বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চলবে ভারতের ট্রেন; তিস্তা প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে ভারত
- বিবিসি
- ২৩ জুন ২০২৪, ০৩:০৩
বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল ট্রানজিট ও তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে দুই দেশের সরকার প্রধানের বৈঠকে। শনিবার ভারতের নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোট ১০টি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ।
বৈঠক শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে ভারতের একটা অংশ থেকে ভারতেরই আরেকটা অংশে রেলওয়ে সংযোগ চালু করতে দুই নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
ট্রানজিট চালুর পর ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে প্রবেশ করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারত প্রবেশ করবে। পরীক্ষামূলকভাবে আগামী মাসেই বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের রেল চলবে বলে জানিয়েছেন মি. কোয়াত্রা।
বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানিয়েছেন, দুই দেশের নেতাদের বৈঠকে রেল ট্রানজিটের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়।
তিস্তা নদীর পানির সঠিক ব্যবহারে তিস্তা প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে দুই সরকার প্রধানের এই বৈঠকে।
বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কারিগরি দল শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে ফলপ্রসূ বলে দাবি করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও যোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি’।
টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেশটিকে কোনো সরকারপ্রধানের এটাই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
ভারতের পরীক্ষামূলক ট্রেন আগামী মাসেই : বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দু’টি পণ্যবাহী। বর্তমান পদ্ধতিতে ভারতীয় ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশী ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে।
বাংলাদেশী চালক তা চালিয়ে আনেন। ফেরার সময়েও একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্য ভারতের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দেশটির এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ট্রেন নিতে চায়।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ভারত এর আগে প্রস্তাব দিয়েছিল, পরীক্ষামূলক যাত্রার পণ্যশূন্য রেলগাড়ি ভারতের গেদে থেকে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় আসবে। সেখান থেকে পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের আব্দুলপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নীলফামারী সীমান্তবর্তী চিলাহাটী স্টেশন হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ী স্টেশনে যাবে।
তবে দেশটির নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ট্রেনটি হলদিবাড়ী থেকে যাবে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত।
শনিবার দুই দেশের সরকার প্রধানের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মি. কোয়াত্রা বলেছেন, রেলওয়ে ট্রানজিট ইস্যুটা দুই দেশের নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই ট্রানজিট চালু হলে নিজ দেশের মধ্যে রেলপথে দূরত্ব অনেকখানি কমবে ভারতের। ভারত আগে থেকেই এটা চেয়েছিল। এটা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তারও একটি পরিকল্পনা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে”।
এর ফলে গেদে-দর্শনা সীমান্ত থেকে থেকে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটকে সংযুক্ত করা হবে।
দিল্লি থেকে বিবিসি সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানান, এই ট্রানজিট চালু করতে নতুন রেলপথ নির্মাণ হবে নাকি যেটি আছে সেটিকে সংস্কার করা হবে সেটি পরিষ্কার করেননি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
তবে পররাষ্ট্র সচিব মি. কোয়াত্রা বলেছেন, এই ট্রানজিট চালু হলে এটা উভয় দেশের মানুষ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।
শনিবার বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা রুটে ট্রেন চালু করতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও সই হয়।
তিস্তা প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে ভারত?
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার তিস্তা নিয়ে সঙ্কট চলছে বহু আগে থেকেই। এই সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির দাবি জানানো হলেও এতদিনেও তার কোন অগ্রগতি হয়নি।
এমন অবস্থায় তিস্তা নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা করে বাংলাদেশ। যেটি তিস্তা মহাপরিকল্পনা হিসেবেই পরিচিত।
বন্যা প্রশমন, ভাঙন হ্রাস ও ভূমি উদ্ধারে তিস্তা মহাপরিকল্পনা করে বাংলাদেশ। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উজানে একটি বহুমুখী ব্যারাজ নির্মাণেরও চিন্তা রয়েছে বাংলাদেশের।
দীর্ঘদিন তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশ এই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। যেটি নিয়ে একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা নিয়ে অগ্রগতি কতখানি তা-ও সবার আগ্রহের বিষয় ছিল।
বৈঠক শেষ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মি. কোয়াত্রা বলেছেন, ‘তিস্তা রেস্টোরেশন প্রকল্পে যুক্ত হবে ভারত। এ নিয়ে দুই দেশের নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে’।
তবে এটি কি বাংলাদেশের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা কি না সেটি স্পষ্ট করেননি মি. কোয়াত্রা।
তিনি বলেন, “তিস্তার পানিকে সঠিকভাবে ম্যানেজ করা যায় তাহলে শুষ্ক মৌসুমে অনেক সুবিধা পাবে দুই দেশ। তাই এই প্রকল্পে ভারত যুক্ত হতে চায়”।
বৈঠক শেষে এই জট কাটাতে ভারতের পক্ষ থেকে উদ্যোগের কথাও জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী মি. মোদি।
তিনি বলেন, “তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে যাবে শিগগিরই”।
২০১১ সালে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর ১৪ বছরেও এই সঙ্কটের সমাধান হয়নি। এখনো এটি রয়ে গেছে আলোচনার স্তরে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা