনতে যুগ্ম মহাসচিবদের বিশেষ দায়িত্ব
-

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি ও দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিবদের সাথে হাইকমান্ডের বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়ে এমন প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বৈঠক করে এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। এ দিকে দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি তৃণমূলের অভিযোগ-অনুযোগ শোনার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এ জন্য যুগ্ম মহাসচিবদের প্রতিদিন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুগ্ম মহাসচিবদের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে দল। সে আলোকে বিএনপি শিগগিরই নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হতে পারে।

জানা গেছে, দলীয়ভাবে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি যুগপৎভাবেও রাজপথে সক্রিয় হওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলনে মিত্রদের সাথে আবারো বৈঠকে বসতে পারে দলটি।

সরকার বিরোধী আন্দোলন নতুন করে গড়ে তোলা, সেটার কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং নতুন কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গত ১২ থেকে ১৬ মে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে যুগপতের শরিকদের কাছ থেকে প্রস্তাব ও মতামত নেয় বিএনপি। একই সাথে সিদ্ধান্ত হয়, মিত্রদের সাথে সিরিজ বৈঠক অব্যাহত রাখবে তারা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে একদফা দাবিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে বিএনপি। তবে সরকারের দমন-পীড়নের পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে কার্যকর ও প্রত্যাশিত ভূমিকা না রাখায় সরকারবিরোধী সেই আন্দোলনে চূড়ান্ত সাফল্য আসেনি বলে দলটির মূল্যায়নে উঠে আসে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনকে গতিশীল করার অংশ হিসেবে এবার তৃণমূলের কথা শোনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলে এমন উদ্যোগ অতীতে কখনোই ছিল না বলে দাবি নেতাদের। তিনজন নতুনসহ পাঁচজন যুগ্ম মহাসচিবকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসবেন। রোস্টার অনুযায়ী, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল শনিবার, আব্দুস সালাম আজাদ রোববার, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সোমবার, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মঙ্গলবার, খায়রুল কবির খোকন বুধবার এবং আব্দুস সালাম আজাদ বৃহস্পতিবার এই দায়িত্ব পালন করবেন।

গত রোববার থেকে যুগ্ম মহাসচিবরা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর সাতজনকে যুগ্ম মহাসচিব পদে পদায়ন করা হয়। তবে তাদের সেভাবে কোনো দায়িত্ব ছিল না। গত ১৩ জুন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ৪৫ জনের বড় রদবদলে পাঁচজন যুগ্ম মহাসচিবকে পদোন্নতি দিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়। একই সাথে দু’জন সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদককে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়।

জানা গেছে, আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে সংগঠনকে গতিশীল করতে যুগ্ম মহাসচিবদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এখন থেকে দলের সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকসহ নানান বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবেন তারা। বিএনপির তৃণমূল নেতাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তারা তাদের সুখ-দুঃখ, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সমস্যাবলি আমলাতান্ত্রিক সাংগঠনিক জটিলতায় যথাসময়ে দলের কাছে পৌঁছাতে পারেন না। ঢাকায় গেলেও যথাযথ চ্যানেলে এসব সমস্যার কথা জানাতে তাদের দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এই বিষয়টি হাইকমান্ডের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে দলীয় কার্যালয়ে বসে যুগ্ম মহাসচিবরা তৃণমূল থেকে আসা যেকোনো অভিযোগ, সমস্যার কথা শুনবেন এবং সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকের সাথে পরামর্শক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দিবেন। অন্যথায় তারা বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতনদের নজরে আনবেন এবং দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবেন। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলে সংগঠন আরো গতিশীল হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে বিএনপির দু’জন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা দলের সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তৃণমূলের সমস্যাদি শোনার পাশাপাশি নির্দিষ্ট দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখবেন এবং প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতনদের অবগত করবেন। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের কেউ কিংবা কোনো গণমাধ্যমে বিএনপি ও দলের কাউকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর কোনো বক্তব্য আসলে সেগুলো দলের নজরে আনা এবং প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। দলীয় কার্যালয়ে গতকাল দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, দলের সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে বিএনপি কার্যালয়ে প্রতিদিন যুগ্ম মহাসচিবরা সবাই ধারাবাহিকভাবে বসবেন। তারা সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়েই নজর রাখবেন। বিভিন্ন জেলাসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন ইউনিট থেকে যারা আসবেন, তাদের কোনো অভিযোগ-সমস্যা থাকলে তা শুনবেন, নোট করবেন এবং সে অনুযায়ী পরামর্শ দিবেন। এই কার্যক্রম দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা তার।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে আগামীতে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে একজন করে যুগ্ম মহাসচিবকে সম্পৃক্ত করা হতে পারে, যারা তৃণমূলের বিভিন্ন বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকদের পরামর্শ দিবেন। সে আলোকে আগামীতে দলে যুগ্ম মহাসচিবদের সংখ্যা ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ জন করা হতে পারে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, শিগগির নতুন কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। হাইকমান্ডের সাথে যুগ্ম মহাসচিবদের ভার্চুয়াল বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ এবং ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও ক্ষমতাঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি-লুটপাট, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিসহ নানান বিষয়ে কর্মসূচি দেয়ার প্রস্তাব করেন যুগ্ম মহাসচিবরা। বৈঠকে সম্প্রতি ভারতের সাথে সম্পাদিত নানা চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়। এসব চুক্তি এখন খতিয়ে দেখছে বিএনপি। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু থাকলে তার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নতুন প্রেসিডেন্ট রচি, সম্পাদক মশিউর সাভারে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে ট্যানারীতে শ্রমিক সমাবেশ ভারতে উপাসনাস্থল নিয়ে আপাতত নতুন মামলা করা যাবে না সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারকে যে বার্তা দিলো পশ্চিমতীরের ইসলামী আন্দোলন প্রধান বিএনপি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন চায় না : ড. মঈন খান রাজশাহীতে আরো ২ মামলায় গ্রেফতার সাবেক এমপি আসাদ স্কুলে ভর্তির লটারির ফল জানা যাবে যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের রুখে দিতে হবে : জাহিদ হোসেন পতিত স্বৈরশাসকের জন্য ভারত মায়াকান্না করছে ‘অপশক্তিকে রুখে দিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে’ বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের আহ্বান

সকল