আদানি পরিচালকের সাথে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক আজ
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ২৩:০৯
বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে ভারতীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানির পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ে একটি প্রতিনিধিদল আজ বাংলাদেশে আসছে। এতে নেতৃত্ব দেবেন আদানি গ্রুপের পূর্ণকালীন পরিচালক (ফুল টাইম ডিরেক্টর) প্রণব বিনোদ আদানি। আজ বুবধার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছেই প্রণব আদানি বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। জানা গেছে, আদানি গ্রুপের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করলেও প্রণব একাধারে আদানি অ্যাগ্রো, ওয়েল ও গ্যাস কোম্পানির এমডি হিসেবেও নিযুক্ত রয়েছেন।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি বিকেল ৫টায় অর্থমন্ত্রীর কক্ষে অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। অর্থমন্ত্রীর সাথে এই বৈঠকটি মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হলেও বাংলাদেশ সরকারের কাছে আদানি বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বকেয়া যে অর্থ পায় তা দ্রুত পরিশোধ করতে আহ্বান জানানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বাংলাদেশের বকেয়া রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আদানির বকেয়ার পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। তবে এটিও পুরো বকেয়া নয়, কোম্পানিটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ আরো বেশি পরিমাণ অর্থ পায়।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, আদানি পাওয়ারের সেপ্টেম্বরের আংশিক এবং অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসের পুরো বিল বকেয়া রয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির মোট বকেয়ার পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। এর সাথে মার্চ এপ্রিল ও মে মাসের হিসাব যোগ করা হলে বকেয়ার পরিমাণ আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বিপিডিবি। চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সিংক্রোনাইজিং থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ব্যয় বিপিডিবিকে দিতে হচ্ছে। তবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার যে দাম ধরা হয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তোলে বিপিডিবি। অনেকে আদানির সাথে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থে অনুকূলে নয় বলে মন্তব্য করেছে।
এ দিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের ঘাটতি বাবদ ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের জন্য গত এপ্রিলে অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়।
বিপিডিবির ওই চিঠিতে চার (মার্চ-জুন ২০২৪) মাসের ভর্তুকির অর্থ বাবদ ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে বৈদেশিক বকেয়া বিল বাবদ প্রায় ১০৩ কোটি ডলার এবং অভ্যন্তরীণ বকেয়া বিল বাবদ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা রয়েছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, দেশে ডলারের চরম সঙ্কটের মধ্যেও গত ফ্রেব্রুয়ারিতে বিদেশী কোম্পানির সাথে ক্রয়চুক্তির অধীনে ১২ মাসের (জুন ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্ষন্ত) বিদ্যুতের চার্জ বাবদ ১ হাজার ২২৯ কোটি ডলারেরও বেশি প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র মতে, চাহিদার ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকার মধ্যে মার্চের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা, এপ্রিলের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, মে মাসের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং জুনের জন্য ৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকার প্রয়োজন। নগদ অর্থের সঙ্কটের কারণে বিদ্যুতের ভর্তুকির অর্থ পরিশোধে ইতোমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র মতে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ঋণের বিপরীতে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বন্ডের মাধ্যমে দেয়ার পর চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি এবং আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ৪২ হাজার ৭০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি ও দেশীয় আমদানি-নির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা