১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জাল নোটের প্রচলন বাড়ছে

-

জাল নোটের প্রচলন বেড়ে গেছে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে আসছে জাল নোট। সবচেয়ে বেশি জাল হচ্ছে ১ হাজার টাকা ও ৫০০ টাকার নোট। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৫ বছরে (২০১৯-২৩) শুধু এক হাজার টাকার জাল নোট ৮৮ হাজারটি এবং ৫০০ টাকার ২০ হাজারটি জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর গত চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) শুধু এক হাজার টাকার জাল নোট জব্দ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭৮৯টি। আর ৫০০ টাকার জাল নোট জব্দ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮টি। সব মিলে চার মাসে বিভিন্ন মানের জাল নোট জব্দ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৪৩টি। আর এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ হিসেবে এপ্রিল শেষে পুঞ্জীভূত জাল নোট সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮০১টি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, নকল ঠেকাতে ১ হাজার টাকার নোটে বিভিন্ন কৌশল ও বিশেষ কালি ব্যবহার করা হলেও জালিয়াতচক্র তাও জাল করে ফেলছে। তাই ব্যাংকিং লেনদেনে জাল টাকার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে ইতোমধ্যে কঠোর তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে ঈদকেন্দ্রিক পশুর হাটে জালনোট শনাক্তকারী মেশিন বসানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাল টাকা এখন কিছুটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। জাল নোট প্রচলনের সাথে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিশালী চক্র জড়িত রয়েছে। জাল টাকা প্রতিরোধে প্রচলিত আইনে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর পরেও জাল টাকা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান মতে, প্রতি সপ্তাহে গড়ে এক হাজার টাকা ও ৫০০ টাকার জাল নোট আসছে শতাধিক। সেই সাথে এক শ’ টাকার জাল নোট আসছে আরো বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ টাকা লেনদেন হয়। সঙ্গত কারণে জাল টাকা প্রচলন প্রতিরোধে ব্যাংকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে পরিপালনের জন্য সময়ে সময়ে সার্কুলার জারি করেছে। কিন্তু এর পরও এ প্রবণতা কমছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরের মধ্যে বেশি জাল নোট ধরা পড়েছে ২০২০ সালে ৩৭ হাজার ১১১টি। এর মধ্যে এক হাজার টাকার জাল নোটই ছিল ৩৩ হাজার ৬৮১টি এবং ৫০০ টাকার জাল নোট ছিল তিন হাজার ৩৬৪টি। এভাবে ২০১৯ সালে ১৫ হাজার ৭৬০টি, ২০২১ সালে ১৮ হাজার ৫০৪টি, ২০২২ সালে ২৪ হাজার ২৭৫টি এবং ২০২৩ সালে ২০ হাজার ৪৮৮টি জাল নোট জব্দ করা হয়েছে। আর চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ চার মাসে জাল নোট ধরা পরেছে ১৩ হাজার ৩৪৩টি। এর মধ্যে এক হাজার টাকার নোট ৯ হাজার ৭৮৯টি এবং ৫০০ টাকার নোট এক হাজার ৫৮৮টি।
এদিকে জাল নোট সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যেমন ২০২২ সালে মামলা হয়েছিল ১৩২টি এবং গত বছর ২০২৩ সালে মামলা হয়েছে ১৫০টি। এর ফলে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৮১১টি। গত বছর ১৭৫টি নিষ্পত্তি হওয়ায় ও এপ্রিল পর্যন্ত মামলার সংখ্যা হয়েছে ছয় হাজার ৮০১টি।
এদিকে জাল নোটের প্রচলন বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খিলগাঁও তালতলা বাজারের এক দোকান থেকে ছেলের জন্য ৮০০ টাকা দিয়ে পাঞ্জাবি কেনার পর দোকানদারকে এক হাজার টাকার নোট দেন সাঈদ হাসান। দোকানদার ১০ মিনিট ধরে ওই এক হাজার টাকার নোট আসল কি না তা ঘুরে ফিরে পরীক্ষা করছেন। বিরক্ত হয়ে সাঈদ হাসান দোকানদারের কাছে জানতে চাইলেন টাকার কী দেখছেন। দোকানদার জানান, ভাই বড়ই বিপদে আছি। প্রতি দিনই দুই তিনটি করে এক হাজার টাকার জাল নোট পাওয়া যাচ্ছে। দিনশেষে কর্মচারীদের বেতন ও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলে মুনাফা আর কি বা থাকে। এরওপর যদি দু’টি এক হাজার টাকার জাল নোট অসাবধানতাবশত নিয়ে নেন তাহলে তো পুরো দিনের কষ্টই মাটি হয়ে যাবে। এ কারণে আপনার এক হাজার টাকার নোট পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি। তিনি গ্লাসের নিচে এক হাজার টাকার দু’টি জাল নোট দেখিয়ে বলেন, মনে কিছু নেবেন না ভাই। এই বলে তিনি পাঞ্জাবির দাম রেখে বাকি অর্থ সাঈদ হাসানকে ফেরত দেন।
শুধু ঈদ বাজারই নয় সর্বত্রই এখন জাল নোটের প্রসার হয়েছে। সোহেল পারভেজ নামক এক ব্যক্তি জানান, পেট্রোল পাম্পে মোটরসাইকেলে তেল নিতে গিয়ে তিনি বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়েন। তেল নিয়ে এক হাজার টাকার নোট দিতেই পাম্প থেকে তা ফেরত দেন। তিনি বলেন, কেন নেবেন না। পেট্রোল পাম্প থেকে বলা হয়, এক হাজার টাকার নোট বেশি জাল পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে ৫০০ টাকার নোট দিলে ভালো হয়। তিনি জানান, তার কাছে ৫০০ টাকার নোট নেই। এরওপর বারবার তা পরীক্ষা করে তেলের দাম রেখে বাকি অর্থ ফেরত দেন।
ঈদকে কেন্দ্র করে জাল টাকার প্রচলন বেড়ে গেছে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে আসছে জালনোট। জালনোটের মামলার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী জাল নোটের মামলা সংখ্যা বেড়ে এখন প্রায় সাড়ে ছয় হাজারে দাঁড়িয়েছে। অথচ এক বছর আগেও এর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার ছিল।
সূত্র জানিয়েছে, জাল নোটের প্রচল ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাত শাখা অফিসের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বগুড়া, বরিশাল ও সিলেট অফিসের মাধ্যমে আওতাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জাল টাকা চিনতে হটবাজারের দোকানদারদের জনসচেতনামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জালনোট প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করার অংশ হিসেবে আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত ভিডিও চিত্র প্রচার করতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোরবানির হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে লেনদেনের সময় মেশিনের সাহায্যে নোট পরীক্ষা করে নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
র‍্যাবে আয়নাঘর ছিল, স্বীকার করলেন ডিজি আবারো গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ জাতিসঙ্ঘের ডিএসইতে মূল্যসূচক বাড়ল ১৪.৪৮ পয়েন্ট সিরিয়ায় বাশার সরকারের পতনে ইরানি মুদ্রার মান রেকর্ড তলানিতে নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে কলেজেছাত্র আহত তারেক রহমান কবে ফিরবেন, জানালেন মির্জা ফখরুল কালিয়াকৈরে ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ে র‍্যাবের ১৬ সদস্য আটক : ডিজি মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর থেকে শত শত সৈন্যসহ জেনারেল আটক শনিবার থেকে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’

সকল