২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

খালে-ড্রেনে পরিত্যক্ত লেপ-তোশক-সোফা দায় কার?

-

খালে-ড্রেনে এ রকম লেপ-তোশক পাওয়া যায় তা ভাবাও যায় না। মানুষ এটা কিভাবে করতে পারে? কোনো সচেতন মানুষ এভাবে বাড়ির জিনিসপত্র খালে-ড্রেনে ফেলতে পারে না। এদের কারণেই বৃষ্টির সময় ড্রেনে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। খালে ময়লা-আবর্জনার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়।
গতকাল রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অফিসের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় খোরশেদ আলম নামে এক পথচারী এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এভাবে যে লোকই ওই সড়ক দিয়ে যাচ্ছেন সেই ব্যক্তিই নানারকম পরিত্যক্ত দ্রব্যের প্রদর্শনী দেখে ক্ষোভ ঝাড়ছেন। মানুষ যে এভাবে খালে-ড্রেনে বাসা বাড়ির পরিত্যক্ত জিনিসপত্র ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে তা ভেবেও অবাক তারা।
গত ১১ মে গুলশান-২ এ ডিএনিসিসির নগর ভবনের সামনে খালে, ড্রেনে ও যত্রতত্র ফেলে দেয়া বর্জ্যরে ভিন্নধর্মী প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আগামী ১৭ মে পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। আর এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে খাল থেকে উদ্ধার করা সিরামিকের তৈরি শোপিস পরিত্যক্ত ডানাকাটা পরী। রাজধানীর কোনো বাসিন্দা নিজ বাসার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এটি ব্যবহার শেষে পরিত্যক্ত হওয়ার পর তা খালে ফেলে দিয়েছিলেন। যা ডিএনসিসি মোহাম্মদপুরের একটি খাল থেকে উদ্ধার করেছে। শুধু ডানা কাটা পরীই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন খাল থেকে উদ্ধার করা পরিত্যক্ত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিত্যক্ত লেপ, তোশক, সোফা, লাগেজ, খাট, ক্যাবল, টায়ার, কমোড, ফুলের টব, রিকশার অংশবিশেষ, টেবিল, চেয়ার, বেসিন, ব্যাগ, প্লাস্টিকের বিভিন্ন পাত্রসহ নানা পরিত্যক্ত পণ্য। এগুলোর কারণেই মূলত পানিপ্রবাহ নষ্ট হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সব খাল ওয়াসার কাছ থেকে নিয়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর পর থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গত প্রায় সাড়ে তিন বছরে ডিএনসিসির আওতাধীন ২৯টি খাল থেকে দুই লাখ ৫৮ হাজার ১৬৫ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে লাউতলা খাল (বসিলা) থেকে ৩৮ হাজার ৪৭০ টন, সুতিভোলা খাল থেকে ৩৭ হাজার ৩২০ টন, মেরুল খোলা খাল থেকে ৩৩ হাজার ২৬০ টন, লাউতলা খাল (উত্তর পাড়া) থেকে ২১ হাজার ৪৫০ টন, আব্দুল্লাহপুর খাল থেকে ১৮ হাজার ৫২০ টন, রামচন্দ্রপুর খাল থেকে ১৭ হাজার ৩৬০ টন, কাউলা হজ ক্যাম্প থেকে খিলক্ষেত বৌড়া ব্রিজ পর্যন্ত খাল থেকে ১৩ হাজার ৮৪০ টন উল্লেখযোগ্য।

প্রদর্শনী বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নিজেরা এ শহরে বাস করি। কিন্তু কতটা অসচেতন হলে খালে লেপ-তোশক, জাজিম, রিকশা, সোফা, কমোড, টায়ারসহ এমন কিছু নেই যা আমরা খালে ফেলিনি। এসবের কারণেই পানিপ্রবাহ নষ্ট হয়ে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মূলত সবাইকে দেখানোর জন্য, সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য উদ্ধার হওয়া এসব বর্জ্যরে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই এসব সবাই দেখুক, নিজেরা সচেতন হোক, আর যেন কেউ খালে, ড্রেনে এভাবে পরিত্যক্ত জিনিস না ফেলে। আমরা খালগুলোর প্রবাহ ঠিক করতে কাজ করছি। জনগণ যদি সচেতন না হয় তাহলে আমাদের এ কাজ করে কোনো লাভ হবে না। সবাইকে এসব ফেলা বন্ধ করতে হবে। এ প্রদর্শনীর আয়োজন মূলত জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসমাইল মোল্লা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা নিয়মিত খাল পরিষ্কার করছি, কিন্তু জনগণ খাল-ড্রেনকে তাদের ময়লা ঝুড়ি মনে করে বাসা-বাড়ির সব পরিত্যক্ত দ্রব্যসামগ্রী ফেলে যাচ্ছে। জনগণ সচেতন না হলে কোনো দিনই খাল পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, খালে-ড্রেনে বাসা-বাড়ির পরিত্যক্ত জিনিসপত্র ফেলা কখনোই সুনাগরিকের কাছে প্রত্যাশিত নয়। তবে মানুষ কেন ফেলছে সেটাও ভাবতে হবে। যেসব খাল আছে সেখানে কুচুরিপনা জমে থাকে, মানুষ দখল করছে, নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এ কারণেই মানুষ খালকে ভাগাড়ের মতো মনে করে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র ফেলছে। মূলত এখানে পবিবেশ মূল দায়ী। সিটি করপোরেশন খাল নিয়মিত পরিষ্কর করে যদি পরিচ্ছন্ন পানির প্রবাহ ঠিক রাখত এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দিতে পারত তাহলে মানুষ ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করত, তাহলে আর কেউ ময়লা ফেলত না। যেমন- হাতিরঝিল, ধানমন্ডি লেক এসব জায়গা পরিচ্ছন্ন থাকায় মানুষ সেখানে ময়লা ফেলে না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, খালে-ড্রেনে ময়লা ফেলায় নাগরিকদের দায় আছে। এজন্য তাদের তিরস্কার করা উচিত। আবার তাদের যেভাবে মনিটরিং করা দরকার, বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করা, আইন না মানলে শাস্তি প্রয়োগ; এগুলো না করার কারণে সিটি করপোরেশনও দায় এড়াতে পারে না। এক্ষেত্রে তাদেরও কিছু গাফেলতি রয়েছে। এ ছাড়া এ কাজে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement