২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আ’লীগের রিমোট কন্ট্রোল ভারতের হাতে : গয়েশ্বর

নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ
নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : নয়া দিগন্ত -

প্রতিবেশী দেশের দালালি করে সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ থেকে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, আমাদের হতাশ হওয়ার কারণ নাই। আমাদের কর্মীরা ক্লান্ত কিন্তু হতাশ নয়। আমাদের নেতাকর্মীরা যে রকম অত্যাচার-নির্যাতনকে সহ্য করে এখনো বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা রক্ষায়, সেই স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা প্রতিবেশীদের নাই, কারো নাই। তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের দালালি করে শেখ হাসিনা বেশি দিন টিকতে পারবে না। কারণ যারা অন্যায়ভাবে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকে, তাদের পরিণতিটা কি হয় বিভিন্ন দেশের ইতিহাস থেকেই তা দেখা যাচ্ছে। যত জুলুম, যত লুটপাট, আঘাত করছেন, ক্ষমতাচ্যুতের পর কারো কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার, ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবেন না।

‘সরকারের রিমোট কন্ট্রোল কার হাতে’ : গয়েশ্বর বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, বিএনপি চলে রিমোট কনট্রোলে। হ্যাঁ, বিএনপি রিমোট কনট্রোলে চলে রিমোট কনট্রোল কার হাতে? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে নয়তবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমানের হাতে ভারতের কিন্তু আপনাদের রিমোট কনট্রোলটা কোথায়? আপনাদের সরকারের রিমোট কনট্রোল কার হাতে? মোদির (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) হাতে, না অজিত দোভালের (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা) হাতে, না অমিত শাহের (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) হাতে। তাদের রিমোট কনট্রোলে আপনাদের চলতে হয়।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন সারা বিশ্বের মানুষ যেভাবে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে ষড়যন্ত্র করছিল ভারত যদি আমাদের পাশে না থাকত এই নির্বাচন আমরা করতে পারতাম না। তাহলে ভারতই আপনাদের রাখছে, ভারতই আপনাদের রাখবে? তার মানে গণতন্ত্রের অবস্থা কী? বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, অব দ্য পিপল। আর আপনাদের কথা শুনে মনে হয়, ডেমোক্র্যাসি মিনস বাই দ্য ইন্ডিয়া, ফর দ্য ইন্ডিয়া, বাই দ্য ইন্ডিয়া। এর বেশি কিছু? মনে হয় না। সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ টেনে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে দেশকে রক্ষায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানও জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

‘বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’ : উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৭ জানুয়ারি থেকেও কম উল্লেখ করে সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকেও কম। আর যে যেখানে পারছে সে সেখানে সিল মেরেছে। বাইরে ফিট-ফাট আর ভেতরে সদরঘাট। এই হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনের অবস্থা।
রিজভী বলেন, নির্বাচন নিয়ে চলছে তামাশা। চার দিকে চলছে লুটপাটের সংস্কৃতি। এই দুঃশাসন জনগণ বেশি দিন মানবে না। তিনি আরো বলেন, ডামি সরকার বাংলাদেশের প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিচ্ছে না, ভারতের ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিচ্ছে। এক আদানি গ্রুপকে বিদ্যুৎ খাত থেকে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকজনকে লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। তারা আগে ছিল সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনী এখন তারা বৈশ্বিক ধনীদের তালিকায় রয়েছেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশের বেগম খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত বিশাল ব্যানারে লেখা ছিল : ‘মা আমায় দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। সমাবেশের পর একটি মিছিল কাকরাইলের নাইটিংগেল রেস্টুরেন্ট মোড় হয়ে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, যুব দলের এম মোনায়েম মুন্না, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শামীমুর রহমান শামীমসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement