১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অভিজাত আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশের টুকরা উদ্ধার

-

দীর্ঘ তল্লাশির পর অবশেষে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আজিমের খণ্ড খণ্ড দেহাংশ উদ্ধার হলো সেপটিক ট্যাংক থেকে। পোশাকের খোঁজে কলকাতার ভাঙর খালে ডুবুরির পাশাপাশি ড্রোন উড়িয়ে তল্লাশি করল সিআইডি। বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের হত্যা মামলায় তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে মঙ্গলবার থেকে একাধিক নতুন জায়গায় তল্লাশি শুরু করে সিআইডি। বিকেলে জানা গেছে, যে ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয়েছিল আজিমকে, তার সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু সন্দেহজনক পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তা সংসদ সদস্যর দেহাংশই কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। উদ্ধার হওয়া ওই পদার্থ ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে খুনের ঘটনাস্থল ফ্ল্যাটের সামনের খালসহ নতুন কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। এখন পর্যন্ত শুধু ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু সন্দেহভাজন পদার্থ উদ্ধার করা ছাড়া দেহাংশ বা আজিমের পরনের পোশাক অথবা যে অস্ত্র দিয়ে তার শরীর টুকরো করা হয়েছিল, সেসবের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন উর রশীদ এদিন সকালেই জানান, যে ফ্ল্যাটে এমপিকে হত্যা করা হয়েছিল, তার টয়লেট এবং সেপটিক ট্যাংক এবং তার কাছেই ভাঙর খালের ওপরে একটি কাঠের সেতুর কাছে একটি অংশে তল্লাশি চালানোর জন্য তারা সিআইডিকে অনুরোধ করেছেন। এর পরেই ওই জায়গায় তল্লাশি শুরু করে সিআইডি। সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, নতুন কিছু সূত্র পাওয়া গেছে এই ঘটনায় ধৃতদের কাছ থেকে। সেই অনুযায়ীই নতুন জায়গাগুলোতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
সিআইডির সূত্রে জানা গিয়েছে বাথরুমের কমোডের ভেতরে আজিমের দেহাংশগুলো ফেলে তা ফ্লাশ করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয়। সে কারণেই সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি চালানো হয় এবং ৫ কেজির মতো টুকরো টুকরো অংশ উদ্ধার হয়।
সঞ্জিবা গার্ডেন্সের প্রধান ফটকের সামনে ভাঙর খাল কোঁচপুকুর মোড়। সেখানে একটি কাঠের সেতু রয়েছে ভাঙর খালের ওপরে। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে কলকাতা পুলিশের ডুবুরি নামানো হয়। ডুবুরিরা বলছিলেন ওই জায়গায় এত বেশি প্যাঁক, যে তারা পানিতে ডুবেও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারছেন না। বেশ কয়েক ঘণ্টা তল্লাশির পরও কিছু পাওয়া যায়নি সেখানে। একটা পর্যায়ে কলকাতা পুলিশের ড্রোন উড়িয়েও খালের একটা অংশ দেখে নেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীরা বলছেন, কাঠের সেতুর কাছে আজিমের কিছু পোশাক ফেলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধৃতদের জেরা করে তারা জেনেছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তা আনারের লাশের খণ্ডাংশ কি না সেটা এখনো নিশ্চিত করেনি পুলিশ। এর আগে বাংলাদেশের পুলিশ সুয়ারেজ লাইন ভেঙে সেপটিক ট্যাংক তল্লাশির অনুরোধ জানায় কলকতা সিআইডিকে। তার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা পুলিশ ভবনটির সুয়্যারেজ লাইনের পাইপ ও সেপটিক ট্যাংকে লাশের খণ্ডাংশের খোঁজে অভিযান চালায়।
ভারতে বাংলাদেশের গোয়েন্দা দলের প্রতিনিধি ডিসি মো: আ: আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, কিছুক্ষণ আগে শুনেছি পাইপ থেকে কিছু লাশের খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে। তবে সেটি এমপি আনারের লাশের কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যে পরিমাণ খণ্ডাংশ উদ্ধার হয়েছে তার ওজন তিন থেকে চার কেজি হবে। তিনি আরো বলেন, দেখে মনে হচ্ছে খুন করে মাংস কুচিকুচি করে কেটে প্যানের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। সেগুলোই পাইপ দিয়ে সেপটিক ট্যাংকে গিয়ে জমা হয়েছে।
আনারকে কলকাতায় হত্যা করা হয়েছে প্রায় একসপ্তাহ। এই ঘটনায় দুই দেশে গ্রেফতার হয়েছে জড়িত প্রায় পাঁচজন। তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে হত্যাকাণ্ডের প্রধান প্লানার কে, এ কাজে কত টাকার চুক্তি ছিল। এমনকি লাশ কয় টুকরো করে সেগুলোতে হলুদ মিশিয়ে দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারেও পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন তারা। অথচ লাশের টুকরোগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হতে পারছে না দুই দেশের পুলিশ।
এর আগে গ্রেফতারকৃতদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে একের পর এক অভিযান চালিয়েছে কলকাতা পুলিশ। তাদের সহযোগিতা করতে ঢাকা থেকে তথ্য নিয়ে গেছে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি দল। তারাও বিভিন্ন স্থানে লাশের সন্ধান করছেন। কিন্তু এখনো কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তিনি বলছেন, ধারণা করছেন আনারের লাশ কিমা করে ওই ফ্লাটে থাকা তিনটি কমোডের মাধ্যমে ফ্লাস করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিনি ওই ভবনের সুয়ারেজের লাইন ভাঙ্গার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছে ডিবি প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। গতকাল মঙ্গলবার দিনের শুরুতে নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এবং তদন্তকারী কর্মকর্তারা খুবই আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। প্রথমে তারা যে খালটির কথা বলেছিলেন, সেখানে বেশ কিছুদিন ধরে সার্চ করেছেন। আজও সার্চ করছেন এবং তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি, আমরাও এসেছি। আমরা কিছু অনুরোধ করেছি। সঞ্জীবা গার্ডেনসের পাশে একটি হাতিশালা খাল রয়েছে। আমরা অনুরোধ করেছি, এটা যেন সার্চ করা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, আমরা আরেকটি অনুরোধ করেছি। যে বাসায় আমাদের সংসদ সদস্য ঢুকেছিলেন। সেটি যেন সার্চ করা হয়। সেখানে যে তিনটি কমোড রয়েছে, সেগুলো ফ্ল্যাশ করলে ময়লা যেখানে জমা হয় এবং যে স্যুয়ারেজ লাইন, সেটি ভাঙ্গতে বলেছি। আশা করি, ওনারা এই কাজগুলো করবেন। এ ছাড়া, হাতিশালা ব্রিজের কাছে যে খালটা, সেটিও সার্চ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
হারুন অর রশিদ কলকাতায় আরো বলেছেন, চাকরিজীবনে অনেক খুনের তদন্ত করেছি। কিন্তু এমন ঠাণ্ডা মাথার খুন দেখিনি। কলকাতার যে আলিশান বাড়িতে আনারকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে মনে হয় এখনো ঘাতকদের অট্টহাসি শুনতে পাচ্ছি। এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বিচার খুব কঠিন হবে বলে আমি মনে করি না। তিন আসামি বাংলাদেশে, একজন এখানে আছে। চারজনের বক্তব্য, জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য পারিপার্শ্বিক তথ্য মিলেছে। ডিজিটাল তথ্য, পারিপার্শ্বিক এভিডেন্স নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা এখনো হতাশ নই। কাজ করছি, আশা করছি তার দেহাংশ উদ্ধার সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এমপি আনার হত্যার গুরুত্বপূর্ণ ঘাতক আমাদের কাছে আছে। সাথে যে মেয়েটা ছিল সেও আমাদের কাছে আছে। তারা আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যগুলো নিয়ে আমরা কিন্তু কলকাতায় এসেছি। আমরা কলকাতার সিআইডির সদর দফতর সফর করেছি। তাদের হাতে গ্রেফতার আসামি জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি দাবি করে বলেন, আমরা প্রায় সব তথ্যের মিল পেয়েছি। ডিজিটাল এভিডেন্সও আছে। ওই মেয়েটা তো সেখানে ছিল। ছবি-সিসিটিভি ফুটেজ তো আছে। সবাই বের হলেন কিন্তু এমপি আনার বের হলেন না। সেটারও তো প্রমাণ আছে। তা ছাড়া তারা তো সন্দেহজনক ব্যাগ নিয়েও বের হয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে কলকাতা সিআইডি তদন্ত করবে। বের করবেন আনার হত্যার রহস্য। তারপর কোর্টে প্রেরণ করা হলে লজিক্যাল ও বিচারিক স্পিরিট কাজে লাগিয়ে মূল রহস্য বের করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশকে উন্নত ও শক্তিশালী করতে আমরা বদ্ধপরিকর : প্রধান উপদেষ্টা হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে, ফিরে আসার সুযোগ নেই : সোহেল আমাদের সংবিধান ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি চব্বিশের নতুন বাংলাদেশে বিজয় দিবস বাংলাদেশের ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব চীনের রাষ্ট্রদূতের সাথে মঈন খানের বৈঠক বীর মুক্তিযোদ্ধারা চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে : অ্যাডভোকেট জুবায়ের ভারতীয় চলচ্চিত্রে বাংলাদেশকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন! স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক, প্রকৃত ইতিহাস লেখা হয়নি: বদরুদ্দীন উমর রাজশাহীতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২ কর্মী গ্রেফতার জামায়াত নেতা ড. তাহের সম্পর্কে সাংবাদিক ইলিয়াসের মন্তব্যের প্রতিবাদ

সকল