আল-আকসা মসজিদে কয়েক শ’ উগ্রপন্থী ইহুদির জোর করে প্রবেশ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
- রাজনৈতিক স্বার্থে নেতানিয়াহু গাজায় হামলা চালাচ্ছেন : বাইডেন
- ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত আরো ৩৬
- বন্দিমুক্তি চুক্তির দাবিতে ইসরাইলে বিক্ষোভ
ইসরাইলের দখলকৃত পূর্ব জেরুসালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে কমপক্ষে আট শতাধিক উগ্রপন্থী ইহুদি। উসকানিমূলক ‘জেরুসালেম ডে ফ্ল্যাগ মার্চ’-এর আগে এসব উগ্রপন্থী ইহুদি পুলিশের প্রহরায় মসজিদের মাঠে হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় ওয়াফা নিউজ এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, পবিত্রতম মসজিদটির কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়া দলগুলোর একটির সাথে সাবেক আইনপ্রণেতা মোশে ফিগলিনও ছিলেন। আলজাজিরা, রয়টার্স ও ডেইলি টাইমস।
১৯৬৭ সালের এই দিনে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে পবিত্র জেরুসালেম শহরের পূর্বাঞ্চল তেল আবিবের দখল নেয় ইসরাইলি বাহিনী। সেই দিবসটিকে উদযাপন করার লক্ষ্যে ফ্ল্যাগ মার্চের আয়োজন করা হয়। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। উগ্র জাতীয়তাবাদী ইহুদি গোষ্ঠীগুলোকে মসজিদটির ভেতরে যাওয়ার পথ তৈরি করে দিতেই এ হামলা হয় ফিলিস্তিনিদের ওপর। পুলিশের প্রহরায় উগ্রপন্থী এসব ইহুদি আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছিলেন।
আল আকসা মসজিদ সারা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে তৃতীয় পবিত্র স্থান। তবে ইহুদিদের কাছেও এটি পবিত্র স্থান। তাদের কাছে এটি ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওই পবিত্র স্থানে ইহুদিদের আসা-যাওয়া বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ মুসলিমরা। তারা সেখানে ইহুদিদের প্রবেশ ঠেকাতে চান।
নিহত আরো ৩৬ : গাজার মধ্যাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে আরো অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ভূখণ্ডটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় মানবিক ত্রাণ সুরক্ষায় কাজে নিয়োজিত দুই পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন। অন্যদের মৃত্যু হয়েছে- গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর দিয়ের-আল-বালাহের আল-বুরেইজ ও আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের বিমান হামলায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন রাতে আল-নুসেইরাত শিবিরের পূর্ব দিকে ইসরাইলি ট্যাংকগুলো গোলাবর্ষণ করেছে। কিছু বাসিন্দা অ্যাপের মাধ্যমে রয়টার্সকে জানান, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নতুন করে শুরু করা আক্রমণে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, আল-মাগাজির কিছু পরিবার ট্যাংকের গোলাবর্ষণের মধ্যেই পালাতে শুরু করেছে আর কাছেই শিবিরের একটি ক্লিনিকে চারটি গোলা এসে পড়েছে। অন্য দিকে মধ্য গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত চার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফায় প্রকাশিত এক খবরে এ কথা জানা যায়। স্থানীয় সূত্রগুলো ওয়াফাকে জানায়, রেমাল পাড়ায় লোকজনের সমাবেশকে লক্ষ্য করে এ অভিযান চালানো হলে চারজন নিহত হয়। এ দিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গতকাল বুধবার ভোরে ঘোষণা করেছে যে, তারা বুরেজ শরণার্থী শিবিরে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে।
ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৫৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৩ হাজার ৭৪ জন আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে আরো বলা হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ৩৬ জন নিহত এবং ১১৫ জন আহত হয়েছেন।
রাজনৈতিক স্বার্থে গাজায় হামলা : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে এক হাত নিয়েছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, তার কাছে এটি মনে করার ‘যৌক্তিক কারণ’ আছে যে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে গাজায় যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। মূলত তিনি নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচানোর লক্ষ্যে এমনটা করছেন।
ব্রিটিশ সাময়িকী টাইমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে নেতানিয়াহুর সাথে তার ‘বড় ধরনের মতানৈক্য’ আছে। একই সাথে ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার পর দেশটি গাজায় যা করেছে, সেটিকেও বাইডেন ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
গত শুক্রবার বাইডেন গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে তার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এই পরিকল্পনা প্রকাশের অনেক আগেই তিনি টাইমকে সাক্ষাৎকার দেন। টাইম বাইডেনের কাছে জানতে চায় যে, নেতানিয়াহু ইচ্ছা করেই রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচানোর লক্ষ্যে এই যুদ্ধ এগিয়ে নিচ্ছেন কি না?
জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘লোকজনের কাছে এমন উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট কারণ আছে।’ এ সময় তিনি জানান, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সৃষ্টি নিয়ে তার এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে বড় ধরনে মতানৈক্য আছে। তিনি আরো বলেন, ‘নেতানিয়াহুর সাথে আমার প্রধান মতবিরোধ হলো, গাজা (যুদ্ধ) শেষ হওয়ার পরে কী হবে? ইসরাইলি বাহিনী কী ঘরে ফিরে যাবে?’ এ দিকে গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধে তিন দফার যে প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, হামাস যদি তা মেনে নেয়, তাহলে ইসরাইলও তা গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি।
হিজবুল্লাহর হামলা : লেবাননের রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহ দাবি করেছে যে তারা ইসরাইলের বিরকাত রিশা অঞ্চলের কাছে সেনা সমাবেশে স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। সম্প্রতি লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইল দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান বাড়ানোর হুমকি দিচ্ছে।
ইসরাইলে বিক্ষোভ : গাজায় হামাসের সাথে বন্দিমুক্তি চুক্তি করার জন্য ইসরাইলি বিক্ষোভকারীরা ফের রাস্তায় নেমেছে। টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা তেল আবিব এবং উত্তর ইসারাইলের কয়েকটি শহরের প্রধান রাস্তা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। নেতানিয়াহু তার উগ্রপন্থী মিত্রদের বিরোধিতার কারণে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে চলছেন। গাজায় এখনো প্রায় ১২০ বন্দী রয়েছে, যাদের এক-তৃতীয়াংশকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা