১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করে দৃঢ় সম্পর্ক চায় যুক্তরাষ্ট্র

ব্রিফিংয়ে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড লু : নয়া দিগন্ত -


দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর বাংলাদেশের সাথে আমাদের অনেক উত্তেজনা ছিল। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেক পরিশ্রম করেছিল। এটা কিছুটা উত্তেজনাও সৃষ্টি করেছিল। আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক। এখন আমরা সামনে দেখতে চাই, পেছনে নয়। সম্পর্ক জোরদার করার উপায় খুঁজে বের করতে চাই।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ডোনাল্ড লু এ সব কথা বলেন। এর আগে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
সকালে ডোনাল্ড লু সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম তরুণ প্রজন্মের এমন কয়েকজনের সাথে চাচক্রে মিলিত হন। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ মোকাবেলায় সক্রিয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে তিনি মতবিনিময় করেন। এরপর ডোনাল্ড লু ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন গুলশানের ইএমকে সেন্টারে ইবিএল ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেশন অ্যাওয়ার্ড সংক্রান্ত একটি সহযোগিতা চুক্তি সই করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ডোনাল্ড লু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নতুন করে আস্থার জায়গা সৃষ্টি করার জন্য আমি গত দুই দিন ঢাকায় কাজ করেছি। দুই দেশের মধ্যে অনেক কঠিন ইস্যু রয়েছে। যেমন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, ব্যবসার পরিবেশ সংস্কারসহ অন্যান্য ইস্যু। আমি আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। দুই দেশের কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব। তবে কঠিন বিষয়গুলো আলোচনার জন্য দুই দেশের জন্য ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মধ্যে সহযোগিতা দরকার। আমরা বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগের কথা বলছি। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ, পরিচ্ছন্ন জ্বালানিসহ অন্যান্য বিষয়ে আলাপ করেছি।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা করেছি। সরকারের স্বচ্ছতার জন্য আমরা একসাথে কাজ করতে পারি। এর মাধ্যমে যেসব কর্মকর্তারা দুর্নীতি করছে, তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারি।

পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ডোনাল্ড লু’র সাক্ষাৎ নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে বলা হয়েছে, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আমাদের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার জন্য যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও কর ফাঁকির পথ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে চায়। আমাদের দেশে মাত্র ২৫ লাখ লোক কর দেয়। বাংলাদেশে কয়েক কোটি লোকের কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু কর দেয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য এবং আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করার জন্য ডোনাল্ড লু যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন থেকে বাংলাদেশকে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমরা এখন যে বাজারসুবিধা পাই, সেটি আর থাকবে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যাত্রা যেন মসৃণ হয়, তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছি।
নির্বাচন বা মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সাথে কোনো আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। অতীতে কী ঘটেছে, সেটি আমরা দেখতে চাই না। আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চায়। আমরাও তাই চাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ডোনাল্ড লুর সাথে আলোচনা হয়েছে। লু জানিয়েছেন, এটি তাদের বিচার বিভাগের অধীনে, সেখানে হোয়াইট হাউজ বা স্টেট ডিপার্টমেন্টের এখতিয়ার নেই। তবে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে।

পরিবেশমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ : দুপুরে সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেন ডোনাল্ড লু। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটা দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তাদের হয়ত কিছু অস্বস্তি ছিল। সেটা আমাদের মধ্যে ছিল না। আমরা নির্বাচন করেছি। ওই সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটা অবস্থান ছিল। এখন ওই পর্বটা শেষ। সাড়ে চার বছর পরে আবার নির্বাচন হবে। তাই এখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনাটা যৌক্তিক না। তিনি বলেন, সামনের দিকে সম্পর্ককে কিভাবে আরো সুদৃঢ় করব সেটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছি। অতীতের কোনো বিষয় নিয়ে কথা হয়নি।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, যখনই আমরা জলবায়ু নিয়ে কথা বলি, পরিবেশের বিষয়টি সামনে চলে আসে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আগামী দিনের যে সহযোগিতা, সেটাকে আমরা একটা কাঠামোর মধ্যে আনার চেষ্টা করব। আমাদের ওয়ার্কিং গ্রুপের মতো কিছু একটা থাকতে পারে। আমরা তিন বা চার অথবা পাঁচ বছরের কর্মসূচি নেব। প্রতি বছর সেই কর্মসূচির অধীনে আমরা কী কী কাজ করব, সেটা নির্ধারণ করা হবে।
জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে ডোনাল্ড লুর সাথে আলোচনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা যদি প্যারিস চুক্তির আলোকে দেখি, সেখানে চাহিদাটা ছিল বিলিয়ন ডলারের। এখন চাহিদা চলে যাচ্ছে ট্রিলিয়ন ডলারে। এখন ট্রিলিয়ন ডলার তো কোনো সরকারের কাছ থেকে আসবে না। এটা আসবে মূলত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাত থেকে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক আছে, এডিবি আছে। জলবায়ু খাতে আগামী দিনে তারা কিভাবে অর্থায়ন করবে, সেটা একটা বড় বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement
অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশ নারী দল ঘোষণা গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচয় মিলেছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত, প্রত্যাশা আসিফ মাহমুদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ব্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করব : ভিসি ৪৭তম বিসিএসের আবেদনের নতুন সময় জানালো পিএসসি জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার মানবসেবার জন্যই হাসপাতাল করেছি : জামায়াত আমির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত চট্টগ্রামে সাবেক এমপি মোতালেবসহ ২৪৮ জনের নামে মামলা চিন্ময়ের জামিন শুনানি জানুয়ারিতেই ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ, শুরু ১০ এপ্রিল

সকল