১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জমিদারি উচ্ছেদ দিবস আজ

-


ঐতিহাসিক জমিদারি উচ্ছেদ দিবস আজ। ১৯৫১ সালের এ দিনে জমিদারতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যায়। এতে করে জমিদারদের পৌনে দুই শ’ বছরের নজিরবিহীন অত্যাচার নির্যাতন আর বেশুমার লুণ্ঠন থেকে রেহাই পায় পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের মানুষ।
জমিদারি প্রথা বিলোপ হয়েছিল ‘রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০-এর মাধ্যমে। কার্যকর করা হয় ১৯৫১ সালের ১৬ মে থেকে। ১৯৫০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ পরিষদে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব বিল পাস হয়। এ খবর ছাপিয়ে তখন দৈনিক আজাদ শিরোনামে লেখে, ‘পূর্ববঙ্গের সাড়ে ৪ কোটি অধিবাসীর বুকের ওপর হতে জমিদারি প্রথার জগদ্দল পাথর অপসারিত।’ সাব হেড করা হয়, দেশের শোষিত ও নিগৃহীত জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তির সূচনা; বৃহস্পতিবার পূর্ববঙ্গ পরিষদে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব বিল গৃহীত; মুসলিম লীগ ও কায়েদে আজমের বহু আকাক্সিক্ষত স্বপ্নসাধ বাস্তবে রূপায়িত।

খবরের প্রথম প্যারায় লেখা হয় ‘পরিষদের সদস্যদের টেবিল চাপরানির গগনবিদারী শব্দ ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে পূর্ববঙ্গীয় পরিষদে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব বিল গৃহীত হয়। অতঃপর বিলটি আইনবিধিতে স্থান পাইবে। প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিন একে ‘পাকিস্তানের ইতিহাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন’ বলে আখ্যায়িত করেন। এই গৃহীত বিলটিই ১৯৫১ সালের ১৬ মে গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন এক সরকারি আদেশে অ্যাক্টে পরিণত করেন। সেই থেকে ১৬ মে দিনটি জমিদারি উচ্ছেদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম প্রায় এক শ’ বছর (১৭৫৭-১৮৫৮) ভারত উপমহাদেশ ‘ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির’ দখল-শাসনে। আর পরে ১৮৫৮ সালের ২ আগস্ট, থেকে ওই দখল-শাসন শেষ পর্যন্ত সরাসরি ব্রিটিশ রাজসরকারের শাসনের অধীনে চলে যায়। শেষের সেই শাসন ছিল আরো প্রায় নব্বই বছরের, ১৯৪৭ এর আগস্ট পর্যন্ত।

ইংরেজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসার সুবিধার জন্য ‘এজেন্সি হাউস’ স্থাপন করে। সাবেক কলকাতার এক শ্রেণীর বাঙালি হিন্দু ব্যবসায়ী এজেন্সি হাউজগুলোর দেওয়ান ও মুৎসুদ্দি হয়ে বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ উপার্জন করেন। ক্রমশ তারা সমাজের মাথা হয়ে ওঠেন। শ্রী শিবনাথ শাস্ত্রী তার ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ বইতে লেখেন, ‘তখন নিমক মহলের দেওয়ানি লইলেই লোকে দুই দিনে ধনী হইয়া উঠিত।’
এই ব্যবসায়ীরা উপার্জিত অর্থসম্পদ থেকে মুনাফা পাওয়ার জন্য শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগের ভাবনা শুরু করলেন। আর এতেই ইংরেজরা সিঁদুরে মেঘ দেখলেন। ইংরেজরা নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করে তা নিজেদের হাতে রাখতে আগ্রহী এবং সেখানে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার দিতে তারা নারাজ। কিন্তু এই ধনী বাঙালি সম্প্রদায়কে ইংরেজরা কোনোভাবেই বিরূপ করতে চাননি। অন্য দিকে, সঠিক গ্রামীণ পরিকাঠামো না থাকাতে কোম্পানির সরকার জমি থেকে খাজনা আদায়ও সঠিক ভাবে করতে পারছে না। এই সুযোগে জমিদারদের অল্প খাজনা বা ফাঁকি দেয়ার ঘটনা ঘটে। এজন্য ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের’ মাধ্যমে জমিদারি প্রথা চালু করে। ওই আইন মতে সব ধরনের জমির মালিক হন জমিদাররা।

জমিদারদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়া এত বিশাল পরিমাণ জমি নিজের দখলে রেখে ভোগদখল করা সম্ভবপর না হওয়ায় তারা সেখান থেকে কিছু সম্পত্তি নিজেদের ভোগদখলের জন্য রেখে বাকি জমি বিভিন্ন রায়তের বরাবরে খাজনার বিনিময়ে বন্দোবস্ত দিয়ে গ্রহীতাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে মালিকানা স্বত্ব বজায় রাখতো। বন্দোবস্ত দেয়া জমিকে প্রজাবিলি বা রায়তি জমি এবং খাস দখলীয় জমিকে খাস জমি বলা হতো। ১৭৯৩ সনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনে বন্দোবস্ত দেয়া এবং খাজনা আদায়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান না থাকার সুযোগে জমিদাররা তাদের ইচ্ছামতো খাজনা নির্ধারণ ও আদায় করতে প্রজাদের ওপর ব্যাপক জুলুম নির্যাতন করতো। এজন্য ব্রিটিশ সরকার ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তন করেন।

ওই আইনে প্রজাদের তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা ছাড়াও জমিদার কর্তৃক প্রজাদের যথেচ্ছ উচ্ছেদের ক্ষমতা খর্ব করে আদালতে বকেয়া খাজনা আদায়ের জন্য রেন্টস্যুট এবং শর্ত ভঙ্গের জন্য উচ্ছেদের মোকদ্দমার বিধান চালু করা হয়। ওই আইনটিকে তৎকালীন সময়ে প্রজাদের রক্ষাকবচ হিসেবে অভিহিত করা হলেও সাধারণ প্রজারা অশিক্ষিত হওয়ায় আইন বিষয়ে অজ্ঞ থাকার কারণে তারা এ আইনের ফল তেমন ভোগ করতে পারেনি বরং জমিদাররা আগের মতোই প্রজাদের ওপর ইচ্ছাকৃত খাজনা ধার্য এবং আদায়ের নামে অত্যাচার ও অবিচার অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় মুসলিম লীগের নেতারা বিশেষ করে তৎকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিশেষ করে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ নেতারা সাধারণ জনগণকে এ মর্মে আশ্বাস দেন, ব্রিটিশ সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে বিতাড়িত করতে পারলে তারা জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করে সব জমির রায়তদের যার যার দখলীয় ভূমির মালিক হিসেবে গণ্য করবেন। এর ফলে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার বিতাড়িত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে পূর্ব-পাকিস্তানের প্রাদেশিক পার্লামেন্টে ১৭৯৩ সালের পুরানা জমিদারি আইন (চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন) বাতিল করে ১৯৫১ সালের ১৬ মে নতুন প্রজাস্বত্ব আইন (ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০) পাস হয়ে যায়।
এ জমিদারি উচ্ছেদ আইনের ফলে জমিদারির শেষ ক্ষমতাটুকু পূর্ব-পাকিস্তানে বাতিল ও চিরসমাপ্তি লাভ করেছিল। আর এরই ফলাফলে পূর্ববঙ্গে আগে যারা প্রজা বা ভাগচাষি ছিল তারা তখন থেকে সরকারকে খাজনা দেয়া সাপেক্ষে আগের চাষাবাদের জমিরই মালিক বলে আইনি স্বীকৃতি পায়, তাদের নামেই টাইটেল জারি হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র খেয়ালখুশিমতো খরচ হয়েছে জলবায়ু তহবিলের অর্থ গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন : র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ আরাকানে সাড়ে ৪ শ’সেনা নিহত, জান্তার নিয়ন্ত্রণ শেষ বিপাকে রোহিঙ্গারা ভারতসহ সাত ‘অসহযোগী’ দেশের তালিকা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের সিরীয়রা স্বাধীনতা উদযাপনের সময় দামেস্কে ইসরাইলের হামলা আগামীতে সবাইকে নিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে বেক্সিমকোর জন্য ১৮০ কোটি টাকা ছাড় করছে জনতা ব্যাংক বেকারত্বহীন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে জামায়াত : ডা: শফিক বিজয় ঘোষণার অপেক্ষা ভারতকে দেয়া সুইজারল্যান্ডের বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার

সকল