১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাইডেনের গাজা পরিকল্পনায় সম্মত ইসরাইল চুক্তি চূড়ান্তের আহ্বান মধ্যস্থতাকারীদের

-

- যুদ্ধবিরতি মেনে নিলে জোট ভাঙার হুমকি ইসরাইলি দুই মন্ত্রীর
- গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬,৪৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিকল্পনা ইসরাইল গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বৈদেশিক নীতিবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা ওফির ফক। রোববার ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য সানডে টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফক নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাইডেনের প্রস্তাবমতো আমরা একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছি।’ তবে তিনি এ-ও বলেন, চুক্তিটি ভালো নয়। এটি ত্রুটিপূর্ণ। তবে আমরা সব জিম্মির মুক্তি চাই।
বাইডেনের গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির রূপরেখার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আরো কাজ করতে হবে বলে জানান ফক। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের হাতে থাকা সব বন্দীর মুক্তি এবং হামাসকে ধ্বংস করার শর্ত থেকে ইসরাইল সরে আসেনি।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা হামাস ও ইসরাইল উভয়পক্ষকেই বাইডেনের প্রস্তাবিত রূপরেখা মেনে নেয়া এবং বন্দিমুক্তির বিষয়ে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে; যাতে গাজাবাসী ও বন্দীদের পরিবারগুলোও তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি পায়। তবে ইসরাইল বলছে, হামাস গাজার ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না। ইসরাইলের এ অবস্থানের কারণে বাইডেনের গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
বাইডেন গত শুক্রবার ইসরাইল সরকারের দেয়া একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সামনে এনেছেন, যার রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন খোদ তিনি। এ পরিকল্পনায় তিনটি স্তর বা পর্যায় রয়েছে। প্রথম স্তরে গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। এ পর্বে রাফাহসহ গাজার অন্যান্য জনবহুল এলাকা থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে এবং ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী কয়েক শ’ ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে হামাস তাদের কব্জায় থাকা কয়েকজন ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেবে।

তা ছাড়া এ ছয় সপ্তাহে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক। হামাস, ইসরাইলের মন্ত্রিসভা ও প্রতিরক্ষাবাহিনী এ পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চালাবে। এ আলোচনা ছয় সপ্তাহের মধ্যে শেষ না হলে পরিকল্পনার প্রথম পর্ব বা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরো বাড়বে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস ও ইসরাইলের ঐকমত্যের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে গাজায় শান্তি পরিকল্পনার প্রথম স্তর। তার পর শুরু হবে দ্বিতীয় স্তর। দ্বিতীয় পর্বে বন্দীদের সবাইকে মুক্তি দেবে হামাস এবং এর বিনিময়ে গাজার অধিবাসীরা পাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ভবন-রাস্তাঘাট নির্মাণ, অর্থাৎ পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।

কয়েক মাস ধরে বাইডেন কয়েকটি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেসব প্রস্তাবও ছিল মূলত একই রকম। এমনকি গত শুক্রবার তিনি যে প্রস্তাবের রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন সেটিও প্রায় একই রকম। কিন্তু সব প্রস্তাবই বিফলে গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বাইডেন বলেছিলেন, মার্চের পবিত্র রমজান মাসে ইসরাইল লড়াই বন্ধে রাজি হয়েছে। কিন্তু সেই মাসে ইসরাইলকে কোনো যুদ্ধবিরতি করতে দেখা যায়নি।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির চুক্তি চূড়ান্ত করতে ইসরাইল ও হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারীরা। শনিবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান মিসর ও কাতারসহ গাজা যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারীরা। যুদ্ধবিরতির নতুন এই রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরাইল বলেছে, যতক্ষণ হামাস ক্ষমতায় থাকবে ততক্ষণ যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে না। এর আগে যুদ্ধবিরতির এই নতুন প্রস্তাবকে স্বাগত জানায় ফিলিস্তিনিরা। এ দিকে হামাস জানিয়েছে, তারা চায় গাজা থেকে পুরোপুরি ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার। তবে ইতিবাচক ও গঠনমূলক পদ্ধতিতে আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত তারা।

সরকার ভেঙে দেয়ার হুমকি : তবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ ও ক্ষমতাসীন জোট সরকার ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থী দুই মন্ত্রী। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া পোস্টে এ হুমকি দেন অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মটরিচ ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষিত পরিকল্পনায় নেতানিয়াহু রাজি হলেই পদত্যাগ করবেন তারা। হামাসকে নির্মূল করার আগে কোনো ধরনের চুক্তি সইয়ের বিপক্ষে তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে অর্থমন্ত্রী স্মটরিচ বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবিত রূপরেখা মেনে হামাসকে নির্মূল না করে ও সব বন্দীকে ফিরিয়ে না এনেই যুদ্ধ শেষ করার ঘোষণা দিলে এই সরকারের সাথে থাকব না। তার সাথে সুর মিলিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বেন-গিভিরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, এ ধরনের চুক্তির মানে হলো যুদ্ধের অবসান এবং হামাসকে নির্মূল না করা। এই চুক্তির মাধ্যমে হামাসকে বিজয়ী ও ইসরাইলের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলা হবে।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ক্ষমতাসীন জোট সরকার ভেঙে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। পার্লামেন্টে বেন-গিভিরের দল-ওটজমা ইয়েহুডিত পার্টির আছে ছয়টি আসন। আর স্মটরিচের দল-জায়োনিজম পার্টির রয়েছে সাতটি আসন। ইসরাইলের পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ক্ষমতায় থাকতে এই দুই দলসহ আরো কয়েকটি দলের সাথে জোট করতে হয়েছে তার সরকারকে। অবশ্য নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে তার সরকারকে সমর্থন দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইসরাইলের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী রাজনীতিবিদ ইয়ার লাপিড। পার্লামেন্টে তার দল ইয়েশ আটিডের আসনসংখ্যা ২৪।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত চুক্তিতে অগ্রসর : ইসরাইল যুদ্ধ মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত বন্দিবিনিময় চুক্তি অনুযায়ীই অগ্রসর হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির যুদ্ধ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বেনি গ্যান্টজ। তিনি বলেন, সরকার বন্দিবিনিময় চুক্তির বিস্তৃত রূপরেখার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রূপরেখাটি আলোচনাকারী দল প্রণয়ন করছে এবং যুদ্ধ মন্ত্রিসভাও সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। তিনি বলেন, বন্দিবিনিময় চুক্তির এই রূপরেখা যুদ্ধের সব উদ্দেশ্য অর্জনের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য আলোচনাকারী দলের সাথে যত দ্রুত সম্ভব, বৈঠকে বসবে থযুদ্ধ মন্ত্রিসভা। গ্যান্টজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সময়ের সাথে সাথে ধারাবাহিকভাবে ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দিয়েছে। তারা ইসরাইলি বন্দীদের ফিরিয়ে আনার প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করেছে। আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং সব মার্কিনি বন্ধুদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
৩৬,৪৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত : গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৬,৪৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮২,৬২৭ জন আহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি ছিটমহলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২২০ জন আহত হয়েছে। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এ হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরাইলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসঙ্ঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হযয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সঙ্কটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারত কখনো চায়নি বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক : মিয়া গোলাম পরওয়ার ‘উৎপাদনের জন্য কৃষি পণ্য ও উপকরণ সহজলভ্য এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে’ পলিথিনে মোড়ানো নবজাতকের লাশ! আপনাকে ধরে এনে বিচার করা হবে : মোবারক হোসেন কালীগঞ্জে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উলামা পরিষদের বিক্ষোভ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরে যাবো : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতকে দেয়া ‘বিশেষ সুবিধা’ বাতিল করল সুইজারল্যান্ড বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাবি ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের শ্রদ্ধা কবি হেলাল হাফিজের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত মাইকেল জ্যাকসনের অপ্রকাশিত গানগুলো শুধু একজনই শুনতে পারবেন! দামেস্কে কবে দূতাবাস খোলা হবে জানালো তুরস্ক

সকল